বাস্তবের থেকে অনেক দূরে। আসল ঘটনাগুলি বাদ দিয়ে নাকি তৈরি হয়েছে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের বায়োপিক ‘অভিযান’। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের জীবননির্ভর ছবিতে অভিনয় করেছিলেন প্রয়াত অভিনেতা নিজেই। যুবক (অল্প বয়সি) সৌমিত্রর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন যিশু সেনগুপ্ত। ছবির পরিচালকের নাম পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। কিছু কথা বলে পরমব্রতকেই সরাসরি আক্রমণ করেছেন সৌমিত্রর কন্যা। সেই সঙ্গে প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন নিজের বোনের একটি পোস্টের। সৌমিত্রের সেই আত্মীয়াই প্রথম ফেসবুকে লম্বা বিবৃতি দিয়েছিলেন। ‘অভিযান’ ছবিতে কী-কী বিষয়কে ভুল দেখানো হয়েছে, স্পষ্ট করেছেন তিনিই। তাঁরই বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়েছেন সৌমিত্র কন্যা পৌলমী। এবার প্রশ্ন হচ্ছে, অনেককিছু যদি ভুলই দেখানো হয়, তা হলে সবকিছু জেনেবুঝে কেন সৌমিত্র এই ছবিতে নিজে অভিনয় করতে রাজি হলেন। সেই প্রশ্নও সরাসরি তুলেছেন পৌলমী।
ইংরেজি ভাষায় লেখা পৌলমীর পোস্টের সারমর্ম:
প্রথমেই বলে রাখতে চাই, এটি সম্পূর্ণ আমার নিজের ব্যক্তিগত মতামত। হতাশার জায়গা থেকে বিষয়টিতে আলোকপাত করছি। কাউকে দোষ দিচ্ছি না। বলতে চাই, আমি আহত হয়েছি।
আমার বোন শ্রমণা ঘোষ যা-যা লিখেছেন, তাতে আমি সম্পূর্ণ সহমত। তনু, তুমি যা-যা বললে, বলা খুবই দরকার ছিল। আমি সত্যিই জানি না বাপি (পড়ুন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়) কেন এই দৃশ্যগুলিতে অভিনয় করতে রাজি হয়েছিলেন? সিনগুলি সত্যি ঘটনা থেকে অনেকটাই দূরে। বাপি তাতে অভিনয় করে আমার হাত বেঁধে দিয়েছেন। কিন্তু পাশাপাশি একটাও বলতে চাই, আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে কিছু বিষয়ে। সন্দেহ আছে কারণ, বাস্তব ও কল্পনাকে মেলালে কী কী ক্ষতি হতে পারে, তা হয়তো বাপি বুঝতে পারেননি। কিছুতেই বুঝতে পারেননি কী ক্ষতি হতে পারে!
আমাদের পরিবারের সঙ্গে যাঁদের কোনও সম্পর্ক নেই, তাঁরা ছবিটি দেখেই আমাদের পরিবার সম্পর্কে ধারণা তৈরি করে নেবেন। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শেষ জীবন কত কষ্টে কেটেছে এই ধারণাকে বদ্ধমূল করে নেবেন। সত্যি বলতে কী, গোটা বিষয়টাই খুবই হতাশাজনক। বাপির জীবনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ মানুষকে এই বায়োপিক থেকে বাদ রাখা হয়েছে।
সেই সঙ্গে আমার পুত্র রণদীপের বিষয়টাকে রাখা হয়েছে বায়োপিকে। বিষয়টা অন্যমাত্রায় বিরক্তিকর হয়ে উঠেছে। আমার মনে আছে বাপি বলতেন, কীভাবে রবীন্দ্রনাথ তাঁর সন্তান সোমির মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছিলেন। বাপিই আমাদের রবীন্দ্রনাথের উদাহরণ দিয়ে শক্তপোক্ত থাকার অনুুপ্রেরণা দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, জীবনে এগিয়ে যেতে হয়। রণদীপের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার কাল্পনিক বর্ণনা করা হয়েছে। পরিচালক নিজের চরিত্রটিকে মহিমান্বিত করার জন্য হাসপাতালে কাটানো রণদীপের এপিসোডটি যেভাবে দেখিয়েছেন, তা দেখে আমার বিরক্তবোধ হয়েছে, আমি হতাশ হয়েছি। বাপিও বুঝতে পারলেন না অভিনয় করতে করতে.. এটা আরও হতাশাজনক।
ইংরেজি ভাষায় লেখা শ্রমণা ঘোষের পোস্টের সারমর্ম:
পরিবারের প্রিয় কোনও মানুষের জীবনকে জনসমক্ষে দেখানো হচ্ছে, এটা নিজের চোখে দেখা পৃথিবীর অন্যতম কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে একটি। আপনি যদি স্পর্শকাতর ও আবেগপ্রবণ মানুষ হন, বিষয়টা আরও কঠিন হয়ে যাবে। ‘অভিযান’ ছবির অনেক ঘটনাই ভুল দেখান হয়েছে। সুন্দর একটি পরিবারকে অবমাননা করা হয়েছে। বিরক্তিকর পরিস্থিতির স্বীকার হয়েছি আমরা। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় লেজেন্ড হওয়ার পাশাপাশি একজন সাধারণ বাবাও। সারাজীবন আমিও তাঁকে পাশে পেয়েছি। সম্পর্কে তিনি আমার বড় মেসোমশাই…