ভাস্বরের প্রথম স্ত্রী ৪৯৮-এ ফাঁসিয়েছিলেন, ঠিক কী ঘটে জানালেন অভিনেতা?

Bhaswar Chatterjee: ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়। সুদর্শন অভিনেতা। একবার ফেঁসেছেন ৪৯৮-এ ধারায়। একবার মহানায়ক উত্তমকুমারের নাতনি স্বয়ং ভাস্বরের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে চাপিয়ে দিয়েছিলেন ডিভোর্স। এতটাই তিক্ত সেই সব ঘটনা--যা আজও ক্ষমা করতে পারেন না ভাস্বর। জানেন কি, ঠিক কী-কী যন্ত্রণা ভাস্বরকে দিয়েছিলেন তাঁর দুই স্ত্রী?

ভাস্বরের প্রথম স্ত্রী ৪৯৮-এ ফাঁসিয়েছিলেন, ঠিক কী ঘটে জানালেন অভিনেতা?
ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়।
Follow Us:
| Updated on: Apr 11, 2024 | 5:12 PM

অনেকে বলবেন, ক্ষমাই পরম ধর্ম! আরে মশাই, সবাইকে ক্ষমা করে দিলে তো ঈশ্বর আর মানুষের মধ্যে কোনও তফাৎই থাকবে না। আপনি কি পেরেছেন সবাইকে ক্ষমা করতে? ফলে এরকম মানুষ কিংবা ঘটনা সবার জীবনেই আছে, যা ক্ষমাই করা যায়নি। ঠিক তেমনই খ্যাতনামীদেরও রয়েছে। নামী তারকাদের ‘ক্ষমা করিনি’ মুহূর্তের খোঁজ নিতে শুরু করেছে TV9 বাংলা ডিজিট্যাল। আজকের তারকা অভিনেতা ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়। TV9 বাংলা ডিজিট্যাল-এর সামনে মনের ঝাঁপিটা খুলে দিয়েছেন এই অভিনেতা।

ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়। সুদর্শন অভিনেতা। ৪৯টি বসন্ত পেরিয়ে আসা লোকটার (৪৯ বছর বয়স ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়ের) জীবন এক্কেবারে নিঃসঙ্গ। জানতেন? বাহ্যিকভাবে আসলে দেখে কাউকেই বোঝা যায় না যে তাঁর মনের মণিকোঠায় কত কী আড়াল রাখা আছে। ভাস্বর সেই মানুষগুলোর মধ্যে একজন, যাঁর একটা সময় বুক ফাঁটত কিন্তু মুখ ফুটত না। তিনি এক্কেবারেই ক্ষমা করতে পারেননি তাঁর দুই স্ত্রীকে। ভাস্বরের ভাষায়, তাঁকে জীবনে নিদারুণ যন্ত্রণা দিয়েছিলেন তাঁর দুই স্ত্রী। একবার ফেঁসেছেন ৪৯৮-এ ধারায়। একবার মহানায়ক উত্তমকুমারের নাতনি স্বয়ং ভাস্বরের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে চাপিয়ে দিয়েছিলেন ডিভোর্স। এতটাই তিক্ত সেই সব ঘটনা–যা আজও ক্ষমা করতে পারেন না ভাস্বর। জানেন কি, ঠিক কী-কী যন্ত্রণা ভাস্বরকে দিয়েছিলেন তাঁর দুই স্ত্রী?

সকলেই প্রায় জানেন ভাস্বরের সঙ্গে মহানায়ক উত্তমকুমারের যোগসূত্রটা ঠিক কোথায়। অভিনেতা-পরিবার থেকে না এসেও মহানায়কের পরিবারের সঙ্গে ওঠাবসা শুরু হয় ভাস্বরের। আসলে অভিনেতার সঙ্গে প্রেমের বন্ধন তৈরি হয়েছিল মহানায়কের বড় নাতনি নবমিতার। নবমিতা মহানায়কের একমাত্র পুত্র প্রয়াত গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের জ্যেষ্ঠ সন্তান (অভিনেতা গৌরব চট্টোপাধ্যায় ভাস্বরের প্রাক্তন শালাবাবু)। সেই নবমিতার সঙ্গে ভাস্বরের প্রেমের সূত্রপাত ২০১৩ সালে। ২০১৪ সালে তাঁরা বিয়ে করেছিলেন। সেই সময় টলিপাড়ায় ‘আসা যাওয়ার মাঝে’ মন ‘দেওয়া নেওয়া’ ভাস্বর-নবমিতার। তারপর একদিন সানাই বাজল ভবানীপুরের পেল্লাই বাড়িটায় (উত্তমকমারের বাড়ি)। মাথায় টোপর পরে নবমিতাকে বিয়ে করতে গেলেন বেহালার ছেলেটি!

দক্ষিণ কলকাতার নামী কোএড স্কুল সাউথ পয়েন্ট থেকে পাশ করে আশুতোষ কলেজে বায়ো সায়েন্সে স্নাতক ভাস্বর ফার্মাসি ফার্মে সেলসে চাকরি করতে-করতে কখনও কি কল্পনা করেছিলেন মহানায়কের বাড়ির জামাই হবেন? ভেবেছিলেন কি কোনওদিনও অজয় দেবগণের সঙ্গে ‘লেজেন্ড অফ ভগত সিং’-এ (২০০২ সালে মুক্তি পায় এই ছবি) অভিনয় করবেন কিংবা বিখ্যাত বাঙালি পরিচালক তরুণ মজুমদার তাঁকে একটা পাঠ দেবেন ‘আলো’ ছবিতে? কখনও ভাবেননি। অভিনয় করার পরিকল্পনাই ছিল না ভাস্বরের। কিন্তু সবটাই হল অদৃষ্টের নিয়মমাফিক। অভিনয়ে আসা হল, নবমিতার সঙ্গে প্রেমও হল। এবার প্রশ্ন উঠতেই পারে ভাস্বরের ক্ষমা না করতে পারা সংক্রান্ত প্রতিবেদনে এত গৌরচন্দ্রিকা কেন? আসলে, টুইস্ট সেখানেই। ভগবান যাঁকে ঢেলে দিলেন, তাঁর জীবন নিঃসঙ্গ করলেন নিষ্ঠুরভাবেই।

ভাস্বরের জীবনে সঙ্গীসুখ নেই। পরপর দুটো বিয়ে ভেঙেছে তাঁর। দূর থেকে যখন অনুরাগীরা তাঁকে দেখেন, মনে-মনে হয়তো বলেন, “সুদর্শন পুরুষ হয়েও, সু-অভিনেতা, লেখক হয়েও লোকটার মধ্যে এমনকী খামতি আছে যে পরপর দুটো বিয়ে ভাঙল তাঁর।”

মানুষের এই জিজ্ঞাস্য, কৌতূহলকে প্রসমিত করতে জীবনে প্রথমবার TV9 বাংলার কাছে কিছু না-বলা কথা ভাগ করে নিয়েছেন ভাস্বর। আসলে তাঁরও যে কিছু বলার আছে। কিছু জানানোর আছে। আগেই বলা হয়েছে, আমাদের এই প্রতিবেদনের মূল উপজীব্য তারকাদের ক্ষমা করতে না পারার কিছু ঘটনা। ফলে ভাস্বরের কাছে এই প্রশ্ন পাড়তেই খানিক থমকালেন তিনি। অনেক ভেবেচিন্তে বললেন, “ইন্ডাস্ট্রিতে কেউই এমন নেই, যাঁকে আমি ক্ষমা করতে পারব না। কিন্তু হ্যাঁ, আমার ব্যক্তি জীবনে অবশ্যই আছেন। নবমিতা চট্টোপাধ্যায়…। বলেই থেমে গেলেন”, অর্থাৎ ভাস্বরের প্রাক্তন স্ত্রী, উত্তমকুমারের নাতনি নবমিতা।

ভাস্বর বলেছেন, “সত্যি বলতে কী, আমি যেরকম মানুষ এবং নবমিতা যেরকম মানুষ, আমরা কেউই কিন্তু ডিভোর্সের পর মুখ দেখাদেখি বন্ধ করিনি পুরোপুরি। তবে এটাও সত্যি, আমি ওকে কোনওদিনও ক্ষমা করব না।” প্রতিবেদকের প্রশ্ন ছিল, “এতটা প্রাইভেট একটা কথা বললেন, লেখা যাবে কি?” ভাস্বরের সপাট জবাব, “লেখতে পারবেন বলেই তো বলছি…”

বুক ফাঁটত আগেই। মুখ ফুটত না। বয়স অনেক পরিণত করে দিয়েছে ভাস্বরকে। মনে দুঃখ না জমলে হয়তো এই ৪৯ বছর বয়সে এসে এতদিনের লুকিয়ে রাখা ক্ষোভ এভাবে জাহির করতেন না। বোঝাই যায়, যথেষ্টই বেগ পেয়েছেন। তবে ভাস্বরের কেন এত রাগ নবমিতার উপর? কুণ্ঠা সরিয়ে বললেন, “যে কারণেই বিয়েটা ভাঙুক না কেন, আমি খুব চেয়েছিলাম সেটাকে টিকিয়ে রাখতে। নবমিতার ইচ্ছাতেই আমাকে ডিভোর্স দিতে হয়েছে। আমি ডিভোর্স দিতে চাইনি। ফলে আমি নবমিতাকে কোনওদিনও ক্ষমাই করতে পারব না।”

নবমিতার সঙ্গে বসে আলোচনা করে ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ভাস্বর। মনে-মনে তাঁকে ক্ষমা করতে না পারলেও, তাঁর ইচ্ছেকে সম্মান জানিয়ে মুক্তি দিয়েছিলেন। মানসিক কষ্ট ছাড়া, নিজের ইচ্ছেটা চাপানো ছাড়া, ভাস্বরকে আর কোনও যন্ত্রণা দেননি নবমিতা। মিথ্যা কথা বলে তাঁকে হেনস্থাও করেননি। তাঁকে ৪৯৮ ধারায় অভিযুক্ত করেননি। তা একবাক্যে স্বীকার করলেন অভিনেতা।

অনেকেই হয়তো জানেন না, ভাস্বর সেই পুরুষ, যাঁকে একবার ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৮ ধারায় অভিযুক্ত করা হয়েছিল এবং সেটা করেছিলেন তাঁর প্রথম স্ত্রী। জীবনের সেই পর্বটা সম্পর্কে চিরটাকালই মুখ বন্ধ রেখেছিলেন ভাস্বর। নিঃসঙ্গ, নিঃসন্তান, একাকী মানুষটার আর কোনও ভয় নেই। নেই কোনও পিছুটান। অভিনয়ের পাশাপাশি কাশ্মীরের বিভিন্ন প্রেক্ষাপট নিয়ে লিখতে-লিখতে নিজের মধ্যে অদ্ভুত আত্মবিশ্বাসের জন্ম দিয়েছেন ভাস্বর। তাই মা-হারা (২০১৭ সালে মাকে হারিয়েছেন ভাস্বর) মানুষটা বাবাকে নিয়ে থাকেন তাঁর বেহালার বাড়িটায়। রাতের বেলায় নিঝুম নামলে আকাশের দিকে তাকিয়ে সে সবই চিন্তা করেন একাকী মন নিয়ে।

বিয়ে পর্ব নম্বর এক। ভাস্বরের জীবনের এই অধ্য়ায়টা এক্কেবারে তিক্ততায় পরিপূর্ণ। সেই সময় ফার্মাসিতে চাকরি করতেন ভাস্বর। বাড়ির লোকজন, বিশেষ করে মায়ের ইচ্ছা ছেলের বিয়ে দেবেন। লেখাপড়া নিয়ে মেতে থাকা ছেলেটা মায়ের ন্যাওটাও। মাতৃ- আজ্ঞা ফেলতে পারলেন না। ছানদাতলায় দাঁড়ালেন সম্বন্ধ করা মেয়েটির সঙ্গে শুভদৃষ্টি করতে। কিন্তু সংসার শুরু হতেই বুঝলেন বেলতলায় গিয়ে ভুল করেছেন। শেষে কপালে জুটল ৪৯৮ ধারাটাও। ভাস্বর বললেন, “নবমিতাকে আমি ক্ষমা করতে পারব না ঠিকই। কিন্তু আমার প্রথম স্ত্রী আমার সঙ্গে যা করেছেন, তা আমি মরণকাল পর্যন্ত মনে রেখে দেব। আমাকে ঠকিয়েছিলেন তিনি। তাঁর অন্যত্র সম্পর্ক ছিল। আমার সঙ্গে বাড়ির অমতে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছিলেন। বাড়ির কাছে আমাকে ছোট করতেই এই ৪৯৮ ধারা চাপিয়ে দেন তিনি। কিছু একটা বলে তো আমাকে দোষী করতে হবে। না হলে মুক্তি পাবে কী করে। সেই সময় আমি যে সামাজিক এবং মানসিক দুর্ভোগের মধ্য়ে দিয়ে গিয়েছিলাম, সেটা ভুলতে পারব না…”

এখন অতীতের সেই কালো অধ্যায় থেকে বেরিয়ে এসেছেন ভাস্বর। অভিনয় আর উপন্যাস লেখাকেই তাঁর সবটা মন দিয়েছেন। একাকী ভাস্বর কিন্তু জানিয়ে দিয়েছেন আর তিন নম্বর বিয়ের কথা ভাববেন না!