উত্তমকে টেক্কা দিতে বড় চাল চেলেছিলেন সৌমিত্র! স্নেহের পুলুর কাছে কি শেষমেশ হার মেনেছিলেন মহানায়ক?

সত্যজিৎ রায়ের অপুর সংসার এবং দেবী ছবিতে অভিনয় করে বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই নজর কেড়েছেন। তবে খুব শীঘ্রই তিনি বুঝে গিয়েছিলেন, সত্যজিতের ছবিতেই শুধু অভিনয় করলেই হবে না।

উত্তমকে টেক্কা দিতে বড় চাল চেলেছিলেন সৌমিত্র! স্নেহের পুলুর কাছে কি শেষমেশ হার মেনেছিলেন মহানায়ক?

|

Aug 23, 2025 | 5:47 PM

বাঙালির ড্রয়িং রুম আড্ডা হোক কিংবা চায়ের দোকানের তরজা। বাঙাল-ঘটি, চিংড়ি-ইলিশ যেমন বিতর্কে ঝড় তোলে, তেমনই উত্তম ও সৌমিত্র মধ্য়েও কে বেশি ভালো অভিনেতা, তা নিয়ে দুভাগে ভাগ হয়ে বিতর্কসভা জমজমাট হয়। এখানে জানিয়ে রাখা দরকার, তপন সিনহা পরিচালিত ‘ঝিন্দের বন্দী’ থেকেই বাঙালির মধ্য়ে উত্তম-সৌমিত্র লড়াই শুরু। তবে শুধু বাঙালির তর্কে নয়, সৌমিত্রও কিন্তু যথেষ্ট তৎপর থাকতেন উত্তমকে টেক্কা দেওয়ার জন্য। যার সূত্রপাত সেই ঝিন্দের বন্দীই।

সত্যজিৎ রায়ের অপুর সংসার এবং দেবী ছবিতে অভিনয় করে বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই নজর কেড়েছেন। তবে খুব শীঘ্রই তিনি বুঝে গিয়েছিলেন, সত্যজিতের ছবিতেই শুধু অভিনয় করলেই হবে না। যে অভিনয়ের জন্য রেডিওর চাকরি ছেড়েছিলেন সৌমিত্র, সেই অভিনয়কে এগিয়ে নিয়ে যেতে চ্যালেঞ্জ তাঁকে নিতেই হবে। আর সেই চ্যালেঞ্জের সুযোগই করে দিলেন পরিচালক তপন সিনহা।

ঝিন্দের বন্দী সৌমিত্রর সাত নম্বর ছবি। তার আগে অবশ্য তপন সিনহার ক্ষুধিত পাষাণ-এ অভিনয় করেছিলেন। তা ছিল সৌমিত্র তিন নম্বর ছবি। সে যাই হোক। ঝিন্দের বন্দী ছবিতে খলনায়ক ময়ূরবাহনের চরিত্রের জন্যই তপন সিনহা কাস্ট করেন সৌমিত্রকে। উলটো দিকে উত্তম কুমার। তাঁর আবার দ্বৈত চরিত্র। তিনিই এই ছবির নায়ক। সপ্তম ছবি মানেই, সৌমিত্র কেরিয়ার একেবারে গোড়ার দিক। কেরিয়ারের এমন সময় খলনায়কের চরিত্র? তাও আবার মহানায়কের বিপরীতে? এমন প্রশ্ন সৌমিত্রর মনে যে আসেনি, তা নয়। তবে তিনি বুঝেছিলেন, এটাই সুযোগ। উত্তমকে পর্দায় টেক্কা দিতে পারলেই, অপুর ইমেজ ভাঙবে। উত্তমকে এড়িয়ে টলিউডের সুনজর পড়বে তাঁর দিকেও। আর সেই সুযোগেরই সঠিক ব্যবহার করলেন সৌমিত্র।

সৌমিত্র ময়ূরবাহন চরিত্রের জন্য প্রাণপাত করে পরিশ্রম করলেন। কারণ তিনি জানতেন, উত্তমের থেকে তাঁকে আলাদা হয়ে স্পটলাইট কাড়তেই হবে। শিখলেন ঘোড়সওয়ার। শুধু তাই নয়, মন দিয়ে যদি ঝিন্দের বন্দী ছবিটা দেখা যায়, তাহলে দেখতে পাবেন, এই ছবিতে সৌমিত্রর একটি স্বতন্ত্র হাঁটার স্টাইল ছিল। যা উত্তমের থেকে একেবারে হটকে। এমনকী, আলাদা করে ভয়েস মডিলিউশনও করেছিলেন সৌমিত্র। যা একেবারেই খলনায়ক সুলভ।

গোটা ছবিতে উত্তমকুমারের সঙ্গে সৌমিত্রকে আমরা দেখি পাঁচটা দৃশ্যে। তার মধ্যে একটি শঙ্কর সিং-রূপী উত্তমকুমারের সঙ্গে বাকি চারটি গৌরীশঙ্কর-রূপী উত্তমকুমারের সঙ্গে। এই পাঁচটি দৃশ্যেই উত্তমকুমারকে তিনি ছাপিয়ে গিয়েছিলেন অনেকটাই। অন্তত, ফিল্ম সমালোচকরা তাই মনে করতেন। প্রতিটি দৃশ্যেই ফুটিয়ে তুলেছিলেন ময়ূরবাহনের ক্রুরতা এবং শঠতা। বিশেষ করে উত্তম-সৌমিত্রর প্রথম দৃশ্যে উচ্চকণ্ঠে ক্রুর হাসিতে উত্তমকে একেবারেই কোণঠাসা করেছিলেন সৌমিত্র। শোনা যায়, এই হাসি নাকি চিত্রনাট্যে ছিলই না। শুটিং ফ্লোরেই ফাইনাল শুটে সবার সামনে সৌমিত্র ঠিক করেন, তিনি দৃশ্যটি এভাবে করবেন। চিত্রনাট্যের বাইরে গিয়ে সৌমিত্রর এমন করায় উত্তম নাকি বেশ সারপ্রাইজ হয়েছিলেন। সৌমিত্র নাকি এভাবেই মহানায়ককে অবাক করতে চেয়েছিলেন। সঙ্গে সৌমিত্রর উদ্দেশ্য ছিল এই এক হাসিতেই দর্শকদের বুঝিয়ে দেওয়া, ঝিন্দের বন্দী শুধুই উত্তমের নয়, সৌমিত্ররও ছবি। ‘ঝিন্দের বন্দী’ উত্তমকুমারের ৮৭ নম্বর ছবি। তিনি কি নবাগত সৌমিত্রকে প্রথমে তেমন পাত্তা দেননি? আর সেই সুযোগেই বাজিমাত করে বেরিয়ে গিয়েছিলেন সৌমিত্র? তর্ক এখান থেকে শুরু হতেই পারে।

তথ্যসূত্র- সেরা পঁচিশটি সৌমিত্র নির্মাণ, অনিরুদ্ধ ধর