
সিনেমার পর্দায় তিনি মহানায়ক। অনুরাগীদের কাছেও সেই মহানায়ক সত্ত্বা বজায় রাখতেন উত্তম কুমার। তবে বাড়ির লোকেদের কাছে একেবারেই ঘরের ছেলে। আর তাই তো, বাড়ির যেকোনও কাজে নিজে থেকেই এগিয়ে আসতেন তিনি। হাজার ব্যস্ততার মাঝেও বাড়ির লোককে সময় দিতে একেবারেই ভুল হত না উত্তম কুমারের। এই যেমন, ছেলে গৌতমের বিয়ের বেশিরভাগ দায়িত্বই নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন উত্তম। এমনকী, গৌতমের বউ সুমনাকে পছন্দ করছিলেন উত্তমই। শুটিং সেরে নিজেই বেরিয়ে পড়তেন বিয়ের শপিং থেকে নিমন্ত্রণে। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-পরিজনদের বাড়িতে নিজেই যেতেন আমন্ত্রণপত্র হাতে। জানা যায়, উত্তমের ছেলের জাঁকজমক বিয়েতে হাজির হয়েছিলেন গোটা টলিউড।
সেই সময় উত্তম নিয়মিত কাজ করলেও, সুচিত্রা ধীরে ধীরে নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছেন। ছবির সংখ্যাও যেমন কমিয়ে ছিলেন, তেমনি সামাজিক অনুষ্ঠানেও যেতেন না তিনি। বলা ভাল, সেই সময় থেকেই নিজেকে ঘরবন্দি করার প্রচেষ্টা শুরু করেছিলেন সুচিত্রা। ঠিক এই সময়ই একদিন ছেলের বিয়ের নিমন্ত্রণ করতে একটু রাতের দিকেই সুচিত্রার বাড়ি গেলেন উত্তম। মহানায়িকার সঙ্গে দেখা হল মহানায়কের। ছেলের বিয়ের কার্ড দিয়ে সুচিত্রাকে নিমন্ত্রণ করলেন উত্তম। নিমন্ত্রণপত্র পেয়ে একটু হেসে সুচিত্রা জানিয়ে ছিলেন, এই বিয়েতে তো যেতে পারব না। কেননা, আমি সামাজিক অনুষ্ঠানে আর যাব না ঠিক করেছি। সুচিত্রার মুখে এমন কথা শুনে, অবাক হয়েছিলেন উত্তম।
গৌতমের বৌভাতের দিন ম্য়ান্ডি ভিলা গার্ডেনসে জাঁকজমক অনুষ্ঠান। উপস্থিত টলিউডের সবাই। কিন্তু বেলা বাড়লেও, সুচিত্রার দেখা নেই। উত্তমের ভাই তরুণ কুমার, উত্তমকে বলেছিলেন, সবাই এল কিন্তু রমাদি তো এল না! ভাইকে উত্তম বলেছিলেন, রমা ঠিক আসবে, গৌতমকে ছেলের মতো তো দেখে রমা। দেখে নিস রমা আসবেই!
উত্তমের কথাই শেষমেশ হল ঠিক, একটু দেরিতে হলেও, এলেন সুচিত্রা সেন। থাকলেনও অনেকক্ষণ। জমিয়ে দিলেন আসর। সেদিন উত্তম মিষ্টি হেসে সুচিত্রাকে বলেছিলেন, আমি জানতাম… তুমি আসবে। সুচিত্রার মন যে উত্তম পড়তে পারতেন, তা প্রমাণ এমন ঘটনাতেই।
তথ্যসূত্র– আমার দাদা উত্তম কুমার, লেখক- তরুণ কুমার