সত্যজিতের ‘অভিযান’ দেখে সিনেমা হলের ভিতর চিৎকার ঋত্বিক ঘটকের! সেদিন কী মারাত্মক ঘটনা ঘটেছিল?

বাঙালিদের কাছে সিনেমা মানেই একসময় যেমন উত্তম-সৌমিত্র নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল। তেমনই লড়াই চলত ঋত্বিক ঘটক ও সত্যজিৎ রায়ের ছবি নিয়ে। কে, কত বড়় পরিচালক তা নিয়ে চায়ের কাপে তর্কের ঝড় উঠত। তবে সিনেপ্রেমীদের মধ্যে এই ঝগড়া বাঁধলেও, সত্যজিৎ ও ঋত্বিক দুজনের মধ্যেই সম্পর্ক ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ।

সত্যজিতের অভিযান দেখে সিনেমা হলের ভিতর চিৎকার ঋত্বিক ঘটকের! সেদিন কী মারাত্মক ঘটনা ঘটেছিল?

|

Nov 04, 2025 | 2:29 PM

ঋত্বিক ঘটক। ভারতীয় চলচ্চিত্রের এমন এক কিংবদন্তি যাঁর জীবনটা সিনেমার চিত্রনাট্যকে হার মানাবে। ওঠাপড়া, দেশভাগের বেদনা শুধু তাঁর সিনেমাকে নয়, ঘিরে ধরেছিল তাঁর জীবনকেও। তাঁর জীবনের বয়স মাত্র ৫১। সিনেমা তৈরি করেছেন মাত্র ৮টি। অসমাপ্ত ছবির সংখ্যা ৪, বেশ কয়েকটি চিত্রনাট্যও লেখা শেষ করেছিলেন। পরিকল্পনায় ছিল প্রচুর, কিন্তু নিয়তি চিত্রনাট্যের হাতে হার মেনেছিলেন ঋত্বিক। সেই ঋত্বিকেরই আজ জন্মশতবর্ষ। কিন্তু তাঁর তৈরি ছবি আজও তীব্র আঘাত করে মানুষের মননে। সিনেমার ছাত্রদের কাছে আজও তাঁর তৈরি ছবি অন্যতম শেখার পাঠ।

বাঙালিদের কাছে সিনেমা মানেই একসময় যেমন উত্তম-সৌমিত্র নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল। তেমনই লড়াই চলত ঋত্বিক ঘটক ও সত্যজিৎ রায়ের ছবি নিয়ে। কে, কত বড়় পরিচালক তা নিয়ে চায়ের কাপে তর্কের ঝড় উঠত। তবে সিনেপ্রেমীদের মধ্যে এই ঝগড়া বাঁধলেও, সত্যজিৎ ও ঋত্বিক দুজনের মধ্যেই সম্পর্ক ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ। সিনেমা নিয়েও আলোচনা চলত দুজনের মধ্যে। তবে সত্যজিতের অভিযান ছবি মুক্তির পর, সত্যজিতের উপর মারাত্মক রেগে গিয়েছিলেন ঋত্বিক ঘটক।

কী ঘটেছিল?

ঋত্বিক ঘটক বরাবরই ছিলেন সোজাসাপটা মানুষ। প্রশংসা করলেও, করতেন খোলাখুলি। নিন্দা করলেও তা করতেন প্রকাশ্যে। কোনও কিছুতেই রাখঢাক ছিল না তাঁর। এমনকী, এই ব্যাপারে সত্যজিৎ রায়কেও ছাড়েননি তিনি।

সত্যজিৎ ও ঋত্বিকের মধ্যে বন্ধুত্বও যেমন ছিল, তেমন ছিল দ্বন্দ্বও। বিশেষ করে সিনেমার নির্মাণ নিয়ে দুই কিংবদন্তি পরিচালকের মধ্যে লড়াই লেগেই থাকত। তবে একবার এই লড়াই রীতিমতো প্রকাশ্যে চলে আসে। সত্যজিতের সিনেমা দেখতে গিয়ে সিনেমা হল থেকে মাঝপথেই বেরিয়ে গিয়েছিলেন ঋত্বিক! এই ঘটনার কথা রটতেই হইচই পড়ে গিয়েছিল ইন্ডাস্ট্রিতে।

১৯৬২ সালে মুক্তি পায় সত্যজিৎ রায়ের ছবি ‘অভিযান’। এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, ওয়াহিদা রহমান, রবি ঘোষের মতো কিংবদন্তি অভিনেতারা। দেশে-বিদেশে সমাদৃত হয়েছিল সৌমিত্রর এই ছবি। কিন্তু এই ছবি দেখে মোটেই খুশি হননি ঋত্বিক। উল্টে রেগেমেগে সিনেমা হল থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন তিনি।

হঠাৎ এমন কেন করেছিলেন ঋত্বিক?

সেই সময় এক বিনোদনমূলক ম্যাগাজিনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ঋত্বিক ঘটক জানিয়েছিলেন, আমি প্রথমে অভিযান দেখতে যায়নি। মৃণালই ছবিটি দেখে আমাকে এসে বলেছিল, অভিযানের বেশ কয়েকটি দৃশ্য অযান্ত্রিক ছবির মতো। মৃণালের কথা শুনে ছবিটা দেখতে গেলে পুরো বিষয়টা চোখে পড়ে। অসংখ্য ফ্রেম একেবারে হুবহু এক। ছবির মাঝপথে উঠে যাই। রাগ হয়েছিল। সিনেমা হলের ভিতরই রাগের চোটে চিৎকার করে ফেলেছিলাম। একমিনিটও সিনেমা হলে থাকিনি। ভেবেছিলাম সত্যজিৎকে সবটা জানাই। কিন্তু চুপ থেকেছি। আসলে পড়ে বুঝলাম, ফ্রেম নকল করলেও, অভিযান ছবিটা একেবারেই দাঁড়ায়নি। ঋত্বিক ঘটকের অযান্ত্রিক মুক্তি পায় ১৯৫৮ সালে। এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন, কালী বন্দ্যোপাধ্যায়, তুলসী চক্রবর্তীর মতো কিংবদন্তি অভিনেতারা।