
উত্তম কুমার ও সুচিত্রা সেনের পর্দার বাইরে সম্পর্ক নিয়ে নানা গুঞ্জন চলত। এমনকী, উত্তম-সুচিত্রার সঙ্গে সুপ্রিয়া চৌধুরীকে টেনেও, সেই সময় বিনোদনমূলক পত্র-পত্রিকায় নানা জল্পনা লেগেই থাকত। কিন্তু সুপ্রিয়া দেবী তাঁর বায়োগ্রাফিতে লিখেছিলেন, সুচিত্রার সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্বটা জমে ওঠে উত্তমের হাত ধরেই। আর সুচিত্রা-উত্তমের বন্ধুত্বে যে একটা সরলতা ছিল, তাও স্বীকার করেছিলেন সুপ্রিয়া। শুধু তাই নয়, সুপ্রিয়ার কথায়, ইন্ডাস্ট্রিতে ‘রাশভারি ম্যাডাম সেন’ নামে সুচিত্রা পরিচিত হলেও, সুচিত্রা আদপে ছিলেন খুবই রসিক মানুষ। আর তাঁর রসিকতার নানা উদাহরণ রয়েছে, খোদ সুপ্রিয়ার ঝুলিতেই।
সুপ্রিয়া দেবী তাঁর বায়োগ্রাফিতে লিখেছিলেন, উত্তম আর সুচিত্রার বন্ধুত্বটা ছিল ভারি মজার। দুজনেই দুজনের কাছে কোনও রাখঢাক রাখতেন না। শুটিং ফ্লোরে দুজনে সিরিয়াস থাকলেও, ব্যক্তিগত আড্ডায় দুজনের হাসি থামতেই চাইত না। রমাদি (সুচিত্রা সেন) বহুবার আমাদের ময়রাস্ট্রিটের বাড়িতে এসে আড্ডাও দিয়েছেন। রমাদির পছন্দসই রান্নাও করতাম। একসঙ্গে খেতে খেতে আড্ডা চলত। এমনকী, অনেক সময় রমাদি আমাকে আর উত্তমকে ডেকে নিত তাঁর বাড়িতে।
বায়োগ্রাফিতে সুপ্রিয়া জানান, এমনই একদিন হঠাৎ সকাল সকাল রমাদির ফোন আসে। ফোনটা আমিই ধরি। রমাদি সোজা আমাকে বলেন, উতু আছে? (উত্তম কুমারকে উতু বলেই ডাকতেন সুচিত্রা) উত্তম তখন বাড়িতে ছিল না, সেটা রমাদিকে জানাতেই, রমাদি বললেন, ইসস, উতুকে খুব চুমু খেতে ইচ্ছা করছে তো! আমি অল্প হেসে বললাম, বেশ তো! আমি শুটিং ফ্লোরে ফোন করে বলে দিচ্ছি, শুটিং শেষে তোমার বাড়ি চলে যাবে উত্তম। তুমি চুমু খেয়ে নিও। আমার মুখে এমন কথা শুনে রমাদি রীতিমতো হতবাক। আমাকে বলল, একী তোর হিংসা হচ্ছে না! আমি রমাদিকে বললাম, নাহ, কারণ তোমাকে আমি খুব ভালভাবেই চিনি। তোমার রসিকতার ধরনটাও জানা আছে।
উত্তম, সুপ্রিয়া ও সুচিত্রার এই বন্ধুত্বের কথা শুটিং ফ্লোরের মানুষদের কাছে গোপনই ছিল। কারণ, সুচিত্রার বিশ্বাস ছিল, তারকাদের ব্যক্তিগত জীবন প্রকাশ্যে আসলে, তারকাদের ম্যাজিক খতম হয়ে যায়! তাই গুঞ্জনপাড়া যাই বলুক না কেন, এই গোপনীয়তার কারণেই বাংলা চলচ্চিত্রের এই তিন মহান তারকার বন্ধুত্বের গল্প আজও সমান উজ্জ্বল।