সাহিত্য থেকে সিনেমা, বাঙালির রহস্যপ্রীতির কারণ সম্পর্কে টলিপাড়ার বিশিষ্টরা যা বলছেন…

বাংলা ছবির বাজার ধরতে পরিচালক-প্রযোজকেরা চোখ বন্ধ করে ভরসা করেন রহস্য কাহিনির উপর। সামনেই দুর্গোৎসব—বাঙালির সব থেকে বড় উৎসব। এই উপলক্ষেই একাধিক বিগ বাজেট বাংলা ছবি মুক্তি পাচ্ছে বাংলা জুড়ে। সেখানেও দেখা যাচ্ছে রহস্য-রোমাঞ্চ গোয়েন্দা গল্পেরই আধিক্য।

সাহিত্য থেকে সিনেমা, বাঙালির রহস্যপ্রীতির কারণ সম্পর্কে টলিপাড়ার বিশিষ্টরা যা বলছেন...
মোদ্দা কথা, বাঙালি রহস্য পছন্দ করে।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Oct 06, 2023 | 9:18 PM

রোজকার ওঠাপড়ার মাঝে, অনাবিল বিনোদনের খোঁজে বাঙালি দর্শকদের বরাবরের পছন্দ গোয়েন্দা গল্প বা থ্রিলারধর্মী সাহিত্য। বাংলা সিনেমার ট্রেন্ড বলছে রহস্য-রোমাঞ্চ, গোয়েন্দা গল্প ও থ্রিলার বেশি পছন্দ করে বাঙালি অডিয়েন্স। বক্স অফিসের হিসেবে গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে গোয়েন্দা বা রহস্য গল্পনির্ভর সিনেমা ব্যবসায়িকভাবে সফল। সেই কারণেই বাংলা ছবির বাজার ধরতে পরিচালক-প্রযোজকেরা চোখ বন্ধ করে ভরসা করেন রহস্য কাহিনির উপর। সামনেই দুর্গোৎসব—বাঙালির সব থেকে বড় উৎসব। এই উপলক্ষেই একাধিক বিগ বাজেট বাংলা ছবি মুক্তি পাচ্ছে বাংলা জুড়ে। সেখানেও দেখা যাচ্ছে রহস্য-রোমাঞ্চ গোয়েন্দা গল্পেরই আধিক্য। সুচিত্রা ভট্টাচার্যের কিশোর উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি অরিন্দম শীলের ‘মিতিন মাসি’ সিরিজ়ের পরবর্তী ছবিতে মিতিন জঙ্গলের পোচার দের ধরতে ব্যস্ত। অন্যদিকে, সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘দশম অবতার’-এ ‘কপ ইউনিভার্স’-এর রমরমা, আবার নন্দিতা রায়-শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় তাঁদের পরিচিত ফ্যামিলি ফিল্মের ঘরানার বাইরে বেরিয়ে পলিটিকাল থ্রিলার ‘রক্তবীজ’-এ নিয়ে হাজির হচ্ছেন। সব মিলিয়ে দুর্গাপুজোর আনন্দের মাঝেই সিনেমা হলে দর্শক পৌঁছে যাবে থ্রিলার দেখতে।

ওয়েব সিরিজে ব্যোমকেশের চরিত্রে অভিনয় করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন অনির্বাণ ভট্টাচার্য। তাঁর মতে, “বাঙালি সব সময় অজানাকে জানতে চায়। কোথায় কী হচ্ছে, কী ভাবে হচ্ছে—বাঙালি সদাসর্বদাই কৌতূহলী। এই স্বভাবের জন্যই সিনেমা, সাহিত্য, ওয়েব সিরিজ—সবেতে থ্রিলার, গোয়েন্দা কাহিনিই পছন্দ বাঙালির।” কাঞ্চন মল্লিক অবশ্য অনির্বাণের ‘সদাসর্বদা কৌতূহলী বাঙালি’র তত্ত্বকে আরও একটি বৃহৎ দৃষ্টিভঙ্গী দিয়ে দেখার পক্ষপাতী। তাঁর কথায়, “বাঙালি শুধুই যে থ্রিলার পছন্দ করে, এমনটা নয়। সব রকম গল্পই উপভোগ করে।”

এই বিষয়কে সমর্থন করে পরিচালক জয়দীপ মুখোপাধ্যায় বলেছেন, “পারিবারিক গল্প দর্শক হল ভরিয়ে দেখেছেন যার সফল উদাহরণ কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘অর্ধাঙ্গিনী’। তবে একথাও ঠিক যে, বড় পর্দা হোক বা ওয়েব সিরিজ, সবেতেই নিশ্চিত সাফল্য পেতে সকলেই আস্থা রাখেন রহস্য গল্পের উপরই।” বাংলা ছবির বাজারের হিসেব যদিও বলছে, গুপ্তধন, মার্ডার মিস্ট্রির গল্প বক্স অফিসে বেশি লক্ষ্মীলাভ করে। অভিনেতা রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, “সিরিজের ক্ষেত্রে হুক পয়েন্ট থাকার কারণে রহস্য গল্পের চাহিদাই বেশি।” সিনেমা থেকে সিরিজ… সর্বত্র জনপ্রিয় একেনবাবু ওরফে অনির্বাণ চক্রবর্তীর কথায়, “বাঙালি বুদ্ধিদীপ্ত জাতি। পর্দায় গোয়েন্দাদের সঙ্গে সমান তালে দর্শক নিজেও যে কোনও রহস্য সমাধানে মাথা খাটায়; আর এই বিষয়টাই দর্শক উপভোগ করে সবথেকে বেশি।”

মোদ্দা কথা, বাঙালি রহস্য পছন্দ করে। পর্দায় গোয়েন্দাদের সঙ্গে সঙ্গেই নিজেও রহস্য উন্মোচনে ব্যস্ত থাকতে ভালবাসে ‘রহস্য-রোমাঞ্চ ঔপন্যাসিক জটায়ু’র ভক্ত বাঙালি। বাংলা ছবির বর্ষীয়ান অভিনেতা তথা পরিচালক-প্রযোজক চিরঞ্জিত চক্রবর্তীর মতে, “এখন যে কোনও মাধ্যমেই রহস্য, থ্রিলার বেশি চলছে। আর যেটা ট্রেন্ড করে, সেটাই প্রযোজক-পরিচালকরা তৈরি করছেন।” পুজোর ছুটি হোক বা বড়দিনের ছুটি, সবেতেই পর্দায় গোয়েন্দাদের গোয়েন্দাগিরি দর্শকদের আনন্দ দেয়। আর সেই বিষয়টাই বক্স অফিসে প্রভাব ফেলে। তার কারণ হিসেবে দেখা যায় একের পর এক গোয়েন্দা সাহিত্যের পাতা থেকে এসে বড় পর্দায় জীবন্ত হয়ে ওঠে। ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, বাঙালির রহস্যের প্রতি অমোঘ টানের গভীরেই বাংলা সিনেমার বক্স অফিস সাফল্য লুকিয়ে থাকে।