অনুভা গুপ্তা গোটা শ্যুটিং ইউনিট সামলাতেন, ‘আলোর পিপাসা’ ছবির আউটডোরে কী ঘটেছিল?

আলোর পিপাসা' ছবির আউটডোর পাটনাতে শ্যুট হবে ঠিক হল, সেই অংশের শ্যুটের সময় সন্ধা রায়, বসন্ত চৌধুরী আর কয়েক জনকে প্রয়োজন ছিল, তবে অনুভা গুপ্তার কোন দৃশ্য ছিলনা ,তবু অভিনেত্রীকে আউটডোরে প্রয়োজন ছিল ।

অনুভা গুপ্তা গোটা শ্যুটিং ইউনিট সামলাতেন, আলোর পিপাসা ছবির আউটডোরে কী ঘটেছিল?

|

Apr 29, 2025 | 6:27 PM

বাংলা সিনেমার স্বর্ণযুগের কয়কজন নায়িকা ছাড়া বহু অভিনেত্রীদের  নিয়ে খুব বেশি চর্চা হতে দেখা যায়না। যদিও তাঁদের কাজ দর্শকদের মনে পাকাপাকি জায়গা করে নিয়েছে।  এদের মধ্যে অন্যতম হলেন, অভিনেত্রী অনুভা গুপ্তা। সত্যজিৎ রায়, তরুণ মজুমদার থেকে শুরু করে নামকরা সকল পরিচালক, অভিনেতার সঙ্গে কাজ করেছেন অনুভা গুপ্তা। প্রথম জীবনে একজন মহিলা খেলোয়াড় হিসেবে নাম করে একাধিক পুরস্কার জিতে নেন। সেই সময় বিয়ে করেছিলেন ফুটবলার অনিল দে কে। সেই বিয়ে অবশ্য বেশিদিন টেকেনি। পরবর্তীকালে সিনেমায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে বিয়ে করেন অভিনেতা রবি ঘোষকে।

তরুণ মজুমদার তাঁর ‘সিনেমা পাড়া দিয়ে’ বইতে অভিনেত্রী অনুভা গুপ্তার এক অন্য রূপ তুলে ধরেছেন। প্রসঙ্গত তরুণ মজুমদারের বহু ছবিতে অনুভা গুপ্তাকে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে। উত্তম কুমারের বিপরীতেও অভিনয় করে প্রশংসা পেয়েছিলেন তিনি। তরুণ মজুমদারের লেখায় উঠে এসেছে, খুব স্নেহময়ী এক মানুষের কথা। তরুন মজুমদারের কথায়,  সেই সময় ‘আলোর পিপাসা’ ছবির কাজ চলছিল। এমনিতে অভিনয়ের পাশাপাশি  প্রোডাকশনের যাবতীয় দায়িত্ব  নিজের কাঁধে রাখতেন অনুভা গুপ্তা । প্রোডাকশনের হিসেব থেকে ট্রাঙ্কের চাবি সব নিজের দায়িত্বে রাখতেন। এই ছবির শ্যুটের সময় একটা আউটডোর এর প্রয়োজন হল। পাটনাতে শ্যুট হবে ঠিক হল, সেই অংশের শ্যুটের সময় সন্ধা রায়, বসন্ত চৌধুরী আর কয়েক জনকে প্রয়োজন ছিল। অনুভা গুপ্তা নাগেলেও হয়, কিন্তু সমস্যা হল অনুভা গুপ্ত না গেলে প্রোডাকশন কে সামাল দেবে? তাই তাঁকে যেতেই হবে। তবে সেই সময় তরুণ মজুমদার ও ইউনিটের সকলে মিলে একটা ফন্দি করলো যাতে অনুভা দির সঙ্গে একটি মজা করা যায়, শ্যুট এর জন্য রওনা হওয়ার আগের দিন পর্যন্ত তাঁকে বলা হল তাঁকে পাটনাতে প্রয়োজন নেই তাই যাওয়ার দরকার নেই। অনুভা গুপ্তা মুখ কালো করে বসে আছেন স্টুডিওতে। বড় টিফিন বক্সে পুরো ইউনিটের জন্য খাবার এনে ডেকে ডেকে খাওয়াচ্ছেন, তবে কান রয়েছে ইউনিটের আলোচনার দিকে। শেষে  চুপ না থাকতে পেরে বললেন, ‘ আমাকে নিয়ে যাবেনা ভাই?’। বেশ কিছুক্ষণ তাঁকে অন্ধকারে রেখেই বোঝানো হল তাঁর যাওয়াতে খরচ বাড়বে। শেষে অনুভা গুপ্তা প্রায় কাঁদো কাঁদো মুখে যখন বসে , তখন তাঁকে বলা হল তিনি যাচ্ছেন, না হলে প্রোডাকশন কে সামলাবে? এই কথা শুনে লাফিয়ে উঠলেন অভিনেত্রী। এর পর লোকেশনে পৌঁছে তিনতলা বাড়ি ওর কবজায় , কার শরীর খারাপ, কাকে ডেকে শ্যুটিং স্পটে পাঠাতে হবে, কাকে সময় মত চা, কফি দিতে হবে নিজেই দেখাশোনা করতেন।

অনুভা দবীর হঠাৎ চলে যাওয়াটা মেনে নিতে পারেননি পরিচালক তরুণ মজুমদার। তিনি তাঁর বইয়ে লিখেছেন, “এমন মানুষ খুব কম দেখা যায়। রবি ঘোষকে বিয়ে করে তাঁর হালদার পাড়ার সাবেকি বাড়িতে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছিলেন। ”  প্রসঙ্গত বহু ছবিতে অনুভা গুপ্তা নিজের অভিনয় প্রতিভায় দর্শকদের মুগ্ধ করেছেন। তালিকায় রয়েছে ‘অভিযান ‘, ‘স্বামী বিবেকানন্দ’, ‘সাহেব বিবি গোলাম’, ‘নায়িকা সংবাদ’, ‘হাঁসুলী বাঁকের উপকথা’, ‘বালিকা বধু’, কাঞ্চনজঙ্ঘা, ‘ছদ্মবেশে’, ‘ধন্যি মেয়ে’ আরও বহু সিনেমা।