
কিশোর কুমার ছিলেন রসিক মানুষ। তাঁর উপস্থিত বুদ্ধির নানা গল্প বলিউডে দারুণ জনপ্রিয়। কখনও অভিনয়ের জন্য পারশ্রমিক না পাওয়ায় ন্যাড়া হয়ে শুটিং ফ্লোরে হাজির হতেন, তো কখনও আবার অর্ধেক গান গেয়েই স্টুডিও ছাড়তেন। নিজের কাজ হাশিল করতে তিনি যে যখন তখন যা খুশি করতে পারেন, তেমন প্রমাণ বার বার দিয়েছেন। আর এর মধ্যে সব থেকে অবাক করা কাণ্ডটা তিনি করেছিলেন ছেলে অমিত কুমারের বিয়ে আটকাতে গিয়ে। তিনি যা ঘটিয়ে ছিলেন, তা আজও ভুলতে পারেননি কিশোর কুমারের পরিবারের লোকজন। এক সাক্ষাৎকারে বাবার এমন অমর কীর্ত্তির কথা নিজে মুখে জানালেন গায়ক অমিত কুমার।
এমনিতেই বহু বিবাহ এবং বহু প্রেমের জন্য ইন্ডাস্ট্রিতে কিশোরের গায়ে লেগেছিল ‘রঙিন মানুষে’র তকমা। এ নিয়ে হামেশাই নানা গুঞ্জন লেগে থাকত। তবে সে সব খবর গায়কের কানে আসলেও, কিশোর খুব একটা পাত্তা দিতেন না। কিন্তু ছেলের বিয়ে আটকাতে সেই গুঞ্জনকেই যে কাজে লাগাবেন কিশোর কুমার, তা আন্দাজও করতে পারেননি কেউ।
ঠিক কী ঘটেছিল?
সালটা ১৯৮১। কলকাতার একটি মেয়ের সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয় কিশোর কুমার ও রুমা গুহঠাকুরতার ছেলে অমিত কুমারের। ছেলে অ্য়ারেঞ্জড ম্যারেজে রাজি হওয়ায় দারুণ খুশি ছিলেন কিশোর কুমার। এমনকী, কিশোর ঠিক করেছিলেন, ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি থেকে তারকাদের সঙ্গে নিয়ে বরযাত্রী যাবে মুম্বই টু কলকাতা। সেই যাত্রার সমস্ত ব্যবস্থা নিজে হাতেই করে ফিরেছিলেন কিশোর। বিয়ের বাকি ছিল আর মাত্র ১০ দিন। ঠিক তখনই কিশোরের কানে এল এক বিস্ফোরক খবর। কিশোর জানতে পারলেন কলকাতার সেই মেয়েটির আগে একবার বিয়ে হয়েছে! এই খবর পেয়ে কিশোর রীতিমতো রেগে গেলেন। যে ঘটক মারফত এই পাত্রীর খোঁজ পেয়েছিলেন, তাঁকে উত্তম-মধ্যম বকা দিয়েছিলেন গায়ক। পাত্রীর অতীত গোপন করার বিষয়টা কিছুতেই মানতে পারেননি কিশোর। আসলে, তিনি চাননি অমিত কোনও বিবাহিত মেয়েকে বিয়ে করুক। অন্যদিকে, বিয়ের সমস্ত আয়োজন শেষ। বিলি হয়ে গিয়েছিল নিমন্ত্রণপত্রও। তাহলে এবার উপায়! শেষ পর্যন্ত উপায় বার করলেন কিশোর নিজেই। অমিতকে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, ”যে তারিখ ঠিক হয়েছে, সেই তারিখেই তোমার বিয়ে হবে। আমি অন্য পাত্রী খুঁজতে কলকাতা যাচ্ছি।” আর ”ওই মেয়েটা”? অমিত প্রশ্ন করলে, কিশোর জানান, ‘ও আমি সামলে নেব!’
এরপরই কলকাতায় উড়ে এলেন কিশোর কুমার। দেখা করলেন অমিতের জন্য ঠিক করা সেই পাত্রীর সঙ্গে। কিন্তু প্রথমে কিশোর বুঝে উঠতে পারছিলেন না যে পাত্রীকে কীভাবে ‘না’ বলবেন! কিশোর মনে মনে ভাবছিলেন, এমন কিছু তাঁকে বলতে হবে, যাতে সাপও মরে, লাঠিও না ভাঙে। অর্থাৎ মেয়েটি যেন দুঃখও না পায়, আবার বিয়েটা ভেঙেও যায়। ঠিক সেই সময়ই কিশোরের মাথায় এল এক দুষ্টু বুদ্ধি। হিন্দি-বাংলাতে মিশিয়ে সোজা পাত্রীকে বললেন, ”ছেলে আমার সোনার টুকরো। কিন্তু ম্যায় আচ্ছা নেহি হু… আমার ক্য়ারেক্টার ভাল নয়! গণ্ডগোল আছে!” কিশোরের মুখে এমন কথা শুনে ব্যোমকে গিয়েছিলেন মেয়েটি। শেষমেশ, কিশোর যেটা চেয়েছিলেন, তেমনটিই ঘটে। হবু শ্বশুর নিজেই নিজেকে দুশ্চরিত্র বলায় মেয়েটিই বেঁকে বসেন এই বিয়েতে। জানা যায়, এই ঘটনার পরেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে কলকাতার এক নার্সিং হোমে ভর্তি হয়েছিলেন কিশোর কুমার। তবে সেবারও কিশোর সফল হয়েছিলেন নিজের উপস্থিত বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে।