
সিনেমা, শুটিং, ফিল্মপাড়ার পার্টির ব্যস্ততার মাঝে উত্তম যে কাজটি করতে কোনওদিনও ভোলেননি তা হল ময়দানের মর্নিং ওয়াক। কেননা, উত্তম জানতেন তাঁকে ফিট থাকার জন্য ময়দানে কয়েক পাক দৌড় এবং ফ্রি হ্য়ান্ড এক্সারসাইজ করতেই হবে। কিন্তু সেই মর্নিং ওয়াক করতে গিয়েই যে খুনের হুমকি পাবেন, তা স্বপ্নেও ভাবেননি উত্তম। যখন এমন কাণ্ড ঘটে, উত্তমের পা থেকে যেন মাটি সরে গিয়েছিল।
সালটা ১৯৭১। সেই সময় নকশাল আন্দোলনে উত্তাল গোটা বাংলা। সেই আগুনের উত্তাপে তপ্ত কলকাতাও। রোজই খবরের কাগজে প্রকাশিত হত নকশাল আন্দোলনে প্রাণ যাওয়া তরুণ তুর্কীদের কথা। শহরের উত্তপ্ত পরিস্থিতির সম্পর্কে ওয়াকিবহল ছিলেন উত্তমও। তখন আগস্ট মাসের একেবারে শুরু দিক। কলকাতার গরমও বেশ ভাল। অভ্য়াসবশত, উত্তম গাড়ি চেপে ময়রাস্ট্রিটের বাড়ি থেকে ময়দানে গেলেন। ময়দানের একপাশে গাড়িটি ড্রাইভার দাঁড় করাতেই, উত্তম গাড়ি থেকে নেমে মাঠে দাঁড়িয়ে কসরৎ করছেন। ঠিক সেই সময় উত্তম লক্ষ্য করলেন, তার সামনে দিয়ে এক যুবক তীব্র বেগে দৌড়ে চলে যায়, আর সেই যুবকের পিছনে কয়েকজন সন্ডামার্কা লোক! ভোরের হালকা আলোয়, সেদিন কারও মুখই স্পষ্ট দেখতে পাননি উত্তম। তবে বন্দুকের গুলির আওয়াজ কানে আসতেই বুঝতে পারেন কিছু একটা গণ্ডগোল হয়েছে। তারপর উত্তম দেখেন, মাঠের সবুজ ঘাসে লুটিয়ে পড়ে রয়েছে যুবকের রক্তাক্ত দেহ। আর সন্ডামার্কা কয়েকজন তাঁর দিকে এগিয়ে আসছে। সেদিন উত্তম কিছুটা থতমত খেয়ে যান। ঠিক বুঝতে পারেন না, কী করা উচিত। একদল লোক মহানায়কের সামনে এসে জানান, আপনি কিন্তু কিছু দেখেননি! মনে রাখবেন কথাটা, নইলে…!
এই ঘটনার পর সেদিন আর ময়দানে বেশিক্ষণ থাকেননি উত্তম। সোজা এসেছিলেন বাড়ি। উত্তম তাঁর ঘনিষ্ঠদের বলেছিলেন, এই ঘটনা তাঁকে মারাত্মক নাড়া দিয়েছিল। রীতিমতো ভয় পেয়েছিলেন তিনি। আততায়ীদের ওই প্রচ্ছন্ন হুমকি তাঁকে দুর্বল করে দিয়েছিল মানসিক দিক থেকে। শোনা যায়, এই ঘটনার পরেই উত্তম কলকাতা ছেড়ে মুম্বই উড়ে যান। বেশ কয়েক মাস মুম্বইয়েই ছিলেন তিনি।
সেই সময় খবরেও এসেছিল এই ঘটনার কথা। সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, উত্তম হয়তো সেদিন নকশাল আন্দোলনের অন্যতম সংগ্রামী সরোজ দত্তর এনকাউন্টার দেখে ফেলেছিলেন। তবে এই নিয়ে উত্তম ঘনিষ্ঠদের কাছে মুখ খুললেও, সংবাদমাধ্যমে কখনই এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। অনেক চিত্রসমালোচকরা আবার মনে করেন, উত্তম ও সরোজ দত্তের এমন ঘটনা কলকাতায় প্রচলিত এক আর্বান মিথ। কেননা, উত্তমের এমন অভিজ্ঞতার কথা, শুধুই ফিল্মি আড্ডায় উঠে আসে। এর সঠিক কোনও ভিত্তি পাওয়া যায় না। তবে নকশাল আন্দোলনের সময় যে উত্তম কলকাতা ছেড়েছিলেন, সে কথা কিন্তু একশো শতাংশ সত্য।