মিস শেফালি। একসময়ে উচ্চবিত্ত বাঙালি পুরুষের কাছে তিনি সেক্স সিম্বল। তবে তিনি যে শুধুই শরীরী ভঙ্গিমার আবেগ নন বা নিছকই সেক্স সিম্বল নন, তা তাঁর নৃত্যশিল্পীর দক্ষতা বা উৎকর্ষে বার বার প্রমাণিত। আর তাই সত্যজিৎ রায়ের ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ ও ‘সীমাবদ্ধ’ ছবিতে মিস শেফালি প্রমাণ করেন তাঁর অভিনয় দক্ষতাও। আর তাই তো ছয়ের দশকে ফারপোজ থেকে ওবেরস গ্যান্ড, মোক্যাম্বো, ট্রিঙ্কাজ, ব্লু ফক্সে মিস শেফালির রাজত্ব। সেই সময় কলকাতার বাবু কালচারের প্রধান ঠিকানাই মিস শিফালি।
শোনা যায়, ছয়ের দশকে মিস শেফালির রোয়াবই ছিল আলাদা। তাঁর দাপটের গল্প পৌঁছত শহরের বড়লোকিয়া ড্রয়িং রুমে। এমন এক নৃত্যশিল্পীকে হোটেলে ঢুকতে বাধা দেন মিঠুন চক্রবর্তী! তাও আবার যে হোটেলে নিয়মিত চলত শেফালির পারফরম্য়ান্স, সেখানেই! সে রাতে মিস শেফালির এক ক্ষতরনাক রূপ দেখেছিল কলকাতার বাবু-বিবিরা। আর মিঠুন খেয়েছিলেন থতমত!
সালটা ১৯৭৫, অক্টোবর মাস। পরিচালক দুলাল গুহর দো আনজানে ছবির শুটিং করতে কলকাতায় এসেছিলেন অমিতাভ বচ্চন ও রেখা। ছিলেন গ্র্য়ান্ড হোটেলেই। মিস শেফালি তাঁর বায়োগ্রাফিতে জানিয়ে ছিলেন, দিনের বেলা মাঝে মধ্যেই অমিতাভের সঙ্গে গ্র্যান্ড হোটেলের লবিতে দেখা হত। উনি মাঝে মধ্য়ে কথাও বলতেন। খুবই ভদ্র মানুষ।
দিনটা ১১ অক্টোবর। এদিন অমিতাভের জন্মদিন। অন্যদিকে, ‘দো আনজানে’ ছবির কলকাতা পর্বের শুটিং শেষ। পরিচালক দুলাল গুহ তাই প্ল্য়ান করলেন গ্র্য়ান্ড হোটেলেই বড় এক বার্থডে পার্টির। যেখানে উপস্থিত থাকবে ফিল্ম ইউনিটের লোকজন। সেই সময় মিঠুন চক্রবর্তী সবে মৃণাল সেনের মৃগয়া ছবির শুটিং করেছেন। ফিল্ম দুনিয়ায় মিঠুন তখনও তেমন পরিচিত মুখ নয়। তবে পরিচালক দুলাল গুহর সঙ্গে ছিল তাঁর বন্ধুত্ব। সেই বন্ধুত্বের খাতিরেই সেই অমিতাভের সেই বার্থডে পার্টিতে নিমন্ত্রণ পেয়েছিলেন মিঠুন।
পার্টি শুরু হয়। যত রাত বাড়তে থাকে, ততই জমজমাট। নিজের পারফরম্য়ান্স সেরে, পার্টিতে আসেন মিস শেফালি। গ্র্য়ান্ড হোটেলের বল রুমে ঢুকতেই সমস্য়া শুরু। মিস শেফালি তাঁর বায়োগ্রাফিতে জানিয়ে ছিলেন সে রাতের ঘটনা। শেফালি বলেন, বলরুমে ঢুতে গিয়ে হঠাৎ দেখি আমার সামনে এসে দাঁড়াল একটা লম্বা মতো ছেলে। একমাথা বাবরি চুল। গায়ের রং শ্য়ামবর্ণ। সেই ছেলেটা বলরুমে ঢুকতে বাধা দিল। স্পষ্ট বলল, আপনি কে? আপনাকে তো পার্টিতে ঢুকতে দেওয়া যাবে না! ছেলেটার মুখে সেই কথা শুনে মাথা গরম হয়ে গেল! আমি যে হোটেলে নিয়মিত পারফর্ম করি, সেখানে এমন অপমান। ম্য়ানেজারকে ডেকে সবটা বললাম। ম্য়ানেজার তো কী করবে ভেবে পাচ্ছেন না। স্পষ্ট বললাম, এই ছেলেকে ঘাড় ধরে হোটেল থেকে বার করে দিন! ছেলেটা তো আমার মুখে একথা শুনে থতমত। পরে জেনেছিলাম, সেই ছেলেটার নাম মিঠুন চক্রবর্তী। ওর কাঁধে দায়িত্ব ছিল ইউনিটের লোক ছাড়া আর কাউকে পার্টিতে ঢুকতে না দেওয়া। পরে মিঠুন ক্ষমাও চেয়েছিলেন। সেই সময় মিঠুনও আমায় চিনতা না, আমিও মিঠুনকে না। পরে দেখি সেই ছেলেটাই বলিউডের সুপারস্টার, হিন্দি সিনেমার ডিস্কো ডান্সার।
তথ্যসূত্র- মিস শেফালির বায়োগ্রাফি।