AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Aindrila Sharma: ছোট্ট ‘মিষ্টি’কে ছেড়ে পুজোয় যেমন কাটছে মৃতা ঐন্দ্রিলা শর্মার পরিবারের দিনগুলো…

Aindrila Sharma: গত বছর নভেম্বর মাসের ২০ তারিখ চির-বিসর্জন হয়েছে 'উমা' ঐন্দ্রিলা শর্মার। তাই শর্মা পরিবার এবার শব্দহীন, আড়ম্বরশূন্য। পুজোর রোশনাই, সানাই, ঢাকের আওয়াজ... কোনওটাই যেন এবার আর সহনীয় নয় শর্মা-পরিবারের কাছে। চোখ থেকে জল ঝরে পড়ছে অভিনেত্রীর মায়ের। কন্যাহারা শর্মা পরিবার কেমন আছে এই পুজোতে, খোঁজ নিল TV9 বাংলা।

Aindrila Sharma: ছোট্ট ‘মিষ্টি’কে ছেড়ে পুজোয় যেমন কাটছে মৃতা ঐন্দ্রিলা শর্মার পরিবারের দিনগুলো...
ঐন্দ্রিলা শর্মা।
| Updated on: Oct 21, 2023 | 4:23 PM
Share

 

স্নেহা সেনগুপ্ত

পুজোতে ছোট্ট মেয়েটা বাড়িময় ঘুরে-ঘুরে বেড়াত। পঞ্চমী থেকে দশমী… কোন দিন কোন পোশাক পরবে, কীভাবে কাটাবে, তা নিয়ে আকুলি-বিকুলি হয়ে যেত। মাকে ছুট্টে গিয়ে বলত, “এটা পরছি ষষ্ঠীতে, ওটা অষ্টমীতে…।” বাবা-মা বহরমপুরের বাড়িতে থাকলে ছবি তুলে পাঠিয়ে দিত। দুর্গাপুজোয় উমা বাড়ি আসে বাবা-মায়ের কাছে। ভোররাতে পদাপর্ণ করে মর্তে। কিন্তু এবার শর্মা পরিবারে উমা নেই। গত বছর নভেম্বর মাসের ২০ তারিখ চির-বিসর্জন হয়েছে ‘উমা’ ঐন্দ্রিলা শর্মার। তাই শর্মা পরিবার এবার শব্দহীন, আড়ম্বরশূন্য। পুজোর রোশনাই, সানাই, ঢাকের আওয়াজ… কোনওটাই যেন এবার আর সহনীয় নয় শর্মা-পরিবারের কাছে। চোখ থেকে জল ঝরে পড়ছে অভিনেত্রীর মায়ের। কন্যাহারা শর্মা পরিবার কেমন আছে এই পুজোতে, খোঁজ নিল TV9 বাংলা।

প্রথমে কথা বললেন ঐন্দ্রিলার বড়দি ঐশ্বর্য। কানের ডাক্তার তিনি। তবে দিদি ডাক শোননেনি ১১ মাস। বললেন, “আমরা ভাল থাকার চেষ্টা করছি এত কিছুর মধ্যেও। আমাদের পরিবারের প্রাণশক্তি, আমাদের বাড়ি ছোট্ট মেয়েটাই নেই। বোন আমাদের কাছে না থাকলে কি কখনও পুজো ভাল কাটতে পারে? ওকে ছাড়া আমরা কীভাবে পুজো কাটাব? আমি একদিনও ছুটি নিইনি কাজ থেকে। রোজই হাসপাতালে যাচ্ছি।” ঐশ্বর্যই জানালেন, তাঁর বাবা ডঃ উত্তম শর্মা বলেই দিয়েছেন, ঐন্দ্রিলা নেই বলে কিছুতেই ঢাকের আওয়াজ সহ্য করতে পারছেন না তিনি। বলেছেন, “বোন নেই তো, তাই-ই বাবা ঢাকের আওয়াজ সহ্য করতে পারছেন না। আমাকে বলেছেন, দূরে কোথাও নিয়ে যেতে। কোনও রিসর্টে, যেখানে ঢাকের আওয়াজ আসবে না। পুজোর হইহট্টগোল ভুলে থাকা যাবে।”

দিদি ঐশ্বর্য এবং মা শিখাকে জড়িয়ে ধরে অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা (ছবি: ঐন্দ্রিলার ফেসবুক)।

অন্যদিকে, ফোনের ওপারে ঐন্দ্রিলার মার চোখ থেকে অশ্রুধারা বয়ে চলল। খানিক অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছিল কথাগুলো। তাতেও যা বোঝা গেল, তিনি বললেন, “আমাকে সবাই বলছে না-কাঁদতে। আমি কাঁদলে নাকি আমার ছোট্ট ‘মিষ্টি’ (ঐন্দ্রিলাকে ওই নামেই ডাকতেন তাঁর মা শিখা শর্মা) কষ্ট পাবে। কিন্তু আমি তো ওকে দেখতে পাচ্ছি না। এই পুজোটায় আমার মেয়েটা নেই। কত্ত আনন্দ করত, জানেন। আমার জীবনের সব আনন্দটুকু কেড়ে নিয়ে কোথায় হারিয়ে গেল আমার উমা। ওকে ছুঁতে পারি না আমি…।” প্রসঙ্গত, ঐন্দ্রিলার মতোই তাঁর মায়েরও দ্বিতীয়বার ক্যান্সার ধরা পড়েছে। কেমো থেরাপি চলছে তাঁরও। শারীরিক কষ্টের মাঝে মেয়ে হারানোর মানসিক যন্ত্রণা তাঁকে আরও বেশি কাহিল করে দিচ্ছে। বললেন, “সবাই বলে আমার মেয়েকে নাকি তাঁরা স্বপ্নে দেখে। কই আমি এবং ওর বাবা তো দেখতে পাই না। কেন দেখতে পাই না…?” সরল প্রশ্ন এক মায়ের।

গত বছর পুজোয় মা দুর্গার সেবা করেছিলেন ঐন্দ্রিলা। সারাদিন না খেয়ে মায়ের ভোগ বহন করে আনা থেকে শুরু করে ১০৮টা প্রদীপে আগুন জ্বালানো… সবই করেছিলেন হাসি মুখে। পুজো শেষ হল। ১ নভেম্বর এল। হঠাৎই স্ট্রোক হল ঐন্দ্রিলার। হাওড়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চলল তাঁর চিকিৎসা। টানা ২০দিনের চিকিৎসা। সেই সময় একদিনও বাড়ি আসেননি তাঁর প্রেমিক সব্যসাচী চৌধুরী। বড় ইচ্ছা ছিল প্রেমিকাকে সুস্থ করে ফিরে নিয়ে যাবেন। সেই তিনি হাসপাতাল থেকে বেরলেন। কিন্তু প্রেমিকার নিথর দেহ নিয়ে। ঐশ্বর্য জানালেন, সব্য়সাচীর সঙ্গে প্রায়ই কথা হয় তাঁদের। মৃত্য়ুর মাস খানেক আগেই দ্বিতীয়বার ক্যান্সারজয়ী হয়েছিলেন ঐন্দ্রিলা। বিশ্ব ক্যান্সার দিবসে TV9 বাংলাকে দিয়েছিলেন এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারও। বেঁচে থাকার জয় গান গেয়েছিলেন তিনি। তারপর এল ২০২২ সালের নভেম্বর মাস। হাসিখুশি প্রাণটাই কেড়ে নিল নিষ্ঠুরভাবে। পিছনে ফেলে গেল কন্যাহারা মায়ের কোল, পরিহীন পিতার কাঁধ, বোনহীন দিদি এবং এক প্রেমিকের নিশ্চুপ আবেগকে। উমার এই মর্তভ্রমণ যে কয়েকদিনেরই। উমা আসেন। আনন্দ দিয়ে চলে যান। কিছুতেই মানতে পারে না শর্মা পরিবার।