‘কুকুর, কুকুর, কুকুর…’ , চোয়ালের অনন্য ভঙ্গিতে তিনবার ‘কুকুর’ শব্দটা উচ্চারণ করে সিগনেচার স্টাইল তৈরি করেছেন তিনি। বাংলা বাণিজ্যিক ছবিতে ভিলেনের চরিত্রে একটা বড় সময় ‘অটোমেটিক চয়েস’ তিনিই। কৌতুকাভিনয়ই হোক অথবা সিরিয়াস চরিত্র, তাঁর জুরি মেলা ভার। বহুবার রোম্যান্টিক দৃশ্যও শুট করেছেন বিভিন্ন অভিনেত্রীর সঙ্গে। এক সময় ‘মীরাক্কেল’ কমেডি শো-এ বিচারকের আসনেও বসেছেন। কিন্তু অনেকেই হয়তো জানেন না, এই রজতাভই একসময় দারুণ সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন পর্দায়। মীরাক্কেলের এক যুগ আগে মিরাক্কেলেরই আরেক সহ-বিচারক তথা অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্রর সঙ্গে তাঁর একটি চরম সাহসী দৃশ্য সাড়া ফেলে দিয়েছিল ‘ওয়াই টু কে – সেক্স ক্রমে আসিতেছে’ ছবিতে।
এইবার নিশ্চয়ই চোখের সামনে সেই দৃশ্য়টা আপনার ভেসে উঠল। খাটের উপর ম্যাক্সি পরে শুয়ে লাস্যময়ী শ্রীলেখা। তাঁর সঙ্গে লাভ মেকিং (শারীরিক মিলন) করছেন রজতাভ। ‘ওয়াই টু কে’-তে রজতাভ অভিনীত চরিত্রটির নাম ছিল ভুতো এবং শ্রীলেখার নাম নীলা। বিছানায় শায়িত নীলার ম্যাক্সির ভিতর কার্যত ঢুকে পরে লাভ মেকিং করছিল ভুতো। ২০০০ সালে মুক্তি পায় ‘ওয়াই টু কে, সেক্স ক্রমে আসিতেছে’। সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের ছাত্র হিসাবে সেই ছবি তৈরি করেছিলেন চন্দ্রিল ভট্টাচার্য। আজ যখন তথাকথিত সাহসী দৃশ্যে অভিনয় নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয় তখন রজতাভর থেকে প্রায় দুই যুগ আগের সাহসী অভিনয়ের অভিজ্ঞতা জানতে চেয়েছিল টিভি নাইন বাংলা। শ্রীলেখা মিত্রর সঙ্গে ওরকম একটি ‘ইন্টিমেট সিন’ ক্যামেরাবন্দি করার সময় তাঁর মধ্যে ঠিক কী চলছিল? এই প্রথম না-বলা কথাগুলো বললেন রজতাভ দত্ত।
রজতাভর বয়ান:
“সময় অনেক এগিয়ে গিয়েছে। ২৪ বছর পেরিয়ে গিয়েছে। ওই বিশেষ সিনটা নিয়ে এখন আর আলাদা করে আলোচনার প্রয়োজন হয়তো নেই। কিন্তু তাও আমি সকলকে কিছু বলতে চাই। মানুষের মনে হয়তো এই নিয়ে সত্যিই অনেক প্রশ্ন জমে আছে। আমি একটা কথাই বলতে চাই, নাচের যেমন কোরিওগ্রাফি থাকে, ঘনিষ্ঠ দৃশ্যেরও তেমনই কোরিওগ্রাফি থাকে। অনেকগুলো শটে সেটাকে ভাঙা হয়। বারংবার রিহার্সাল করানো হয়। সেটে ৫০জন লোক উপস্থিত থাকে। প্রচুর আলো জ্বালানো থাকে। অন্যান্য রসের মতো আদিরসেরও কোরিওগ্রাফি থাকে। রান্না করার মতো বিষয় সেটি।”
এখানেই না থেমে তিনি আরও বলেন,’গেহরাইয়াঁ’র মতো হিন্দি ছবির ঘনিষ্ঠ দৃশ্যের শুটিংয়ের জন্য কো-অর্ডিনেটর ছিলেন। সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন অভিনেতা-অভিনেত্রীরা জানিয়েছেন, ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে শুটিংয়ের সময় ঘরে চারজন লোক উপস্থিত থাকেন। অভিনেতা-অভিনেত্রী-পরিচালক-ক্যামেরাপার্সন। ব্যাস, আর কারও অনুমতি থাকে না। ‘অ্যানিম্যাল’ ছবিতেও তৃপ্তি দিমরি সেই কথাই বলেছিলেন। কিন্তু ২৪ বছর আগে ইন্টিমেট সিনের জন্য কো-অর্ডিনেটদের প্রয়োজনীয়তা পড়েনি। ফলে ‘ওয়াই টু কে’-তেও পরিচালকের সঙ্গে আলোচনা করেই এই নির্দিষ্ট্য দৃশ্যটির শুটিং করা হয়েছিল।
সেটে ৫০জনের উপস্থিতি কতখানি অপ্রস্তুত করেছিল রজতাভকে? অভিনেতা সাফ বলেছেন, “‘ওয়াই টু কে’ ছবিটি পর্ন ছবি নয় এবং আমি পর্ন স্টার নই। এই অন্তরঙ্গ দৃশ্যটি আমার কেরিয়ারে তেমন গুরুত্বও রাখে না। তবুও বলি, ওই সিনটার শুটিংয়ের সময় সত্যজিৎ রায় ফিল্ম ইনস্টিটিউটের অনেক ছাত্র উপস্থিত ছিলেন। সব বাচ্চা ছেলে। হাতে কলমে কাজ শিখতেই উপস্থিত ছিলেন সেখানে। তুলনায় আমি এবং শ্রীলেখা ছিলাম সিনিয়র। তবে একটা কথা বারবার বলি দর্শকদের, অন্তরঙ্গ দৃশ্যের শুটিং ভীষণই ক্লিনিক্যাল এবং টেকনিক্যাল। শিহরণ জাগানোর কোনও জায়গাই নেই তাতে। অভিনেতারাও আবেগে ভেসে যান না।”