সদ্য ‘মা’ হয়েছেন অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র। তাঁর ‘পুত্র সন্তান’ হয়েছে। সেই পুত্রের নাম ‘মিঁয়া সাহেব’। পুত্রকে নিয়ে কেমন আছেন ‘নতুন মা’ শ্রীলেখা, তা জানতে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছে TV9 বাংলা। জবাবে শ্রীলেখা জানিয়েয়েন, তাঁর এক কন্যাও সন্তান সম্ভবা এবং তাঁকে নিয়েও বেশ চিন্তায় আছেন তিনি। দিন সাতেক আগে TV9 বাংলাকেই শ্রীলেখা প্রথম বলেছিলেন তিনি ‘ফের’ মা হয়েছেন। এবং তাঁর কোল আলো করে এসেছে পুত্র ‘মিঁয়া সাহেব’। এই মিঁয়াকে তিনি নিজে জন্ম দেননি। এবং মিঁয়া মানুষ নয়। কিন্তু মানুষের পৃথিবীতে ‘দুর্ভাগ্যবশত’ জন্ম হয়েছে তাঁর, আক্ষেপ করেছিলেন শ্রীলেখা।
মিঁয়া এক হুলো বিড়াল। দারুণ সুন্দর দেখতে। সাদা-কালো-বাদামি রঙের লোমে ভরে থাকে ওর শরীর। শুরুতে মিঁয়ার সঙ্গে নিজের বেহালার অ্যাপার্টমেন্টের নীচে দেখা করতে যেতেন শ্রীলেখা। তাকে রোজ নিজে হাতে খাওয়াতেন, যেমন অন্য সারমেয় এবং বিল্লিদের দেখভাল করেন ‘কেয়ার গিভার’ শ্রীলেখা। কিন্তু একদিন মিঁয়া আটকে যায়। সারা সন্ধ্যা, সারা রাত আটকেই ছিল। তাকে এই ‘মানুষ’-এর সমাজের কেউই উদ্ধার করতে আসেনি। শ্রীলেখাই বাচ্চাটিকে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করে নিজের সঙ্গে বাড়িতে নিয়ে চলে যান।
সেই থেকেই মিঁয়া শ্রীলেখার পুত্র। যেমন তাঁর বাড়িতে থাকে ‘রাস্তার কুকুর’ করণ, আদর এবং নেকু, সে-ও থাকছে। এই হুলো মিঁয়াই একমাত্র বিড়াল সেই দলে। আছে এক বিগল প্রজাতির সারমেয়ও: চিন্তামণি মিত্র। মিঁয়া সাহেব হল ‘মিত্র পরিবার’-এর নতুন সদস্য। তাঁকে নিয়ে ব্যস্ততা এখন চরমে। ‘নতুন মা’ কেমন আছেন? শ্রীলেখা বলেছেন, “আমি ভাল আছি। আমার পুত্র মিঁয়া সাহেবও ভাল আছে। ওকে নিয়েই কেটে যাচ্ছে আমার দিবারাত্রি। খুব মিষ্টি হয়েছে ছানাটা আমার। ও যে পরিস্থিতিতে ছিল, ভেবেই আমার আতঙ্ক লাগে। নিরীহ একটা প্রাণী। ওকে যে আটকে থাকা অবস্থা থেকে বাঁচিয়ে নিরাপদে বাড়িতে আনতে পেরেছি, এটাই আমার কাছে অনেক। মিঁয়া আমার কাছেই থাকবে সারাজীবন। ওকে খাওয়ানো, ওকে ঘুম পাড়ানো, ওর জন্য খেলা সবই নিজে হাতে করি। আর আমাকে এই কাজে সাহায্য করেন মাসি (অনেকদিন থেকে শ্রীলেখার সঙ্গেই থাকেন তিনি)।”
একজন মায়ের অনেক দায়িত্ব। কেবল একজন সন্তানকে দেখতে গিয়ে বাকিদের তো অবহেলায় রাখতে পারেন না। তাই শ্রীলেখা টাইম ম্যানেজ করে নিয়েছেন নিজের মতো করে। বলছেন, “অন্য সন্তানদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিয়েছি। পুরোটাই টাইম ম্যানেজমেন্টের ব্যাপার। আমার দুই পুত্র মিঁয়াকে মেনে নিয়েছে। কিন্তু আমার প্রিয় বাচ্চা করণ (পথ কুকুর) ওকে কিছুতেই মন থেকে মেনে নিতে পারছে না। ওদের ভাব করানোরও চেষ্টা চলছে।”
তবে মিঁয়ার আতঙ্ক এখনও কাটেনি, জানিয়েছেন শ্রীলেখা। বলেছেন, “আটকে ছিল তো, সেই আতঙ্ক এখনও দূর করতে পারিনি। কিন্তু আগের চেয়ে আতঙ্ক কিছুটা হলেও কেটেছে। ওরা ভালবাসার স্পর্শ চায়। এই নিষ্ঠুর সমাজ সেই স্পর্শটা কেড়ে নিয়েছিল ওর থেকে। আমার মিঁয়া নীচে নামতেই চাইছে না। ওকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কিছুদিন আগে। কিন্তু ভয়ে নামতে চায়নি কোল থেকে… এই ভয়টা ওকে সমাজ দিয়েছে।”
মিঁয়ার আটকে থাকার আতঙ্ক শ্রীলেখার মাতৃত্ববোধকে যেমন স্পর্শ করেছে, তেমনই এক বয়স্ক জীবও শ্রীলেখাকে আপন করে নিয়েছে। লিফ্টের কাছে এসে সেই বয়স্ক হুলোও আঁকড়ে ধরেছিল শ্রীলেখাকে। অভিনেত্রী সে দিন বুঝেছিলেন, বয়স্ক পশুদের জন্য জমি কিনে একটা বাড়ি তৈরি করবেন। তবে বয়স্ক বিড়ালটির গতি করতে পেরেছেন শ্রীলেখা। তাকে দত্তক নেবে এক পরিবার। শ্রীলেখার বক্তব্য, “পশুপাখিরা আমাদের সঙ্গে মানুষের মতো কথা বলতে পারে না। কিন্তু মান আর হুঁশ আছে ওদেরই। আছে তীব্র কৃতজ্ঞতা বোধ। এই বয়স্ক বিড়ালটি গাড়ির নীচে ছিল—অনাহারে। কতদিন না খেয়ে ছিল, জানি না। আমি যখন ওকে খেতে দিয়েছিলাম, ওর ‘মিঁয়াও’ ডাকটা আমার কাছে অন্যরকম মনে হয়েছিল। সেই মিঁয়াও ডাকে ছিল আর্তনাদ। যেন বলতে চেয়েছিল, ‘তুমি আমাকে খেতে দিচ্ছ, মা? একটা কৃতজ্ঞতা বোধ ছিল ওর।'”
শ্রীলেখার অ্যাপার্টমেন্টের নীচে এক মিনি বিড়াল অন্তঃসত্ত্বা, তাঁকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে শ্রীলেখার। বলেছেন, “জানেন, মেয়েটা আমার বাচ্চা (মিনি বিড়াল) দেবে। ওকে নিয়ে আমি চিন্তায় আছি। সব ঠিক মতো যেন হয়। বাচ্চাগুলো যেন সুস্থ থাকে। আমার মেয়েটাও যেন ভাল থাকে।” তবে শ্রীলেখার অ্যাপার্টমেন্টের যাঁরা এতদিন তাঁর পশুপাখির প্রতি অপত্য স্নেহকে ‘পাগলামি’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে কেউ-কেউ এসে তাঁর পাশে দাঁড়াতে শুরু করেছেন, দাবি শ্রীলেখার। দাঁড়াতে শুরু করেছেন অসহায় প্রাণীগুলোর পাশে। শ্রীলেখা খানিকটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলেছেন, “আমি হয়তো পাল্টাতে পারছি। যে দারোয়ানেরা আগে ওদের থাকতে দিতে চাইত না, তাঁদেরই নীচের কুকুর-বিড়ালদের খাওয়ানোর দায়িত্ব সঁপে দিয়েছি। মনে আশা আছে, খাওয়াতে-খাওয়াতেই ভালবেসে ফেলবে ওদের। মায়ার বাঁধনে জড়িয়ে ফেলবে। অ্যাপার্টমেন্টের নীচে বিছানা রেখেছি। ‘ম্যাডাম নে আচ্ছা কিয়া’, এক আবাসিক নাকি বলেওছেন একথা।”
সম্প্রতি শরীরটা ভাল থাকছে না শ্রীলেখার। নানা কারণে তিনি মানসিকভাবে ক্লান্ত। এবং সেই মানসিক ক্লান্তি তাঁর শরীরকেও কাহিল করে দিচ্ছে। একমাত্র পোষ্যরাই তাঁকে বেঁচে থাকার সাহস দেয়। শ্রীলেখা বলেছেন, “আসলে আমি ওদের রেস্কিউ (উদ্ধার) করি না। ওরা আমাকে রেস্কিউ করে। আমি এই কুৎসিত হিংসাত্মক পৃথিবীতে থাকতে-থাকতে ক্লান্ত। আমার খুব শরীর খারাপ লাগে। বুক ধড়ফড় করে। কিন্তু ওদের পেয়ে আমি ভাল থাকার চেষ্টা করি। জীবনে ওরা না থাকলে আমি হয়তো মরেই যেতাম আগে।”