
একজন মহানায়ক। আরেকজন মহানায়িকা। এরা দুজন আলাদা পর্দায় এলে বা অন্য নায়ক-নায়িকাদের সঙ্গে জুটি বাঁধলেও, উত্তম-সুচিত্রা জুটির ম্যাজিককে টপকাতে পারতেন না। উত্তম কুমার ও সুচিত্রা সেনও এই বিষয়টা জানতেন, তাই তো যখনই তাঁরা পর্দায় জুটি বেঁধেছেন, নিজেদের জুটির ম্যাজিক ধরে রাখতে, উজার করে দিয়েছেন নিজেদের। তবে জানেন কি এই জুটির শেষ ছবিতে হাজার ম্যাজিক থাকলেও, তা বিফলে গিয়েছিল! টান টান গল্প, রোমান্টিক গান, এই জুটির দারুণ রসায়ন থাকতেও ছবি বক্স অফিসে একেবারে মুখ থুবরে পড়েছিল। প্রযোজকের ঘরে যে টাকা ঢুকেছিল, তা ছবির নির্মানের খরচ থেকে অনেকটা কম! হ্যাঁ, উত্তম-সুচিত্রা জুটি একের পর এক হিট দিলেও, তাঁদের শেষ ছবি ছিল ডাহা ফ্লপ।
১৯৫৩ সালে মুক্তি পায় উত্তম-সুচিত্রা জুটির প্রথম ছবি সাড়ে চুয়াত্তর। প্রথম ছবি থেকেই নজর কেড়েছিল এই জুটি। তবে পরবর্তীকালে হারানো সুর, অগ্নিপরীক্ষা, শাপমোচন, সবার উপরে, পথে হল দেরি, ইন্দ্রাণী, চাওয়া-পাওয়া, সপ্তপদী, সাত পাকে বাঁধা একের পর এক কাল্ট সিনেমা উপহার দিয়েছে উত্তম-সুচিত্রা। কিন্তু ১৯৭৫ সালে মুক্তি প্রাপ্ত এই জুটির শেষ ছবি প্রিয় বান্ধবী। এই ছবি ঐতিহাসিক দিক থেকে গুরুত্ব রাখলেও, বক্স অফিসে টিকতে পারেনি। উলটে ফ্লপ হয়েছিল।
সময়টা সাতের দশক। সাতের দশকের শুরুর দিকেই ‘প্রিয় বান্ধবী’ ছবির কিছুটা শুটিং সেরে ফেলেছিলেন উত্তম-সুচিত্রা। কিন্তু হঠাৎই সেই সময় মুম্বইয়ে ডাক পড়ে সুচিত্রার। সেই সময় চলছিল আঁধি ছবির শুটিং। সঞ্জীব কাপুরের সঙ্গে জুটি বেঁধে যে ছবি পরে ঝড় তুলেছে গোটা দেশে। কিছুদিনের জন্য নিষিদ্ধও ঘোষণা করা হয়েছিল এই ছবিকে। অন্যদিকে সবে তখন ‘অমানুষ’ ছবির শুটিং শেষ করেছেন উত্তম। মুম্বইয়ে এই ছবির হিন্দি সংস্করনের জন্য ডাবিং করছিলেন। শোনা যায়, সেই সময় প্রিয় বান্ধবী ছবির পরিচালক হীরেন নাগ বহু চেষ্টা করেও, সুচিত্রার ডেট পাচ্ছিলেন না। সুচিত্রা নাকি স্পষ্ট বলেছিলেন, আঁধি ছবি শেষ না করে, তিনি মুম্বই ছেড়ে নড়বেন না। উত্তম অবশ্য ডাবিং শেষ করে নতুন ছবি হাত দেওয়ার আগের অবস্থায়। ততটা ব্যস্ত নয়। হীরেন নাগকে পর পর ডেটও দিয়েছিলেন। একে তো অর্ধেক শুটিং হয়ে আটকে প্রিয় বান্ধবী। অন্যদিকে, আঁধি ছবির জন্য নতুন ডেট দিতে নারাজ সুচিত্রা। দেরি হওয়ায় চিত্রনাট্য দিন দিন সময়ের তালে ছন্দ হারাচ্ছিল। পরিচালক হীরেন নাগ মনে করেছিলেন, এই ছবি বেশি দেরিতে মুক্তি পেলে, এই ছবির গল্প স্বাদ হারাবে। পরিচালকের ভাবনাই হল সত্যি। শেষমেষ সুচিত্রার ডেট দেওয়ার টালবাহানাতেই ছবির যখন মুক্তি পেল ততদিনে দুজনেরই চেহারায় বয়সের ছাপ। ছবি যখন শুরু হয়েছিল, তখন উত্তম-সুচিত্রা যেমন দেখতে ছিলেন, তার থেকে ১৯৭৫ সালে বদলে গেলেন অনেকটা। ছবির শুটিংয়ে বিলম্ব হয়েছিল, তাও ধরা পড়েছিল গোটা সিনেমায়। উত্তম-সুচিত্রা ম্যাজিকও প্রিয় বান্ধবীর সেই খুঁতকে ঢাকতে হল ব্যর্থ। ফলাফল ছবিটি ডাহা ফ্লপ।