সম্প্রতি মুক্তি পেল অভিনেত্রী রাখি গুলজার অভিনীত ‘আমার বস ‘ ছবির গান । বহু বছর পর আবার বাংলা ছবিতে অভিনয় করেছেন এই বর্ষীয়ান অভিনেত্রী। পরিচালক নন্দিতা-শিবপ্রসাদ জুটির হাত ধরেই আবার বাংলা সিনেমার দর্শক রাখিকে বড় পর্দায় দেখতে পাবে।
রাখি বিশ্বাস থেকে গুলজার হওয়ার কাহিনির সঙ্গেই জড়িয়ে আছে রাখির নায়িকা হওয়ার গল্প। পরিচালক তরুণ মজুমদারের সঙ্গে রাখির সম্পর্ক ছোট বোনের মত। রাখিকে খুবই স্নেহ করতেন পরিচালক তরুণ মজুমদার। বম্বে শহরে ‘রাহগীর ‘ ছবির শ্যুট এর সময় থেকেই রাখির সঙ্গে সখ্যতা তরুণ মজুমদারের। তখন রাখি অভিনেত্রী হয়ে ওঠেননি, সাধারণ এক গৃহবধূ ছিলেন ।
তরুণী রাখি নিজের হাতে প্রতিদিন খাবার বানিয়ে পৌঁছে যেতেন তরুণ মজুমদারের ঠিকানায়। তবে এমনই এক শুক্রবার হাতে টিফিন কৌটো ঝুলিয়ে হাজির রাখি। তরুণ মজুমদারের এর কথায়, ঐদিন প্রযোজক তারাচাঁদ বরজাতিয়ার ফোন করে তাঁর নতুন ছবি মিলন এর প্রিমিয়ারে নিমন্ত্রণ করলেন। ছবির নায়ক-নায়িকা সুনীল দত্ত ও নূতন। নভেলটি সিনেমা হলে ছবি দেখতে যেতেই হবে। ব্যস্ততা থাকলেও তারাচাঁদ বরজাতিয়ার কথা রাখতে ঠিক করলেন তিনি যাবেন , আর সেই সময় রাখি আবদার করে বসেন, তিনিও সঙ্গে যাবেন । সেদিন রাখির আবদার ফেলতে পারেননি তরুণ মজুমদার । রাখিকে সঙ্গে নিয়ে নভেলটি সিনেমায় পৌঁছতেই তাঁরাচাদ বরজাতিয়া আপ্যায়ন করলেন। তরুণ মজুমদার সেই সময় রাখিকে নিজের বোন হিসেবেই পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন তারাচাঁদ বরজাতিয়ার সঙ্গে। সিনেমা দেখার পর সিনেমা হলের ম্যানেজারের ঘরে কফির প্রস্তাব আসতেই রাখি জানালেন তিনি কফি খান না। শোনা মাত্রই তাঁর জন্য ফলের রসের ব্যবস্থা করা হয় । এর পর কিছু সময় কাটিয়ে তরুণ মজুমদার ও রাখি বাড়ি চলে গেলেও প্রযোজক তারাচাঁদ বরজাতিয়া রাখিকে ভুলতে পারেন না। তরুণ মজুমদারের কথায় জহুরি জওহর চিনেছিলেন। অজান্তেই রাখির যোগাযোগের ঠিকানা রেখে দিয়েছিলেন প্রযোজক, রাখি নিজেও জানতে পারেননি কেন তাঁর ঠিকানা প্রযোজক জানতে চেয়েছেন। এরপর তরুণ মজুমদার কলকাতায় ছবির কাজে ফিরে যান। কিছুদিন পর আবার যখন বম্বে আসেন, তখন লেখক গুলজার জানান, রাখিকে ছবির হিরোইন করছেন বরজাতিয়া।
রাখি পরদিন টিফিন কৌটো নিয়ে আবার হাজির ,তখন তার কাছথেকেই জানতে পারলেন পরিচালক তরুণ মজুমদার যে ঐ দিন সিনেমা হলে রাখিকে দেখেই প্রযোজক তার নতুন সিনেমার হিরোইন করবে ঠিক করে ফেলেছিলেন, পরে রাখির কাছে সেই প্রস্তাব আসে, ছবির নাম ‘জীবন- মৃত্যু ‘ , ধর্মেন্দ্রর বিপোরীতে হিরোইন রাখি। এর কয়েক বছরের মধ্যেই রাখি হিন্দি ছবির নায়িকা হয়ে ওঠেন, গাড়ি , বাড়ি হিরোইন সুলভ আদব কায়দা, তাঁকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। পরবর্তীতে লেখক গুলজারকে বিয়ে করে রাখি গুলজার নামেই পরিচিতি পান। তবে তরুণ মজুমদারের কাছে তিনি একই রকম ছোট বোনের মতোই ছিলেন, পানভিলে নিজের নতুন ফার্ম হাউস কিনে সবার আগে তরুণ মজুমদারকে দেখাতে নিয়ে যান রাখি।
তরুণ মজুমদার তাঁর সিনেমা পাড়া দিয়ে বইতে লিখেছেন, কতো ছোট ছোট ঘটনার গর্ভে লুকিয়ে থাকে বড় বড় সম্ভবনা। এর পর রাখি হিন্দি ছবিতে দশকের পর দশক কাজ করেছেন, বাংলা ছবিতেও একাধিক অভিনয় করে দর্শকদের মনে থেকে গেছেন, তাঁর অভিনীত ‘পরমা’ , ‘শুভ মহরৎ” দর্শকদের পছন্দের ছবির তালিকায় রয়েছে। মাঝে বেশ কয়েক বছর তিনি বাংলা ছবি থেকে দূরে ছিলেন, তবে এবার বাংলা নববর্ষে আবার ‘আমার বস’ ছবিতে রাখি গুলজার এর অভিনয় দেখতে পাবেন বাঙালি দর্শক।
তথ্যসূত্র- সিনেমা পাড়া দিয়ে, তরুণ মজুমদার