
উত্তম কুমারের ঘনিষ্ঠরা বলে থাকেন, মহানায়কের নাকি দারুণ জেদ ছিল। নাহ, শুধুই একনম্বর অভিনেতা হওয়ার জন্য নয়, বরং যে কোনও বিষয়ে, উত্তম যখন একবার সিদ্ধান্ত নিতেন, তখন নিজের কথায় সারাজীবন থাকতেন অনড়। তাঁর কথাকে কেউ একফোঁটাও এদিক-ওদিক করতে পারতেন না। ঠিক এমনই ঘটনা ঘটে, উত্তম কুমারের দত্তপুকুরের বাগান বাড়ির ক্ষেত্রে। দত্তপুকুরের বিলাসবহুল বাগান বাড়িতে এমন এক ঘটনা ঘটে, যার কারণে উত্তম একটা সময়ের পর আর পা রাখেননি সেই বাড়িতে। এমনকী, সেই বাড়ি লিখে দিয়েছিলেন ভাই তরুণ কুমারকে।
তা এমন কী ঘটেছিল মহানায়কের সঙ্গে?
উত্তমের স্ত্রী গৌরীদেবী বিলেত থেকে উত্তম কুমারের জন্য একটি কালো ভেলভেটের কোট নিয়ে এসেছিলেন। যাঁর পকেট জুড়ে ছিল সুতোর কাজ। সেই কোটটি মহানায়কের অত্যন্ত প্রিয় হয়ে উঠেছিল। একে তো স্ত্রীয়ের উপহার। তার উপর বিলেত থেকে আনা। স্বভাবতই এই কোট উত্তমের হৃদয় জুড়ে ছিল। শোনা যায়, এই কোট লাকিও ছিল তাঁর কাছে। এই কোট পরে যে কাজেই তিনি গিয়েছেন, সাফল্য পেয়েছেন। তাই তো কোনও ফিল্মি পুরস্কার সন্ধ্যাতেও এক কোটে দেখা যেত উত্তমকে। এমনকী, প্রথমবার যখন ইংল্যান্ডে ছবির প্রচারে গিয়েছিলেন মহানায়ক, তখনও এই কোট তাঁর পরনে ছিল।
সময়টা সাতের দশকের মাঝামাঝি। দত্তপুকুরে শখ করে একটা বিশালমাপের বাগান বাড়ি কিনেছিলেন উত্তম। সাধ করে সেই বাড়ির নাম রেখেছিলেন ‘ভ্রমর’। মাঝে মধ্যেই কলকাতা থেকে ফিয়েট গাড়ি চেপে এই বাগানবাড়িতে চলে যেতেন তিনি। দিন কয়েক সময় কাটিয়ে ফিরে আসতেন। ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত বহু গুণীজনই উত্তমের সেই বাড়িতে গিয়েছেন।
সেই সময় এক বিনোদন ম্যাগাজিনে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, একবার বাগান বাড়িতে থাকার সময় উত্তমের এই সাধের এবং বেশ দামি কালো রঙের কোটটি চুরি হয়ে যায়। প্রিয় কোট চুরি যাওয়ায় খুবই আঘাত পেয়েছিলেন উত্তম। আর সেই আঘাত থেকেই বড় সিদ্ধান্ত নেন। ঠিক এই ঘটনার একমাসের মধ্যেই বাগান বাড়িটা ভাই তরুণকুমারের নামে করে দেন উত্তম। শুধুই নামেই করেননি, কোট চুরির পর আর একবারও উত্তম সেই বাড়িতে পা রাখেননি। ভাই তরুণ কুমার অবশ্য দাদাকে বলেছিলেন, তাঁর নামে বাড়িটি লিখে না দিতে, ভাইকে উত্তরে উত্তম জানিয়েছিলেন, ”ওই বাড়িতে আমি তো আর পা রাখব না। আর আমি চাই না বাড়িটা অন্য কারও হাতে যাক। বরং আমাদের পরিবারেরই হয়ে থাক।” দলিলপত্র তাঁর নামে হলেও, দাদাকে বরাবর সম্মান দিয়েছেন তরুণ কুমার। তাই আর উত্তমের কথা অমান্য করেননি। দাদাকে সম্মান জানিয়ে, বাড়ির লাগোয়া বাগানটার নাম রেখেছিলেন উত্তমের বাগান। আজ উত্তম কুমার নেই, তরুণ কুমারও নেই। কিন্তু দত্তপুকুরে এখনও রয়েছে সেই বাগান বাড়ি। সেই বাগান। যা আজও উত্তমের বাগান নামেই পরিচিত।