
সালটা ১৯৮০। তারিখ ২৪ জুলাই। রাত তখন প্রায় ১০টা। হঠাৎ ফোন বেজে উঠল সুচিত্রা সেনের বাড়ির। মহানায়িকা তখন বাড়িতেই ছিলেন। দোতলার লম্বা সিঁড়ির ঠিক কোণায় রাখা ছিল লম্বা পিতলের হাতলের ফোনটি। ফোনটি ধরলেন সুচিত্রা, ‘হ্যালো… কে বলছেন? তারপরই নিস্তব্ধতা। সুচিত্রা বললেন, শান্ত থেকো, বড় বিপদ এসেছে, মন শান্ত রাখতে হবে। সুচিত্রার গাল বয়ে পড়ছিল অশ্রুধারা। চোখ মুখে সুচিত্রা ফের দোতলায় উঠে গেলেন, ঘরের দরজা বন্ধ করলেন! হ্য়াঁ, সেদিন ফোন মারফত মহানায়কের মৃত্যুর খবর পেয়েছিলেন মহানায়িকা। কেঁপে উঠেছিল তাঁর হৃদয়। যে উত্তম-সুচিত্রা ভারতীয় চলচ্চিত্রের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন, সেই জুটির সেদিন যেন যাত্রা শেষ হল। থমকে গিয়েছিলেন মহানায়িকা।
সুচিত্রার ঘনিষ্ঠদের কথায় ,সেই ফোন আসার পর যে ঘরের দরজা বন্ধ করেছিলেন সুচিত্রা, তা খুলেছিলেন রাত আড়াইটের সময়। ওত রাতেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে পা রেখেছিলেন উত্তম কুমার ভবানীপুরের বাড়িতে। পরনে সবুজ পারের সাদ তাঁতের শাড়ি, হাতে রজনীগন্ধার মালা। রাত আড়াইটে নাগাদ যখন উত্তমের ভবানীরপুরের বাড়িতে পৌঁছলেন সুচিত্রা, তখন মহানায়কের মরদেহ ঘিরে বসে ছিলেন স্ত্রী গৌরী দেবী এবং ভাই তরুণ কুমার।
উত্তম তখন চিরনিদ্রায়। সুচিত্রা অপলক তাকিয়ে রইলেন উত্তমের দিকে। নাহ, সেবার আর রিনা ব্রাউন ও কৃষ্ণেন্দুর চোখে চোখে কথা হল না। বরং সেদিন সুচিত্রার দীর্ঘশ্বাসের শব্দই শোনা গিয়েছিল ভবানীপুরের বাড়িতে। সুচিত্রা হাতে রাখা রজনীগন্ধার মালাটি উত্তমের গলায় দেবেন নাকি পায়ে, নাকি বুকের উপর তা বুঝে উঠতেই পাচ্ছিলেন না। হঠাৎ করে উত্তমের স্ত্রী গৌরীদেবী মহানায়িকাকে বলে উঠলেন, ”রমাদি মালাটা তুমি ওর গলাতেই পরিয়ে দাও। সিনেমায় তো অনেকবার পরিয়েছো। আজও তুমিই পরিয়ে দাও। নিশ্চিন্তে যাত্রা করুন তোমার উত্তম!” এতক্ষণ অনেক কষ্টে নিজের চোখের জল আটকে রেখেছিলেন সুচিত্রা। গৌরীদেবীর এই কথায়, যেন কেঁপে উঠলেন, হাউ হাউ করে কেঁদে ফেললেন মহানায়িকা। শুধু একটা কথাই বললেন, ”তুমি আমার আগে চলে গেলে! এতটা ফাঁকি দিলে…’