সালটা ১৯৬৪। প্রথমবার মুম্বইয়ে পা দিলেন বাংলা সিনেমার কিংবদন্তি অভিনেত্রী সুপ্রিয়া চৌধুরী। ছবির নাম দূর গগন কি ছাঁয়ো মে। সুপ্রিয়ার বিপরীতে কিশোর কুমার। কিশোর কুমারের কথাতেই নাকি এই ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন সুপ্রিয়া। তবে মুম্বইয়ে পা দেওয়ার পর কিশোর কুমার যে এমনটি করবেন, তা স্বপ্নেও ভাবেননি তিনি। কিশোর কুমারের ব্যবহারে রীতিমতো কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন টলিউডের বেণুদি। কিশোরের সেই ঘটনা এখনও সিনেমার আড্ডায় বার বার উঠে আসে। সেই সময়ের বাংলা এক জনপ্রিয় বিনোদনমূলক ম্য়াগাজিনের এক প্রতিবেদনে ছাপা হয়েছিল সেই খবর।
সুপ্রিয়ার সঙ্গে ঠিক কী ঘটেছিল?
ছবির শুটিংয়ের পর একদিন কিশোর কুমারের গাড়িতে করেই হোটেলে ফিরছিলেন সুপ্রিয়া। কলকাতার মেয়ে বেণু, মুম্বইয়ের (তখন বম্বে) রাস্তাঘাট কিছুই চেনেন না। তখন মুম্বইও অতটা জনবহুল ছিল না। হঠাৎ এক ফাঁকা মাঠের সামনে কিশোরের গাড়িটা গেল থেমে। ড্রাইভারকে কিশোর কুমার হিন্দিতে জিজ্ঞাসা করলেন, ক্য়ায়া হুয়া? কিশোরের প্রশ্নে, ড্রাইভার জানালেন গাড়ি খারাপ হয়ে গিয়েছে! এরপরই পিছনের সিটে বসে থাকা সুপ্রিয়াকে বললেন, এবার কী হবে? আপনাকে তো হেঁটে ফিরতে হবে। কিশোরের মুখ থেকে এমন কথাশুনে দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলেন সুপ্রিয়া। ঘড়িতে তখন রাত ১০টা। হোটেল অনেক দূর। কীভাবে এতটা পথ হাঁটবেন! সুপ্রিয়ার মাথায় যখন এসব কথা ঘুরছে, ঠিক তখনই কিশোর বললেন, গাড়ি থেকে নেমে যান। গাড়ি সারাতে দেরি হবে। হেঁটেই হোটেলে যেতে হবে আপনাকে।
কিশোরের কথামতো সুপ্রিয়া গাড়ি থেকে নেমে হাঁটতে শুরু করলেন। হাতে তাঁর মেকআপ বক্স। চারিদিকে তখন অন্ধকার। সুপ্রিয়া হেঁটেই চলেছেন। হঠাৎই দেখলেন, হেডলাইট জ্বালিয়ে গাড়ি নিয়ে এগিয়ে আসছেন কিশোর। সুপ্রিয়া তো অবাক! তারপর গাড়ির জানলা দিয়েই সুপ্রিয়াকে ডাকলেন তিনি, চিৎকার করে বললেন, হাঁটুন, হাঁটুন। ভাল করে হাঁটুন, যে মেয়ে বার্মা থেকে হেঁটে কলকাতা পৌঁছেছে, সেই মেয়ের কাছে হাঁটা তো কোনও ব্য়াপারই না। কিশোর কথা শুনে রেগে লাল সুপ্রিয়া। কিশোর যে এমনটা ইচ্ছে করেই করেছেন, তা বুঝতে আর বাকি রইল না তাঁর। রাগ, দুঃখে তখন সুপ্রিয়ার চোখ দিয়ে ঝরঝর করে জল বের হতে শুরু করল।
সুপ্রিয়ার এমন অবস্থা নজরে পড়ল কিশোরেরও। বুঝতে পারলেন, এমন রসিকতা করা ঠিক হয়নি। সুপ্রিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে কান ধরে ক্ষমাও চেয়েছিলেন তিনি। সুপ্রিয়াও রাগ ঝেরে ফেলে ক্ষমা করেছিলেন তাঁকে। এরপর থেকে সুপ্রিয়া বুঝেই গিয়েছিলেন কিশোরের মাথায় সব সময়ই এমন দুষ্টুমি ভরা ফন্দি ঘুরতে থাকে।