সাল ১৯৩২, AIR-কে তখন নতুন ধাঁচে সাজানোর পরিকল্পনা। এমন কী করা যায়, যার জন্য সাধারণ মানুষ সারা রাত জেগে থাকবেন? দুর্গাপুজোর আগের একটা রাত যদি সকলকে জেগে থাকতে হয়, তবে এমন কোনও উপস্থাপনার কথা ভাবতে হবে, যা শ্রোতারা আগে কখনও ভাবেননি। তখনই উঠে আসে এক অনুষ্ঠানের কথা। নাম, বসন্তেশ্বরী। প্রতিবছর মার্চ মাসে তা অনুষ্ঠিত হত। সেই অনুষ্ঠানকেই নতুন করে সাজানোর পরিকল্পনা হয়। নাম দেওয়া হবে মহিষাসুর বধ। ১৯৩৬ সালে তা প্রথম সম্প্রচারিত হয়। মহালয়া নয়, ষষ্ঠীর দিন। ভোর ৬টায় তা অনুষ্ঠিত হত। বাণীকুমার সম্পূর্ণ চিত্রনাট্য সাজাতেন। সঙ্গে বীরেন্দ্র কিশোর ভদ্রের চণ্ডীপাঠ।
ভারতের বুকে জরুরি অবস্থা জারি হওয়ার পর সবটা পাল্টে গেল। নির্দেশ এসেছিল, পঙ্কজ মল্লিকের গান সরাতে হবে। নির্দেশ এসেছিল, নতুন করে চিত্রনাট্য তৈরি করার। দীণেশ নারায়ণ চক্রবর্তী লিখেছিলেন সেই চিত্রনাট্য। গায়ক-গায়িকাদের তালিকা বদল হল। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, লতা মঙ্গেশকর, আশা ভোঁসলে প্রত্যেকের সঙ্গেই কথা হল। এরপর এ সূত্রধরের প্রসঙ্গ। তখ উঠে এল উত্তম কুমারের নাম। যদিও তিনি প্রাথমিকভাবে নাকি এই দায়িত্ব নিতে রাজি ছিলেন না। অবশেষ তিনি রাজি হন। মাত্র ১৫০ টাকার বিনিময়ে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। অনুষ্ঠানের নাম দেওয়া হয়েছিল দেবী দুর্গতি হারিণী।
পরবর্তীতে উত্তম কুমারের এই অনুষ্ঠানের প্রবল সমালোচনা হয়েছিল। যদিও উত্তম কুমার অনুমান করেছিলেন আগেই, মজা করে নিজেই নাকি প্রশ্ন করেছিলেন– ‘মার খাব না তো?’ সেদিন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র পেয়েছিলেন বহু ফোন। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তিনি কী আদপে শুনেছেন! উত্তরে তিনি জানিয়েছিলেন– না। তবে সেদিন তিনি অনুভব করেছিলেন কত মানুষ তাঁকে ভালবাসেন। তাঁকে শোনেন। বলেছিলেন, ‘আমি প্রতিদিন ধর্মতলায় অফিসে আসি। কেউ পথে আমায় চিনতে পারেন না। তবে আজ প্রথম মনে হচ্ছে, কত মানুষ আমায় শোনেন’।