সচরাচর মিডিয়ার সামনে আসেন না তিনি। দেখা যায়না কোনও ফিল্মি পার্টিতেও। কেবলমাত্র তাঁর ছবির প্রোমোশনেই দেখা যায় হিরো জিৎকে। দেখতে-দেখতে দু’দশক পার অভিনেতা-প্রযোজক জিৎ মদনানী। শেষ তাঁকে দেখা যায় ‘চেঙ্গিজ’ ছবিতে, যা বাংলা ও হিন্দি দুই ভাষাতেই মুক্তি পেয়েছিল। শুটিং স্পট হোক অথবা সাংবাদিক সম্মেলন—সর্বত্রই নির্ধারিত সময়ে পৌঁছে যাওয়া অভ্যেস বাংলা ছবির বর্তমান ‘মাস ফিল্ম হিরো’ জিতের। তবে TV9 বাংলার অফিসে পৌঁছতে ‘সামান্য’ দেরি হলেও প্রথমেই পেশাদারি ভঙ্গিতে ক্ষমা চেয়ে নিলেন নায়ক। স্টাইলিশ পোশাকে অফিসে প্রায় হ্যালোজেন বাল্ব জ্বালিয়ে প্রবেশ করলেন বাংলা সিনেমার ‘বস’, সদ্য বাবা হয়েছেন যিনি। মন খুলে আড্ডা দিলেন TV9 বাংলার সঙ্গে।
সদ্য আবার বাবা হয়েছেন জিৎ। কন্যা সন্তানের এগারো বছর পর ঘর আলো করে এসেছে পুত্র সন্তান। তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল, কেমন আছেন জুনিয়র জিৎ? একগাল হেসে গর্বিত বাবা বললেন, “ভাল আছে সে।” তবে জুনিয়র প্রসঙ্গে নায়কের সংযোজন, “সুস্থ আছে। আমি চাই, সে নিজের মতো বড় হোক। যা হতে চায়, বড় হয়ে তাই-ই হোক।”
‘চেঙ্গিজ’-এর পর তাঁর আগামী ছবি মুক্তি পাচ্ছে ‘মানুষ’। এই প্রসঙ্গে অভিনেতা জিতকে প্রশ্ন করা হয়, একমাত্র তিনিই প্রতিনিয়ত এখনও ‘মাস ফিল্ম’ বানিয়ে চলেছেন—কীভাবে ও কেন? এর উত্তরে তাঁর জবাব, “আমি মাস ফিল্ম থেকেই উঠে এসেছি, তাই সবসময়ই চেষ্টা থাকে সবার জন্যই যেন ছবি বানাই। দর্শক বলতে তো শুধুই কলকাতার মাল্টিপ্লেক্সের দর্শক নয়, আমার টার্গেট বিভিন্ন গ্রামের প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা দর্শক। তবে এমনও নয় যে, আমি অন্য ধারার ছবি বানাইনি। ‘বাচ্চা শ্বশুর’, ‘অসুর’-এর মতো ছবি করেছি, যা মেইনস্ট্রিম ছবির থেকে আলাদা।”
নায়ক এখন প্রযোজক—টলিউডের পাশাপাশি প্যান ইন্ডিয়াতেও ছবি মুক্তি পাচ্ছে জিতের। তাহলে একটা প্রশ্নের উত্তর তিনি দিতেই পারেন: এই যে বলিউডে কোনও ছবি মুক্তি পেলে ছবির ব্যবসা নিয়ে ধারাবাহিকভাবে একটা সংখ্যা (বক্স অফিস রিপোর্ট) পাওয়া যায়, টলিউডের বক্স অফিস কালেকশন নিয়ে ধোঁয়াশা থেকে যায় কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে জিতের সাফ জবাব, “আমি প্রযোজক হলেও মূলত আমি অভিনেতা। অভিনয়টাই মন দিয়ে করে থাকি। বাকি ব্যবসা দেখে আমার ভাইরা। (মৃদু হেসে) তবে আমি ওদের বলে দেব, TV9 এর সাংবাদিক জানতে চেয়েছেন, তাই ভবিষ্যতে যেন ছবির ব্যবসা নিয়ে স্পষ্ট ধারণা দেওয়া হয়।”
এর পরই ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁকে কেন্দ্র করে যে ‘অভিযোগ’ শোনা যায় প্রায়শই, সেটি ছুড়ে দেওয়া হল: ছবির প্রচার ছাড়া তাঁকে দেখা যায় না কেন? সিনেমার বাইরে কোনও প্রশ্নের উত্তর তাঁর থেকে পাওয়া যায় না সেভাবে। এর উত্তরে জিতের জবাব, “এমনটা ঠিক নয়। আমিও আড্ডা, গল্প পছন্দ করি। তাই এবার বছরে দু’তিনটি ছবি বানাব ,যাতে ছবি নিয়ে আড্ডা দিতে পারি।” তবে বেশিরভাগ সময়েই সিনেমার বাইরের বিভিন্ন ঘটনা, যেমন রাজনৈতিক বিষয়-আশয়কে কেন্দ্র করে তিনি চুপ থাকেন কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে অভিনেতা বলেন, “আসলে আমি যেটা জানি না, বুঝি না, সেটা নিয়ে কথা বলি না। সিনেমাটা বুঝি, তাই এটাই করি।” রাজনৈতিক কথা আর একটু এগোতেই তিনি আলোচনার মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার ‘সুকৌশলী’ চেষ্টা করলেন, “ক্রিকেট নিয়ে গল্প হোক (হাসি)।”
‘মানুষ’-এর মুক্তির পরই আসছে রুক্মিণীর সঙ্গে ‘বুমেরাং’; তবে এখন এই বিষয়ে কথা না-বলে ‘মানুষ’ নিয়েই আড্ডা দিতে চাইলেন অভিনেতা। তাঁর মতে, এই ছবিতে ডান্স, ডায়লগ সবই আছে। তবে ছবির মূল হিরো হল গল্প। এই ছবিতে মেয়ে ও বাবার সুন্দর একটা সম্পর্ক দেখানো হয়েছে। মেয়ের কথা উঠতেই জিতের প্রথম সন্তান অর্থাৎ মেয়ের কথা উঠল। মেয়ে তাঁর বাবার কোন ছবি বেশি পছন্দ করে? উত্তরে ‘পিতা’ জিতের জবাব, “সেভাবে তো আলোচনা হয়নি, তবে বাড়িতে ছবির গান চালিয়ে যখন প্র্যাকটিস করি ও আমার সঙ্গে নাচে। আসলে পৃথিবীর সব বাবা ও মেয়ের মধ্যে ভালবাসা একই রকম। সে অভিনেতা হোক অথবা অন্য কোনও জীবিকার সঙ্গে যুক্ত যে কোনও অভিভাবকই হোক।”
এই ছবিতে সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায় ও জিতু কামালকে নিয়েছেন জিৎ। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “দু’জনেই সমান প্রতিভাবান। আর ছবিতে ওদের দু’জনের চরিত্রও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেটা ছবি মুক্তি পেলেই দেখা যাবে। আর জিতু কামাল যে রকম স্টাইলিশ হয়ে থাকেন, তাতে আমার ভাল লেগেছিল। তাই গল্পের প্রয়োজনেই ওকে ছবিতে নেওয়া।”
‘মানুষ’ বাংলার পাশাপাশি প্যান-ইন্ডিয়া স্তরেও মুক্তি পাবে। কতটা টেক্কা দেবে বলিউডের সঙ্গে? এর উত্তরে জিৎ বললেন, “বলিউড ছবির বাজেটের সঙ্গে তো কোনওভাবেই বাংলা ছবির মেকিংয়ের তুলনা সম্ভব নয়। তবে আমাদের জোরের জায়গা হল ছবির গল্প। ইমোশন, ড্রামা। আর যাতে একটা বড় অডিয়েন্স পাওয়া যায়, তাই ছবিটি হিন্দি বলয়তেও মুক্তির ব্যবস্থা করা। আশাকরি দর্শকদের ভাল লাগবে।”