অসুস্থ ঋত্বিক ঘটকের জন্য হাসপাতালেও আসত মদ, অগ্রিম টাকা দিয়েছিলেন উত্তম! তারপর…
নেশা আর মানসিক অবসাদে একেবারে বিপর্যস্ত ঋত্বিক ঘটক। সেই সময় পুনে ফিল্ম ইনস্টিটিউটে পড়ানোর সুযোগ পেলেন ঋত্বিক। একেবারে শান্তির চাকরি। চূড়ান্ত অর্থকষ্টে থাকা ঘটক পরিবার যেন নতুন সূর্য দেখল।

সত্যজিৎ রায়ের ‘নায়ক’ হয়ে উঠেছিলেন মহানায়ক উত্তম। এমনকী, ব্য়োমকেশের চরিত্রেও উত্তমকে পর্দায় নিয়ে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু ঋত্বিক ঘটকের ছবির অন্ধভক্ত হয়েও, ঋত্বিকের ছবিতে অভিনয় করা হয়ে ওঠেনি উত্তম কুমারের। সুযোগ এসেছিল অবশ্য। এমনকী, ছবি তৈরির জন্য অগ্রিম টাকাও নিয়েছিলেন ঋত্বিক ঘটক! কিন্তু বাঁধ সাধে তাঁর অসুস্থতা ও অতিরিক্ত মদ্যপান।
সময়টা সাতের দশকের। নেশা আর মানসিক অবসাদ, তার উপর চরম অর্থকষ্টে একেবারে বিপর্যস্ত ঋত্বিক ঘটক। সেই সময়ই পুনে ফিল্ম ইনস্টিটিউটে পড়ানোর সুযোগ পেলেন ঋত্বিক। একেবারে শান্তির চাকরি। চূড়ান্ত অর্থকষ্টে থাকা ঘটক পরিবার যেন নতুন সূর্য দেখল। পুনেতে গেলেন ঋত্বিক। সেখান থেকেই স্ত্রী সুরমা ঘটককে পরিচালক লিখেছিলেন, পুনে ফিল্ম ইনস্টিটিউট খুব ভাল জায়গা, বাঁধা মাইনে, সম্মান দুটোই রয়েইছে। সবাই ভেবেছিল সব কিছু ভুলে ঋত্বিক হয়তো নতুন করে জীবন শুরু করবেন। কিন্তু সবার ভাবনার সঙ্গে মিলল না ঋত্বিকের ভাবনা। কয়েক মাসের মধ্য়েই সব ছেড়ে শিলংয়ে চলে গেলেন পরিচালক। ততদিন অবসাদ বেড়েছে আরও। সেই সময়ই পণ্ডিতমশাই গল্পটি লিখছিলেন। আচমকাই অসুস্থ হয়ে পড়লেন ঋত্বিক। তাঁকে নিয়ে আসা হল কলকাতায়। ভর্তি হলেন হাসপাতালে।
এক বিনোদনমূলক পত্রিকায় ঋত্বিককে নিয়ে লেখা এক প্রতিবেদনে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, সেই সময়ই উত্তম, ঋত্বিকের কাছে গিয়েছিলেন বনপলাশীর পদাবলী ছবি তৈরির অফার নিয়ে। উত্তম চেয়েছিলেন ঋত্বিকই তৈরি করুন এই ছবি। আর উত্তম হবেন তার নায়ক। উত্তমের অফারও মেনে নিয়েছিলেন ঋত্বিক। তবে চেয়েছিলেন সময়। সেই মতো উত্তমও পরিচালককে অগ্রিম টাকা দিয়েছিলেন ছবি তৈরির জন্য। কিন্তু ততদিনে ঋত্বিকের অসুস্থতা বাড়তে থাকে। সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়তে থাকে ঋত্বিকের নেশা। নেশা এতটাই বাড়ে যে, হাসপাতালেই গোপনে মদ আনার ব্যবস্থা করে ফেলেছিলেন পরিচালক। শোনা যায়, ঋত্বিক এই মদের টাকা পেতেন, তাঁকে দেখতে আসা লোকজনের কাছ থেকেই।
শেষমেশ, বনপলাশীর পদাবলী তৈরি করতে পারেননি ঋত্বিক। উল্টে উত্তমই সেই ছবি পরিচালনা করেন। তবে উত্তম, ঋত্বিককে দেওয়া সেই অগ্রিম টাকা ফেরত নেননি। ঋত্বিক ছবিটি পরিচালনা করবেন না জেনেও, নিয়মিত হাসপাতালে তাঁকে দেখতে যেতেন। হয়তো ঋত্বিকের অসুস্থতা না বাড়লে, ঋত্বিকের ছবিতেও দেখা মিলত মহানায়কের।
