কেরিয়ারের প্রথম দিকের ছবি। সেই সময় অভিনেত্রী ইন্দ্রাণী হালদারের বয়স ছিল মাত্র ২০। মুম্বইয়ে ডাক পেয়েছিলেন অভিনয় করার। প্রযোজক নামী। মুম্বইয়ের বহু ছবির প্রযোজনা করেছিলেন তিনি। ইন্দ্রাণী অভিনীত সেই ছবিতে একাধিক শিল্পী ছিলেন মুম্বইয়েরই। ছবির শুটিং করতে গিয়ে প্রায় ধর্ষিতা হতে চলেছিলেন ইন্দ্রাণী। রাতের ঘুম কেড়ে নেওয়ার মতো সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেন ইন্দ্রাণী।
কেরিয়ারের প্রথম দিকের ছবি বলে কথা। ২০ বছরের ইন্দ্রাণীর তরুণী হৃদয় প্রফুল্ল। দু’চোখে দারুণ আনন্দ। কিন্তু সেই আনন্দই নিরানন্দে পরিণত হয়েছিল শেষের দিকে। স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছিল লহমায়। সেই আতঙ্ক আজও বুকে কড়া নাড়ে নির্জন কোনও রাতে। ভয়ে ঘামতে-ঘামতে নিন্দ্রা ভঙ্গ হয় ইন্দ্রাণীর।
সেই ছবির কাজে দু’দুবার মুম্বই যেতে হয়েছিল ইন্দ্রাণীকে। প্রথমবার তাঁকে অন্যদের সঙ্গে রাখা হয় পাঁচতারা হোটেলেই। চলেছিল শুটিং। কাজ সেরে কলকাতায় ফেরত আসেন। দ্বিতীয়বার তাঁকে ডাকা হয় ডাবিং করার জন্য। কিন্তু সেই বার তাঁকে রাখা হয় লিঙ্কিন রোডের এক হোটেলে। সেই হোটেলেই তাঁকে জোর করতে আসেন (ইন্দ্রাণীর অভিযোগ অনুযায়ী ‘ধর্ষণ’) করতে এসেছিলেন এক ব্যক্তি এবং সেই ব্যক্তি আর কেউ নন, সেই ছবিরই সেই নামকরা প্রযোজক।
ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিল ইন্দ্রাণীর। বাংলা NEWJ-র আপলোড হওয়া ভিডিয়োতে ইন্দ্রাণীকে বলতে শোনা যায়, “সেই সময় বয়স অল্প ছিল বলে আমার সঙ্গে শুটিংয়ে যেতেন বাবা। দেখলাম, আমাকে সকালের ফ্লাইটে টিকিট পাঠানো হয়েছে। বাবাকে দেওয়া হয় বিকেলের ফ্লাইটের টিকিট। বিষয়টা তখন আমি বুঝতে পারিনি। পাঁচ তারা হোটেলে না রেখে আমাকে রাখা হয়েছিল লিঙ্কিন রোডের সেই হোটেলে। হঠাৎই প্রযোজক চলে আসেন সেখানে। ঘরে ঢুকে দরজার ছিটকিনি তুলে নিজের জামা-কাপড় খুলতে শুরু করেছিলেন তিনি। আমাকে কাছে টানতে শুরু করেছিলেন. আমারও জামা-কাপড় খুলে ফেলতেন, যদি না সেই মুহূর্তে তাঁর স্ত্রীর ফোন আসত। প্রযোজকের স্ত্রী হঠাৎ ফোন করায়, আমি রাক্ষসটার হাত থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারি। ছুট্টে গিয়ে প্রথমেই দরজার ছিটকিনিটা খুলি। তারপর জোরে জোরে কাশতে শুরু করি। সেই যাত্রায় বেঁচে যাই। প্রযোজক যাওয়ার সময় আমার দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন, ‘কিস্সু হবে না তোর। তোর মতো অনেক মেয়ে আমার পায়ের তলায় থাকে। নামিদামী নায়িকাদের আমি পিষে দিই’। তিনি চলে যাওয়ার পর আমি অনেকক্ষণ চুপ করে বসেছিলাম। মনে-মনে তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলাম। এর কারণ, সেই রাক্ষসটা সারাজীবনের জন্য আমার সাহস বাড়িয়ে দিয়ে গিয়েছিল। জীবনে বহুবার সেই নামী প্রযোজকের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। কিন্তু তিনি কোনওদিনও আমার চোখের দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারেননি।”