স্নেহা সেনগুপ্ত
অনেকদিন থেকেই নতুন ছেলেমেয়েদের কাজের সুযোগ করে দিচ্ছেন টালিগঞ্জের সিনিয়র অভিনতা ভরত কল। অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি এগজ়িকিউটিভ প্রোডিউসার হিসেবেও কাজ করেন বিভিন্ন সিরিয়ালে—যেমন: ‘লালকুঠি’, ‘বোধিসত্ত্বের বোধবুদ্ধি’। তালিকা অনেক লম্বা। তরুণ অভিনেতা-অভিনেত্রীদের কাছে তিনি ভরসার নামও। সুতরাং অভিনতা হতে চাওয়া তরুণ-তরুণীদের মনের উৎকণ্ঠা এবং স্বপ্নের অনেকটারই সাক্ষী হয়ে রয়েছেন বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির একমাত্র কাশ্মীরি পণ্ডিত ভরত। এবার নতুন স্বপ্নের উড়ানের জন্য তৈরি হয়েছেন ভরত। ছেলেমেয়েদের একেবারে হাতেকলমে কাজ শেখানোর প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা করেছেন তিনি। খুলতে চলেছেন নিজের ইনস্টিটিউট। নাম দিয়েছেন ‘ভরত কল ইনস্টিটিউট অফ পারফর্মিং আর্টস’। এ ব্যাপারে TV9 বাংলার সঙ্গে কথা বললেন ভরত।
অ্যাকাডেমি খোলার কথা কেন মনে হল?
আমি এখনও নিয়মিত কাস্টিং করি। সেই কাজটা করার সময় সিনিয়র বাবা-মা, কাকা-জেঠার চরিত্র পাওয়া খুব একটি কঠিন বলে মনে হয় না। কিন্তু নতুন ছেলেমেয়েদের কাস্ট করার কাজটা কঠিন। আমি যখন ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছিলাম, তখন থিয়েটারও করিনি। কোনও ইনস্টিটিউটেও আমাকে গাইড করার কেউ ছিল না। ফলে নিজেকে তৈরি করেছিলাম সিনিয়রদের সান্নিধ্যে থেকে। আমি এমন একটা প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে চাইছি, যেখানে ছাত্রছাত্রীরা ফিরে আসতে পারবে বারবার। মন খারাপে, ডিপ্রেশনে এই ইনস্টিটিউট তাঁদের পাশে থাকবে। গুরুকুলের মতো লেগাসি হবে সেটায়।
তা হলে আপনি একা নন, আরও অনেক সিনিয়রই এই কাজের সঙ্গে যুক্ত?
অনেকেই রয়েছেন। সপ্তর্ষি রায়, অনিন্দিতা সর্বাধিকারী, সোহাগ সেন, সোহিনী সেনগুপ্ত, তপস্যা দাশগুপ্ত, প্রশান্তরা রয়েছেন মেন্টর হিসেবে। ফ্যাকাল্টি হিসেবে তাঁরা রয়েছেন। তাঁরা প্রত্যেকেই এক-একজন ইনস্টিটিউটশন।
নিজের নামে ইনস্টিটিউট, এটা কি ঝুঁকি নয়?
আমার নিজের অভিনয় জীবনের ৩০ বছরের সুনাম জড়িয়ে আছে এই ইনস্টিটিউটের সঙ্গে। সেই জন্য হয়তো নিজের নাম দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা আরও বেশ করে মনে হল। ইনস্টিটিউটের নাম আমি গুরুকুলও রাখতে পারতাম।
আপনার ইনস্টিটিউট কবে থেকে শুরু হবে?
এই বছরই পুজোর ঠিক পরে ১০ অক্টোবর খুলছে আমার ইনস্টিটিউট। অডিশনের মাধ্যমে আমরা অ্যাডমিশন নেব। ৪৮টা ক্লাস থাকবে। সোম থেকে বৃহস্পতিবার। সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ৩টে পর্যন্ত ক্লাস করানো হবে। যোধপুর পার্কে ৯৫ পল্লীর পুজোর লাগোয়া বিল্ডিংয়ে তৈরি হচ্ছে আমার ইনস্টিটিউট। শুরুতে প্রতি ক্লাসে ৪০ জন প্রশিক্ষিত হতে পারবেন। অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সার্বিক গ্রুমিং, অভিনয় সবটাই শেখানো হবে।
একটা ক্লাসে ৪০ জনকে আলাদা-আলাদাভাবে যত্ন নেওয়া কি সত্যিই সম্ভব?
বুঝতে হবে যে, অভিনয় বিষয়টা একটা কমবাইন্ড আর্ট। এখন তো একটা সিনে এমনিতেই ১০ জন দাঁড়িয়ে থাকেন। আমার একটা রিঅ্যাকশনে বাকি ১০ জন কীভাবে রিঅ্যাক্ট করছে, সেটাও তো জানা গুরুত্বপূর্ণ। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল অভিনেতার গ্রুমিং।
আপনি নিজে ক্লাস নেবেন?
অবশ্যই নেব। আমি যে ক্লাসটা নিজের জন্য রেখেছি, সেটা হল ‘ফাইটিং দ্য অডস’। আমি নিজে বাইরে থেকে এসেছি। আমি কাশ্মীরি পণ্ডিত। বাংলা জানতাম না। আমি এখনও পর্যন্ত বাংলা পড়তে কিংবা লিখতে পারি না। এই ধরনের বিষয় নিয়ে তো অনেকেই হীনমন্যতায় ভোগেন। নিজের দুর্বলতাকে কীভাবে শক্তি করে তুলতে হয়, সেটাই থাকবে আমার ক্লাসে।
অনেকে মনে করেন সিরিয়ালে অভিনয় করলে অভিনয়-চর্চা চলে যায়। অনেক লিড কাস্টও হারিয়ে যায় ১-২ সিরিয়ালের পর…
আজকের দিনে ভীষণভাবে যেটা দরকার, সেটা হল স্ট্রিট স্মার্টনেস। আত্মবিশ্বাস বিষয়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। অনেকে বুঝতে পারেন না কোথায় লিড হিসেবে প্রয়োজন ফুরোচ্ছে আর কোথায় চরিত্রাভিনেতা হিসেবে চাহিদা বাড়ছে। এই বিষয়টা কিন্তু সাদরে গ্রহণ করতে পারা একটা আর্ট।