Durga Puja 2021: পুজোর সময় যে ছেলেটাকে ভাল লাগত, তার গলি দিয়ে ২০বার হেঁটে যেতাম একবার দেখব বলে: অপরাজিতা আঢ্য
Durga Puja 2021: বাবার কাঁধে চেপে ঠাকুর দেখতে যেতাম। হাঁ করে তাকিয়ে থাকতাম আলোর দিকে।
ছোটবেলার পুজো
আমরা যখন খুব ছোট ছিলাম পুজো এতবেশি এক্সপোজ়ড ছিল না। তবে ভীষণ মনের পুজো ছিল। আমাদের দুটো জামা হত। সেই দুটো জামাই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আমি সারা বছর পরতাম। একটা হত ভাল জামা। আর একটা হত সাধারণ জামা। তার সঙ্গে স্কুলের জুতোটাই পুজোর জুতো ছিল। একটা হাওয়াই চটি হত ফি বছর। জামা কিনতে হাওড়া থেকে কলকাতায় আসতাম। দারুণ মজা হত। ওই পোশাক পরেই পুজোতে হইহই হত, প্যান্ডেলে ঠাকুর দেখতে যাওয়া হত আমাদের। পুজোর কাজ করতাম, মালা গাঁথতাম। সকালবেলা ঘটি হাতে স্নান করে দৌঁড়ানোর যে আনন্দ, সেটাই ছিল সবচেয়ে বড় পাওয়া। এদিকে ঘুরতে যাব, ওদিকে ঘুরতে যাব, সেরকম কিছুই ছিল না। তারপর তো ছিল ঢাক বাজানো, মিউজ়িক্যাল চেয়ার খেলার আনন্দ। এটা ছিল সকালের পুজো পালন। বিকেলে বাবা-মায়ের সঙ্গে ঠাকুর দেখতে যেতাম। আমি যেহেতু প্রি-ম্যাচিওর বাচ্চা ছিলাম, তাড়াতাড়ি হাঁটতে শিখিনি। তাই বাবার কাঁধে চেপে ঠাকুর দেখতে যেতাম। আমাদের হাওড়ায় অন্নপূর্ণার খুব বড় পুজো হত। বাবার কাঁধে চেপে দেখতাম। আর হাঁ করে তাকিয়ে থাকতাম আলোর দিকে।
কৈশোরের পুজো
পরবর্তীকালে যখন আরও একটু বড় হলাম, বন্ধুদের সঙ্গে ঠাকুর দেখতে যাওয়ার একটা চল হল। সেসময় কিছু ছেলে পিছু নিত। সেটা অন্যরকম ভাল লাগত আমাদের। সেই সময় স্টাইলিশ জুতো পরা শুরু করেছিলাম আর পায় ফোসকা পরে যেত। সেই ফোসকা পায়ে হাতে জুতো নিয়ে বাড়ি ফিরতাম আমি। ফুচকা খেতাম। তখন তো এত রেস্তোরাঁ ছিল না। ফুচকা, আলু-কাবলি, ঘুঘনি, আইসক্রিম – সেটাই ছিল আনন্দ। এর স্বাদ ছিল অমৃতের মতো। প্রতিযোগিতা করে ফুচকা খাব, সেটাই ছিল সবচেয়ে বড় আনন্দ। ৩০-৪০টা ফুচকা খেয়ে নিতাম অনায়াসে। তারপর ক্লাস টেন হয়ে গেল।
পুজোর প্রেম
হাওড়াতে থাকাকালীন প্রেম করার সেরকম সুযোগ ছিল না আমার। তার কারণ ওখানে সকলেই আমার বাবার বন্ধু। এমনকী, ফুচকা কাকুও আমার বাবার বন্ধু। সর্বক্ষণ মনে হত বাবাকে বলে দেবে। দাদার বন্ধুরা সব সাংঘাতিক। বাবা যদি বলত, ‘দেখো আমার মেয়ে আমি বুঝব’। ওরা বলত, ‘বোনকে কেউ কিছু করলে আমরা বুঝে নেব’। আর আমার মনে হত, কেউ কেন শুধু শুধু আমার জন্য মার খাবে। তাই খুব ভয় পেতাম। আর পুজোয় প্রেম সেভাবে ছিল। কিন্তু যে ছেলেটাকে পছন্দ হত, তার গলি দিয়ে অনন্ত ২০বার হেঁটে যেতাম একবার দেখার জন্য। এখন ভাবলে হাসিও পায়। সেই ছেলেটিও পরে সব জানতে পেরেছিল এবং আমরা এখন খুব ভাল বন্ধু।
যে ঘটনা পুজো পালটে দিয়েছিল
…ক্লাস টেনে পরার দু’মাস আগে বাবাকে হারালাম। না ফেরার দেশে চলে গেলেন বাবা। আমি ছিলাম বাবার ন্যাওটা। বাবার পায়ে পায়ে ঘুরতাম। বাবা ছাড়া কিচ্ছু চিনতাম না। মায়ের সঙ্গে কোনওকালেই আমার ভাব ছিল। সবটাই জুড়ে ছিল শুধু বাবা। তাই বাবাকে হারানোর পর আমার জীবনটাও একেবারে পালটে গেল। বাবা মারা যাওয়ার পর দুটো বছর বলতেই পারব না কীভাবে কাটিয়েছি। উচ্চমাধ্যমিক পাশ করলাম আর সেই বছরই আমার বিয়ে হয়ে গেল।
বিয়ের পরের পুজো
বিয়ের পর কলকাতায় চলে আসি। জীবনটা একেবারে অন্যরকম হয়ে যায়। প্রথম বছর ছিল আমার ফার্স্ট ইয়ার পরীক্ষা। আমার ডিসট্যান্স ইউনিভার্সিটি ছিল তখন। পুজোর সময়টা কোনও আনন্দই করতে পারিনি। বাবা মারা যাওয়াও ছিল একটা বড়সড় শক। সেই শক থেকে বেরতে অনেক সময় লেগেছিল। সেটা কাটিয়ে ওঠা ছিল একটা লড়াই। পরের বছর ঠিক করলাম আমি ঠাকুর দেখব। বেহালায় ভাল ভাল ঠাকুর হয়। তখন আমাকে সেভাবে কেউ চেনেওনি। সবে অভিনয় করতে শুরু করেছি তখন। সে বার চুটিয়ে ঠাকুর দেখেছিলাম। আর শ্বশুরবাড়িতে আমাকে কেউ কিছু বলতেনও না। আমার বাড়ির মতো ছিল না। রাত ৯টায় ঢোকার হিটলারি শাসন ছিল না। না ঢুকলেও কেউ কিছু বলত না। ১৯৯৮ ও ১৯৯৯ এই দুটো বছর আমার সারাজীবন মনে থাকবে। বরের সঙ্গে প্রচুর ঠাকুর দেখেছি। বাবা, ভাবা যায় না!
সেলেব্রিটি হওয়ার পর পুজো
২০০০ সাল থেকে আমার জীবন আরও পালটে গেল। সেবার থেকে একেবারে বিচারকের আসনে যাকে বলে। দারুণ অভিজ্ঞতা হয়েছিল। ঠাকুর দেখে নম্বর দেওয়া, সেই কাজটা করার জন্য পয়সাও তো পেতাম। আমাকে ভিড়ে দাঁড়িয়ে লাইন দিয়ে ঠাকুরও দেখতে হত না। আমি তো ঠাকুর দেখার জন্য পাগল ছিলাম। সেটা ওইভাবে হচ্ছে, বিষয়টা যেন একটা আলাদা আনন্দ ছিল আমার কাছে।
এবারের পুজো
প্রত্যেকবারের মতো এবারও ফুচকা খেতেই হবে, রাস্তার ঘুঘনিটা খেতেই হবে। গতবছর পুজোতে একেবারে আনন্দ করতে পারিনি কারণ, আমার করোনা হয়েছিল। এবছর আমার শ্বশুরমশাই মারা গিয়েছেন। আমার শাশুড়ি মা আগামিকাল রাশিয়া যাচ্ছেন তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে। পুজোটা আমাদের বাড়িতে বিশাল ব্যাপার। এবার শাশুড়ি মা কিছু করতে পারবেন না, তাই ওনাকে রাশিয়া পাঠিয়ে দিচ্ছি আমরা। উনি খুব স্মার্ট। বিদেশের মাটিতে সবটা সামলে নেবেন আমি জানি।
আরও পড়ুন: Durga Puja 2021: অষ্টমীর দিন আমাদের পুজোর প্যান্ডেল পুড়ে গিয়েছিল: শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়