Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

ঋতুদার মধ্যে সেইসব শৈল্পিক গুণ ছিল, যেগুলো থাকলে তুলি দিয়ে আঁকার মতো করে চরিত্র তৈরি করা যায়: সুদীপ্তা চক্রবর্তী

Rituparno Ghosh Birthday: বাংলা সিনেমায় ঋতুর আগমন এক অন্য ছন্দ নিয়ে এসেছিল। ধীরে ধীরে দর্শক বুঝলেন, জেন্ডার বাইনারির বাইরে বেরিয়ে গিয়ে নারী-পুরুষের সম্পর্ককে অন্য প্রিজম দিয়ে দেখছেন ঋতুপর্ণ। হয়তো অনেকাংশেই তা নারীর মনন। নারী চরিত্রের বুনন কি অনেক বেশি স্পষ্ট? ঋতুপর্ণর দেখার সেই আয়না ঠিক কেমন?

ঋতুদার মধ্যে সেইসব শৈল্পিক গুণ ছিল, যেগুলো থাকলে তুলি দিয়ে আঁকার মতো করে চরিত্র তৈরি করা যায়: সুদীপ্তা চক্রবর্তী
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 31, 2021 | 1:11 PM

ঋতুপর্ণ ঘোষ। বাংলা সিনেমার ইতিহাসে ঠিক যেন এক প্রতিষ্ঠান। তাঁর জীবনতাঁর যাপনতাঁর কাজ– অনেকগুলো অধ্যায় হতে পারে। আসলে ঋতুপর্ণকে ঠিক একটা আলোচনায়একটা লেখায় বোধহয় বুঝে ফেলা সম্ভব নয়। বাংলা সিনেমায় ঋতুর আগমন এক অন্য ছন্দ নিয়ে এসেছিল। ধীরে ধীরে দর্শক বুঝলেনজেন্ডার বাইনারির বাইরে বেরিয়ে গিয়ে নারীপুরুষের সম্পর্ককে অন্য প্রিজম দিয়ে দেখছেন ঋতুপর্ণ। হয়তো অনেকাংশেই তা নারীর মনন। নারী চরিত্রের বুনন কি অনেক বেশি স্পষ্টঋতুপর্ণর দেখার সেই আয়না ঠিক কেমনজন্মদিনে সেই আয়নার খোঁজ করার চেষ্টা করলেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত (ঋতুপর্ণ ঘোষ পরিচালিত ‘বাড়িওয়ালি’ ছবির জন্য জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন) অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তী। মানুষ ঋতুপর্ণকে কাছ থেকে দেখেছিলেন তিনিকাজ করেছিলেন তাঁর সঙ্গে। সুদীপ্তার লেখায় ফিরে দেখা যাক ঋতুপর্ণর চরিত্রদের এই বিশেষ দিক।

ঋতুদা নারী চরিত্র খুব সুন্দর আঁকতেন। কিন্তু পুরুষ চরিত্র তত ভাল আঁকতেন না বা পুরুষের চেয়ে নারী চরিত্র বেশি ভাল আঁকতেন, এমনটা বলব না বা বলতে চাই না। তার কারণ আমরা আসলে সব কিছু কম্পারেটিভলি দেখি, মানে তুলনার চোখ দিয়ে দেখি। তাই-ই আমাদের মনে হয়েছে অন্য অনেক পরিচালকের চেয়ে ঋতুপর্ণর ছবিতে নারী-চরিত্র অনেক বেশি ডিটেইলড… বিশদ… কমপ্লিট… পূর্ণাঙ্গ…। তার প্রধান কারণ হল, আমাদের এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে স্বাভাবিক নিয়মেই বেশির ভাগ পরিচালক এবং বেশিরভাগ লেখক অর্থাৎ স্ক্রিন রাইটার বা গল্প লেখকই পুরুষ। সেই কারণে যদি ইতিহাস দেখা যায়, পুরুষের চরিত্র বা পুরুষের চরিত্রের জটিলতা, চাওয়া-পাওয়া একজন পুরুষ যত ভালভাবে লিখতে পেরেছেন, মহিলা চরিত্রের ক্ষেত্রে হয়তো তেমনটা হয়নি। ঋতুদার আগে অন্যান্য পুরুষ লেখক বা পুরুষ পরিচালক মহিলা চরিত্রদের নির্দিষ্ট কয়েকটি অথবা কয়েকটিমাত্র অ্যাঙ্গেল থেকে দেখেছেন। সব ক’টা অ্যাঙ্গেল থেকে দেখতে পাননি। সে কারণে আমরা ঋতুপর্ণর মতো সো-কলড পুরুষ পরিচালক যখন পুরোপুরি নারী হয়ে ওঠেননি, তখনও তাঁর ছবিতে—আসলে প্রথম দিন থেকেই—মহিলা চরিত্ররা ওয়েল এচেড থাকত তো… সেই কারণেই হয়তো কম্পারেটিভলি ভাবি বলে বা এখনও ভাবছি বলে আমাদের এমনটা মনে হয়েছে কখনও-কখনও। তার মানে কিন্তু এটা নয় তাঁর চিত্রনাট্যে পুরুষ চরিত্রগুলো কম গুরুত্বপূর্ণ বা কম লেয়ারড।

Sudipta-Ritu-web-1

ঋতুপর্ণ ঘোষ বলতে এখন আমাদের মধ্যে যে ইমেজটা তৈরি হয়েছে, তা কিন্তু শুরুর দিকে ছিল না। যখন ‘হিরের আংটি’ তৈরি করেছেন, তখন কিন্তু তাঁর অন্তরের নারীত্ব সম্পূর্ণ রূপে প্রকাশ পায়নি। ফলে ব্যক্তিগত যাপনে দীর্ঘদিন নারী এবং পুরুষ সত্ত্বা—দু’টোই ছিল। নিজের জীবন দিয়ে সেটা বুঝেছেন। সে কারণেই যে কোনও চরিত্রের মনন তাঁর কলমে স্বাভাবিক চলন পেয়েছে।

প্রত্যেকটা পুরুষ চরিত্র, ‘দহন’-এর চরিত্রগুলো, ‘বাড়িওয়ালি’তে দীপকদার যে চরিত্র (দীপঙ্কর সেনগুপ্ত), ‘চোখের বালি’তে টোটার চরিত্র (বিহারী), ‘বাড়িওয়ালি’তে শিবু যে চরিত্রে অভিনয় করেছিল, এমন প্রচুর ছবিতে ঋতুদার আঁকা প্রচুর পুরুষ চরিত্র আছে, প্রত্যেকটা চরিত্রই অসম্ভব ভাল। পুরুষ চরিত্রের প্রতি ইনজাস্টিস হয়েছে, এমন নয়। মহিলারা সাধারণত ভাবেন, অন্যান্য লেখকের ক্ষেত্রে পুরুষ চরিত্রের প্রতি যতটা জাস্টিস হয়, নারী চরিত্রের প্রতি ততটা জাস্টিস হয় না। ঋতুপর্ণর ছবিতে কিন্তু পুরুষ, নারী উভয় চরিত্রের প্রতিই জাস্টিস হয়েছে। এমনটা নয় ওঁর নারীর মনন ছিল বলে শুধু নারী চরিত্রের প্রতিই জাস্টিস হয়েছে। এমনটা আমার কখনও মনে হয়নি। অনেকদিন পরে মহিলা দর্শকের এমন পরিচালককে পেয়ে ভাল লেগেছিল হয়তো। কিন্তু তার মানে তাঁর চিত্রনাট্যে পুরুষরা উপেক্ষিত, এমনটা নয়। এমনকী সমকামী, বহুগামী কারও চরিত্রই উপেক্ষিত নয়। ‘দোসর’-এ বুম্বাদার চরিত্র (কৌশিক)… কী অসম্ভব ভাল চরিত্র। কেউ বলতে পারবেন, ওই চরিত্রে লেয়ার নেই বা ওই চরিত্রের মনন না বুঝে সেটা লেখা হয়েছিল?

Sudipta-Ritu-web-2

শুনতে অদ্ভুত লাগলেও ঋতুপর্ণ এমন একজন মানুষ, যিনি পুরুষের মনন যতটা বুঝেছিলেন, নারীর মননও ততটাই বুঝেছিলেন। কারণ ওই যে বললাম, যাপন। নিজস্ব যাপন। পুরুষের জীবন বহুদিন যাপন করেছিলেন। আর ভিতরে নারীসত্ত্বা তো ছিলই। সুতরাং দু’টোই দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন। এটা খুব রেয়ার। এটা সাধারণত হয় না। একই সঙ্গে তাঁর মধ্যে সেইসব শৈল্পিক গুণ ছিল, যে গুণগুলো থাকলে তুলি দিয়ে আঁকার মতো করে চরিত্র তৈরি করা যায়। সমকামী মানুষ আরও অনেকে রয়েছেন আমাদের চারপাশে। কিন্তু তাঁদের প্রত্যেকের পক্ষে এমন ভাবে এক-একটি চরিত্রকে ফুটিয়ে তোলা হয়তো সম্ভব নয় যেভাবে ঋতুদা পেরেছিলেন। আসলে ঋতুদা অ্যামালগ্যামেশন অব থ্রি ডিফারেন্ট কোয়ালিটিজ়। লাইফ অফ আ ম্যান, লাইফ অফ আ উওম্যান, অ্যাট দ্য় সেম টাইম আর্টিস্ট, রাইটার, পোয়েট, পেইন্টার—সব কিছু একটা আধারের মধ্যে। রেয়ারেস্ট অব দ্য রেয়ারেস্ট কম্বিনেশন।

আমার মনে আছে, ঋতুদা ‘বাড়িওয়ালি’তে ‘মালতী’র চরিত্রের জন্য আমাকে অভিনয় করে দেখাননি। কিন্তু একটা শটে আমার এখনও পরিষ্কার মনে আছে, উনি আমাকে অভিনয় করে দেখিয়ে দিয়েছিলেন। একটা শট ছিল, লোডশেডিং হয়ে গিয়েছে। পাখা চলছে না বলে বনলতা বলছেন, ‘‘কারেন্ট বোধহয় গেল, দেখ তো’’। তখন মালতী জানলায় কান পেতে বলছে, ‘‘না না, ওই তো ট্র্যাক্টর চলছে মাঠে। কারেন্ট আছে।’’ ওই যে কথা বলতে-বলতে সাইলেন্ট হয়ে গিয়ে কানটা পেতে জানলায়, তারপর ভুরুটা নাচিয়ে ইশারায় বলছে, ‘‘ওই তো চলছে।’’ এটা ঋতুদা দেখিয়ে দিয়েছিলেন। ওটা যে কী অপূর্ব ছিল! আমি ২২ বছর আগেকার কথা বলছি। এখনও আমার চোখের সামনে জ্বলজ্বল করছে। স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। ইমেজটা এত স্ট্রং আমার কাছে। সেই মুহূর্তে ওঁকে ‘মালতী’ই মনে হয়েছে। কখনও ঋতুদা বলে মনে হয়নি আমার।

আমি একটা টেলিফিল্মে অভিনয় করেছিলাম। ‘অভিনয়’ অথবা ‘অভিনেত্রী’ নাম ছিল। সেটাতে রূপাদি, শিলাজিৎদা ছিল, আমি আর রনিদা ছিলাম। সেটার স্ক্রিপ্ট পড়ে শোনাচ্ছিলেন রূপাদিকে। আমি পাশে বসে শুনছিলাম। আমার মনে হচ্ছে, রূপাদির ওই চরিত্রটাই যেন হয়ে উঠেছে ঋতুদা। কখনও মনে হয়নি ঋতুদা ওটা স্রেফ স্ক্রিপ্ট পড়ার জন্য পড়ছে। হি ওয়াজ় আ ফ্যানট্যাস্টিক অ্যাক্টর, টু।

Sudipta-Ritu-web-3

আমার সঙ্গে ঋতুদার সাংঘাতিক দহরম-মহরম ছিল, এমন নয়। খুব স্বাভাবিক সম্পর্ক ছিল আমাদের। বিশেষ করে ক্রাইসিসে বেশি ফোন করতাম। ভাল সময়ে ‘কেমন আছ’, ‘কী করছ’, ওটা পারি না। এত ব্যস্ত থাকতেন, আমি জানতাম, ওটা কখনও করিনি। জন্মদিনে ভোরের দিকে একটা ফোন করতাম। অনেক ফোনের ভিড় হওয়ার আগে। তখন তো ল্যান্ডলাইন ছিল আমার। ল্যান্ডলাইন থেকে ল্যান্ডলাইনে ফোন করতাম। একটা ছোট্ট গিফট দিলেও গদগদ হয়ে যেত। শিশুর মতো হাসত। ঋতুদাকে গিফট দেওয়াও তো একটা ব্যাপার না, কী দেব? জামা হোক, জুতো হোক, ঘর সাজানোর জিনিস হোক, রেকর্ড হোক, যাঁর ওই কালেকশন, তাঁকে কী দেব! আমি ছোটখাটো কিছু, একটা গাছ, একটা ফুল কখনও যদি দিতাম, এই কান থেকে ওই কান পর্যন্ত হাসত, নাকটা কুঁচকে…।

বিকাশদারা জমি বেচে সামাল দিয়েছেন: ফিরহাদ
বিকাশদারা জমি বেচে সামাল দিয়েছেন: ফিরহাদ
দশ কাঠা জমির পোস্ত নষ্ট করল পুলিশ!
দশ কাঠা জমির পোস্ত নষ্ট করল পুলিশ!
'বাংলাকে রেল দিয়েছে খাতায় কলমে, বাস্তবে নেই', কেন বললেন অধীর?
'বাংলাকে রেল দিয়েছে খাতায় কলমে, বাস্তবে নেই', কেন বললেন অধীর?
'একবার মমতা ব্যানার্জীর গানটা গান', সাংবাদিককে বললেন অনুব্রত
'একবার মমতা ব্যানার্জীর গানটা গান', সাংবাদিককে বললেন অনুব্রত
নয়া এপিক নম্বর, বাদ যাবে ডুপ্লিকেট এপিক নম্বর
নয়া এপিক নম্বর, বাদ যাবে ডুপ্লিকেট এপিক নম্বর
'বামেদের পিঠ চুলকে দেবে তৃণমূল', কেন বললেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি?
'বামেদের পিঠ চুলকে দেবে তৃণমূল', কেন বললেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি?
৩ শতাংশের বেশি বেড়েছে নিফটির মিডক্যাপ সূচক, ২.৮ শতাংশ বাড়ল স্মলক্যাপও!
৩ শতাংশের বেশি বেড়েছে নিফটির মিডক্যাপ সূচক, ২.৮ শতাংশ বাড়ল স্মলক্যাপও!
ভারতে আশার আলো, হুড়মুড়িয়ে পড়ল চিন-জাপান-জার্মানির বাজার!
ভারতে আশার আলো, হুড়মুড়িয়ে পড়ল চিন-জাপান-জার্মানির বাজার!
"আমার কাছে রোগী আগে", দশদিনের 'বেডরেস্ট' ছাড়া কিছু ভাবতেই পারছেন না
সমালোচকদের মধ্যে যাদের বাবার নাম কুণাল, তাঁদের সমস্যা...কী বললেন কুণাল
সমালোচকদের মধ্যে যাদের বাবার নাম কুণাল, তাঁদের সমস্যা...কী বললেন কুণাল