জয়িতা চন্দ্র
প্রজেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়—অন্য অনেক স্টারের মতো প্রিয় ‘বুম্বাদা’কে সেভাবে ‘সক্রিয়’ থাকতে দেখা যায় না সোশ্যাল মিডিয়ায়। পোস্ট তিনি করেন, কিন্তু ‘এনগেজড’ থাকার জন্য সেভাবে কিছু করেন না তিনি। আর এই না-করার কারণ তিনি নিজেই। কারণ কোনও পোস্টই নিজে হাতে করেন না প্রসেনজিৎ (তারকারদের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেল দেখভাল করার জন্য সম্পূর্ণ আলাদা টিম থাকে আজকাল, বিশেষত বলিউডে)। তবে এখানেই ‘বুম্বাদা’ অন্যদের থেকে আলাদা। নিজের কোনও সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট খুলে দেখারও ইচ্ছে হয় না তাঁর। অনেকটা যেন সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত প্রথম ছবি, যার সৌজন্যে প্রসেজনজিৎ অর্জন করেছিলেন তাঁর কাল্ট স্টেটাস ‘আমিই ইন্ডাস্ট্রি’, সেই ‘অটোগ্রাফ’-এর লিরিক্স: “আমাকে আমার মতো থাকতে দাও/আমি নিজেকে নিজের মতো গুছিয়ে নিয়েছি”। সম্প্রতি TV9 বাংলাকে ‘বুম্বাদা’ জানালেন সোশ্যাল মিডিয়াকে কেন্দ্র করে তাঁর এহেন মানসিকতার কারণ। ‘দশম অবতার’ রিলিজ়ের আগে একপ্রকার আনকাট প্রসেনজিৎ:
এ কোন ভাষা?
শুরুটা এমন ছিল না। আমি যখন ইন্ডাস্ট্রিতে পা রেখেছিলাম, তখন দেখেছিলাম, কীভাবে প্রতিটা পলকে দর্শকদের সঙ্গে সংযোগ তৈরি হয়। তখন সকলেই এসে ভাল-খারাপ মুখের ওপর সততার সঙ্গে জানিয়ে দিতেন। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়া শেষ কয়েক বছরে যেভাবে নিজের চরিত্র পাল্টাচ্ছে, তাতে আমি খুব একটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছি না। করছি না, কারণ বর্তমানে যেভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় সেলেবদের আক্রমণ করা হয়, সেটা আমার মোটেও দেখতে ভাল লাগে না। কী ভাষা? এগুলোকে কি আদপে সমালোচনা বলে মনে করেন? আমার তো মনে হয় না।
এ কেমন সমালোচনা?
ভাল খারাপ লাগাটা প্রতিটা মানুষের ব্যক্তিগত অনুভুতি। সেখানে দাঁড়িয়ে তাঁরা জানাতেই পারেন, ‘এটা আমার ভাল লাগেনি’ অথবা ‘বাহ, এই কাজটা তো দারুণ হয়েছে’। এই প্রসঙ্গে একটা কথা বলতে চাই, আমি নিজেও মনে করি সব বিষয় মন্তব্য করাটা আমার আয়ত্তের মধ্যে পড়ে না, তাই অন্যের ক্ষেত্রেও গ্রহণ করতে পারি না। যেমন ধরুন, আমি বলতেই পারি, ‘অমুকের ব্যাটিংটা আমার আজ ভাল লাগল না’ অথবা ‘অমুকের থেকে আমি আরও ভাল কিছু আশা করেছিলাম’। এতদূর ঠিক আছে। কিন্তু আমি যদি হঠাৎ বলতে শুরু করি যে, ‘ব্যাটিংটা এভাবে করা উচিৎ ছিল’ অথবা ‘ব্যাটটা এভাবে ধরলে ঠিক হত’, এটা আমার মনে হয় অনধিকার চর্চা। কারণ একটা বিষয়কে বিশ্লেষণ করার জন্য আমার তো সেই বিষয় শিক্ষা থাকতে হবে, জ্ঞান থাকতে হবে। কিন্তু বলুন তো সবাই কি সেই জ্ঞান নিয়ে ট্রোলের আসরে নামেন?
এরা কারা?
কারা এরা? এদের মানসিকতা কোথায় গিয়ে পৌঁছে গিয়েছে যে, এই ভাষায় একজনকে আক্রমণ করার আগে তাঁরা দু’বার ভেবে দেখছেনও না। বিশ্বাস করুন, আমার ফোনে একটাও সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ নেই। সবটাই দেখে আমার টিম। আমি খুলেও দেখি না আজকাল আর। আমি জানি, যাঁরা সত্যি আমায় পছন্দ করেন, তাঁরা আমায় মেসেজে লিখে পাঠান, আমি পড়ে ফেলি। করোনা তো আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে, আসলে আমাদের অস্তিত্ব কতটুকু। তারপর তো অনেকটা বদলে যাওয়া উচিত ছিল আমাদেরই। আমি তখন থেকেই সোশ্যাল মিডিয়া থেকে অবসর নিয়েছি। আমার মনে হয় এই কুকথাগুলো নেওয়ার মতো পর্যায়ে আমি আর নেই। এগুলো সত্যিই আমার ভাল লাগে না। কোনও জরুরি পোস্ট থাকলে, তৃষাণজিৎ (প্রসেনজিতের ছেলে) আমায় জানিয়ে দেয়। ও সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাকটিভ ।