
ভারতীয় ছবির ইতিহাসে যেসকল অভিনেতা অভিনেত্রীদের দর্শক মনে রাখবেন, তাঁদের মধ্যে অবশ্যই জয়া বচ্চনের নাম থাকবে। সত্যজিৎ রায়ের হাত ধরে সিনেমায় অভিনয় করেন, তবে পরবর্তী সময়ে তিনি ফিল্ম ইনস্টিটিউট থেকে পড়াশোনা করে আবার অভিনয়ে আসেন এবং দর্শকদের মন জয় করেন তাঁর শক্তিশালী অভিনয় দিয়ে। তবে দর্শকদের অনেকেরই জানা নেই, জয়া ভাদুরির অভিনয়ে আসার পিছনে অভিনেতা রবি ঘোষের একটা ভূমিকা ছিল। রবি ঘোষের কথা থেকেই জানা যায় , উত্তম কুমার জয়া ভাদুরির অভিনয় দেখে তাঁকে ‘ধানি লঙ্কা’ বলেছিলেন। সেই গল্পই জানা যায় রবি ঘোষের কলমে।
রবি ঘোষ একটি বইয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে লিখেছিলেন, “লেখা শুরু করেছিলাম আমার স্ত্রী অনুভার জয়াকে ভালবাসার কথা দিয়ে। সে ভালবাসা এত গভীর ছিল যে কলকাতায় জয়া এলে আমার বাড়িতেই থাকত এবং আমি অনুভাকে বলতাম— ‘ও তোমার ঘরেই থাকুক, আমি অন্য ঘরে যাচ্ছি।’
রবি ঘোষের কথায়, ফিল্ম ইনস্টিটিউট থেকে পাস করে বহু বছর পর জয়া কলকাতায় এল। ওর চেনাজানা কোন এক পরিচালক ওকে নাকি কথা দিয়েছিলেন ওকে নায়িকা করে ছবি করবেন। কিন্তু এসে দেখল ওকে কেউ সুযোগ দিচ্ছে না। স্বাভাবিকভাবেই দারুণ ভেঙে পড়েন জয়া। ভীষণ মন খারাপ তাঁর। তখন আমি তরুণদাকে বললাম— ‘আপনি চলে যান, ও আমার কাছে থাকুক।’ তরুণদা আমাকে জয়ার লোকাল গার্জিয়ান নিযুক্ত করে চলে গেলেন।
রবি ঘোষ তাঁর লেখায় আরও জানান, এরকম একটা সময়ে জানতে পারলাম, ঢুলুদা মানে অরবিন্দ মুখোপাধ্যায় ‘ধন্যি মেয়ে’ বলে একটা ছবি করছেন। ‘ধন্যি মেয়ে’-তে আমি ভজহরির রোল করি। ঢুলুদাকে জিজ্ঞেস করলাম— ‘আপনার হিরোইন হয়েছে?’। বললেন— ‘না রবি, কত খুঁজছি, কিন্তু মনের মতো পাচ্ছি না!’আমি বললাম— ‘একটা নতুন মেয়ে দিতে পারি। কত দেবেন? বললেন— ‘কেন? দু-হাজার। নতুনেরা যা পায়।’বললাম— ‘হবে না। যদি পাঁচ হাজার দেন, তো কাল সকালে প্রডিউসারকে সঙ্গে করে আমার বাড়িতে চলে আসুন। প্রথম দিন শুটিং করেই উত্তমদা বললেন— ‘উরেব্বাস রবি, এ তো ধানি লঙ্কা রে।’ সাবিত্রী বলল— ‘বাপ রে, কী তৈরি?’ হবে না কেন? তখন তো শিখে গেছে সব। ‘ধন্যি মেয়ে’- তে একেবারে ফাটিয়ে দিল জয়া।”
তথ্যসূত্র – রূপকথা