
সত্য়জিৎ রায় চেয়েছিলেন ঘরে বাইরে ছবির সন্দীপের চরিত্রে অভিনয় করুন উত্তম কুমার। কিন্তু উত্তম ঘনিষ্ঠরা মহানায়কের কান ভাঙিয়ে ছিলেন, এই বলে যে সন্দীপ চরিত্র হল নেগেটিভ। মহানায়কের তা করা উচিতই নয়। কাছের মানুষদের কথা শুনেই সত্যজিৎকে সোজা না করেছিলেন উত্তম, পরে সেই চরিত্র লুফে নেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু জানেন কি, এই ঘটনার অনেক আগেই ভিলেনের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন উত্তম! আর শুধু অভিনয়ই করেননি দর্শকদের প্রশংসাও কুড়িয়ে নিয়েছিলেন। তবে এর নেপথ্যে রয়েছে এমন এক গল্প, যা কিনা প্রমাণ করেন, তিনি কেন মহানায়ক।
প্রথম থেকেই উত্তম কুমার নিজের ইমেজ নিয়ে ছিলেন খুবই সচেতন। সিনেমার পর্দায় কী করলে, তিনি দর্শকদের মনে জায়গা করে নেবেন। আর কী করলে দর্শকরা তাঁকে পছন্দ করবেন না, তা তিনি আগে থেকেই আন্দাজ করতে পারতেন। উত্তমের ঘনিষ্ঠরা বলেন, দর্শকদের নার্ভ আগে থেকেই বুঝতে পারার ট্যালেন্ট ছিল উত্তমের। আর সেটা বুঝে নিয়েই অভিনয়কে নিজের মতো করে বদলে বদলে নিতেন মহানায়ক। তবে একবার শুধু নিজেই বদালনি, নিজের ইমেজকে ঠিক রাখার জন্য চিত্রনাট্যকেই বদলে ফেলেছিলেন উত্তম। পরিচালক বাধ্য হয়েছিলেন উত্তমের কথায় পুরো গল্পটা বদলে ফেলতে।
ঠিক কী ঘটেছিল?
সময়টা ছয়ের দশকের শুরুর দিক। পরিচালক হরিদাস ভট্টাচার্যর ‘শেষ অঙ্ক’ ছবির শুটিং করছিলেন উত্তম কুমার। যাঁরা ছবিটা দেখেছেন, তাঁরা জানেন, এই ছবিতে উত্তম অভিনীত চরিত্রটি নেগেটিভ শেডের। বলা হয়, বাংলা ছবির অন্যতম সেরা কোর্ট ড্রামা শেষ অঙ্ক।
পরিচালক হরিদাসের চিত্রনাট্য অনুযায়ী, এই ছবিতে উত্তম কুমার তাঁর স্ত্রীকে গলা টিপে খুন করেছেন। আর তারই বিচার চলছে। গল্পের প্লটের পরতে পরতে নানা রহস্য়, নানা টুইস্ট। সব কিছু মেনে নিলেও স্ত্রীকে গলা টিপে মারার দৃশ্যটি মোটেই পছন্দ ছিল না উত্তমের। তাঁর মনে হয়েছিল, এরকম খুন দেখলে, লোকে তাঁকে ভিলেন ভেবে নেবে। কিন্তু উত্তমের কথা প্রথমে মেনে নিতে রাজি ছিলেন না পরিচালক হরিদাস। ফলে দুজনের ইগো সমস্য়ায় ছবিটির শুটিং বন্ধ হয়ে যায়।
ঠিক এই সময়ই পুরো কাণ্ডে ঢুকে আসেন পরিচালকের স্ত্রী ও অভিনেত্রী কানন দেবী। তিনিই পরিচালককে বোঝান, দৃশ্যটি গলা টিপে খুনের বদলে একটা চড় করে দিতে। যে চড়ের কারণেই মৃত্যু হবে স্ত্রীর। ছবির স্বার্থ পরিচালক মেনে নেন সেই প্রোপোজাল। উত্তমও রাজি হন। ছবিটি মুক্তি পেতেই হইচই ফেলে দিয়েছিল বক্স অফিসে। ভিলেন হয়েও, নজর কেড়ে নিয়েছিলেন উত্তম।
উত্তম ছাড়াও এই ছবিতে ছিলেন শর্মিলা ঠাকুর, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, উৎপল দত্ত, পাহাড়ি সান্যাল, বিকাশ রায়, কমল মিত্রের মতো দাপুটে অভিনেতারা।