
মা-বাবা নাম রেখেছিলেন সাম্যময় বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সিনেমায় আসার পর নাম হল ভানু। মজা করে সাক্ষাৎকারে বার বার তিনি বলতেন, ছিলাম বাঁড়ুজ্জে, হয়ে গেলাম ভাঁড়ুজ্জে! তবে সাম্যময়ের, ‘মাসিমা মালপো খামু’র ভানু হয়ে ওঠার গল্পটা সহজ নয়। কেননা, সিনেমায় আসার কোনও পরিকল্পনাই ছিল না তাঁর। বরং চট্টগ্রাম অস্ত্রগার লুণ্ঠনের অন্য়তম নায়ক অনন্ত সিংকে আদর্শ হিসেবে দেখেছিলেন। গুরু মেনেছিলেন বিপ্লবী দিনেশ গুপ্তকে। স্বদেশি আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয়া যোগাযোগ ছিল যাঁর, সেই ভানু হয়ে অভিনেতার জায়গায়, কোনও পার্টির নেতা হতে পারতেন, কিন্তু তা হননি। বরং অভিনয়ে আসার আগে, তাঁর ধ্যান, জ্ঞান সবই ছিল দেশের প্রতি।
বরাবরই ডাকাবুকো ছিলেন ভানু বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। অধ্যাবসায় ও জেদ তাঁর ধমনিতে বইত। সেই কারণেই স্কুল ও কলেজে শিক্ষকদের খুব কাছের হয়ে উঠেছিলেন তিনি। বিজ্ঞানী সত্যেন বসু, রমেশচন্দ্র মজুমদার এবং কবি জসীমউদ্দিনের খুব প্রিয় পাত্র ছিলেন তিনি। পড়াশুনোর পাশাপাশি তখন স্বদেশি আন্দোলনে একের পর এক দুঃসাহসিক পদক্ষেপ নিচ্ছেন। নিষিদ্ধ বই, রিলভপার পাচার তো তখন ভানুর কাছে জলভাত। বহুবার ব্রিটিশ পুলিশের হাতে পড়ে, উপস্থিত বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে প্রাণে বেঁচেছেন। ঠিক এই সময়ই ভানুর সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটল, যা কিনা রাতারাতি তাঁর জীবন বদলে দিল। নিজের ঢাকার বাড়ি ছেড়ে, মা-বাবাকে ছেড়ে ঢাকা ছেড়ে কলকাতায় চলে আসতে বাধ্য হলেন। সে এক রাত কেটেছিল ভানুর। এক বন্ধুর গাড়ির ব্যাকসিটের পাদানিতে শুয়ে ছিলেন ভানু। রাতের অন্ধকারে ঢাকা থেকে কলকাতায়।
দেখলেই মেরে দাও! হুলিয়া জারি হয়েছিল ভানুর নামে। আর সেই কারণেই ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন বাংলাদেশ। ভাবা যায় এপার বাংলায় আগমণটাও তার এরকম নাটকীয়ভাবে হয়েছিল।
যে মানুষটা সিনেপর্দায় এসে দাঁড়ালে দর্শকরা হাসির চোটে লুটিয়ে পড়তেন। যে মানুষটা সাড়ে চুয়েত্তরের আমার এই যৌবন গানে মাথা ঝাঁকাতেন, যে মানুষটা যমালয়ে জীবন্ত মানুষ ছবিতে হাম হাম গুড়ি গুড়ি নাচতেন, সেই মানুষটার অতীতটা যে এমন লড়াকু, তা ভাবাই যায় না।