ডিমের উপর লেখা সুচিত্রা সেন, শমিত ভঞ্জর পাতের দিকে তাকিয়ে চক্ষু চড়কগাছ সৌমিত্রর!

খাবার ব্যাপারেও কোন সমঝোতাতে যেতেন না মহানায়িকা। তাই সিনেমার শুটিংয়ে সুচিত্রার ব্রেকফাস্ট টু ডিনার হতো অন্যান্য শিল্পীদের থেকে অনেকটাই আলাদা।

ডিমের উপর লেখা সুচিত্রা সেন, শমিত ভঞ্জর পাতের দিকে তাকিয়ে চক্ষু চড়কগাছ সৌমিত্রর!

|

Jul 28, 2025 | 6:26 PM

শুটিং ফ্লোরে মহানায়িকার দাপট ছিল দেখার মতো। পান থেকে চুন খসলেই, মহানায়িকার মুড অফ। রেগে মেগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তিনি বসে থাকতেন মেকআপ রুমে। ম্য়াডাম সেনের এমন মেজাজের চোটে সব প্রযোজক, পরিচালকরাই তটস্থ থাকতেন। আর ছবির শুটিং যদি হত কলকাতার বাইরে আউটডোরে, তাহলে তো সুচিত্রার বায়ানাক্কা বেড়ে যেত তিনগুণ। সঠিক মেকআপ, সঠিক পোশাক না হলে সুচিত্রা হইচই ফেলে দিতে দিতেন। আর খাবার ব্যাপারেও কোন সমঝোতাতে যেতেন না মহানায়িকা। তাই সিনেমার শুটিংয়ে সুচিত্রার ব্রেকফাস্ট টু ডিনার হতো অন্যান্য শিল্পীদের থেকে অনেকটাই আলাদা। আর সুচিত্রার খাবার আলাদা করতেই গিয়ে এমন কাণ্ড ঘটেছিল দত্তা ছবির শুটিং ফ্লোরে, যা দেখে চমকে উঠেছিলেন সৌমিত্র ও শমিত ভঞ্জ!

সময়টা সাতের দশক। ভোর থেকেই মহিষাদল রাজবাড়িতে চলছে পরিচালক অজয় করের দত্তা ছবির শুটিং। কিছুটা শুটিং হতেই ব্রেকফাস্ট সময় হল। ফ্লোর ছেড়ে রাজবাড়ির একটি কোণার ঘরে নিজের মেকআপ রুমে ঢুকলেন সুচিত্রা। আর শুটিং ফ্লোরে অন্যদিকে একটা টেবিলে খেতে বসলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও শমিত ভঞ্জ। প্রোডাকশন ম্য়ানেজারকে সুচিত্রা বলেই দিয়েছিলেন, তাঁর ব্রেকফাস্টটা যেন ঘরে পৌঁছে দেওয়া হয়।

সৌমিত্রর পাতে পড়ল পাউরুটি, ডিম সেদ্ধ ও কলা। শমিতে প্লেটেও সেই একই খাবার। কিন্তু হঠাৎ সৌমিত্রর নজরে এল তাঁদের পাতের ডিমের রং আর শমিত ভঞ্জর পাতের ডিমের রং একেবারে আলাদা। তবে এখানেই চমকের শেষ নয়। শমিতের পাতে যে ডিমটি রয়েছে, তাঁর খোলসের গায়ে পেন দিয়ে লেখা সুচিত্রা সেন! হঠাৎ ডিমের গায়ে মহানায়িকার নাম দেখে হতবাক শমিত, পাশে বসে থাকা সৌমিত্রর তো চক্ষু চড়ক গাছ! ডিমের গায়ে কে লিখল সুচিত্রার নাম? কেনই বা লিখলেন? ভাবতে ভাবতে মাথা চুলকোতে শুরু করলেন সৌমিত্র ও শমিত। হঠাৎই দূর থেকে প্রোডাকশন ম্যানেজারের চিৎকার, শমিতবাবু দয়া করে ওই ডিম খাবেন না! শমিত তো আঁতকে উঠলেন। সৌমিত্রও বুঝতে পারলেন না কাণ্ডটা কী? শুটিং ফ্লোরের ডিম রহস্য তখন বেড়েই চলেছে। ম্যানেজারের চিৎকার শুনে যথাস্থানে হাজির সুচিত্রাও। সবারই চোখে মুখে কৌতুহল। ঠিক এই সময়ই শুটিং ফ্লোরেই মাঝে বোমা ফাটালেন প্রোডাকশন ম্যানেজার। শমিতকে বললেন, ওই ডিমটা ম্যাডামের জন্য। আসলে, উনি তো পোল্ট্রির ডিম খান না, তাই দেশি মুরগির ডিম আনা হয়েছিল। যাতে অন্যরা কেউ খেয়ে না নেয়, সেই কারণেই ডিমের গায়ে সুচিত্রা সেন লেখা! প্রোডকশন ম্যানেজারের কথা শুনে আরও অবাক হলেন সৌমিত্র ও শমিত। তবে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সুচিত্রা হাসতে হাসতে বলে উঠলেন, শেষমেশ ডিমের গায়ে আমার নাম উঠল, কী মজাই না লাগছে! সুচিত্রা যে বিষয়টিকে আঁতে না লাগিয়ে, রসিকতার মোড়ক দিয়েছেন, তা বোঝা গিয়েছিল তাঁর অট্টহাসিতেই।