
স্নেহা সেনগুপ্ত
গাড়ির চালক পাননি বলে সম্প্রতি সিপিআইএম যুব নেতা শতরূপ ঘোষ এবং পহেলি সাহার বিয়েতে গিয়ে উঠতে পারেননি অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র। পরের দিন বাড়ির ‘মাসি’র নাতনির বিয়েতে গিয়েছিলেন তিনি। শ্রীলেখার বিয়ে ভেঙেছে অনেকদিন আগে। তবু এই বিয়ের মরশুমে মন ভাল থাকে তাঁর। সানাইয়ের সুর কতখানি কষ্ট দেয় তাঁকে? আদৌ কি দেয়? TV9 বাংলার সঙ্গে শ্রীলেখা শেয়ার করলেন…
প্রশ্ন: একজনকে ভালবেসে বিয়ে করেছিলেন। যে কোনও কারণেই হোক, সেই বিয়ে স্থায়ী হয়নি। এই যে বিয়ের মরশুম চলছে, এত নিমন্ত্রণ পাচ্ছেন, সানাইয়ের আওয়াজ শুনছেন, নিজের বিয়ে, বিবাহ বিচ্ছেদ… এসবের কথা মনে পড়ে খারাপ লাগে?
শ্রীলেখা: ভাবতে শুরু করলে কষ্ট হয়। কিন্তু এটাও তো ঠিক, এগুলো সবই আমার গত জন্মের কথা। আমি আর এগুলো নিয়ে সেভাবে ভাবতে চাই না। একটা সময় অনেকটা ভেবে কাটিয়েছি। এখন মনে হয়, ওটা হয়নি বলে আমি অনেককিছু পেয়েছি, যেটা হয়তো পেতাম না। এই শক্তি, নিজের উপর আত্মবিশ্বাস.. এগুলো বেড়েছে। আগে কিন্তু আমি ই-মেইলও করতে পারতাম না। সব কিছুর জন্যই শিলাদিত্যর (শিলাদিত্য সান্যাল) সাহায্য চাইতাম। সেই আমিটা আর এই আমি নই। আমি পাল্টে গিয়েছি। অনেককিছু পেয়েছি। ‘হ্যাপি পেরেন্টস ডে’-তে গিয়ে আমার বাবা বলেছিলেন, ‘আমি চাই ওরা আবার একসঙ্গে থাকুক’। কিন্তু আমি বলব, আমার ঘর এখন বিশ্ব সংসার। সম্প্রতি আমার মেয়ের জন্মদিনের ভিডিয়োয় সবাই দেখেছেন আমার দেওর-ও এসেছিল। মজা করে বলেছিলাম, এক্স দেওর বলব কি না। ওরা আমাকে এখনও ‘বউদি’ বলেই ডাকে। কাগজে-কলমে একটা সই হয়েছে। কিন্তু তা বলে গোটা বিষয়টাকে তো আমি অস্বীকার করতে পারব না।
প্রশ্ন: ভাল বললেন কিন্তু…
শ্রীলেখা: প্রত্যেক সম্পর্ক আমাকে জীবনে অনেক অনুপ্রেরণা দিয়েছে। শিলাদিত্যর সঙ্গে আমার সম্পর্কটাও তাই-ই। এটা কেন হল আমার সঙ্গে, এই জিনিসটা কিন্তু আমি একেবারেই ভাবি না।
প্রশ্ন: আর বিয়ের মরশুমে দুঃখ…
শ্রীলেখা: না, না… ওই যে বললাম, বিয়ের মরশুমে আমার এখন কিছুই মনে হয় না। ওই সময়টা আমি কাটিয়ে এসেছি। আগে খুব কষ্ট হত। এই তো সে দিন আমার বাড়িতে যে মাসি থাকেন, তাঁর নাতনির বিয়েতে গিয়ে নবদম্পতিকে বলে এসেছি, সম্পর্কে স্পেস দিতে।
প্রশ্ন: বউ হিসেবে আপনি কেমন ছিলেন?
শ্রীলেখা: আমি খুবই ‘বউ-বউ’ ছিলাম। বন্ধুর চেয়ে বেশি, প্রেমিকার চেয়ে বেশি… অনেক বেশি বউ হয়ে উঠেছিলাম আমি। বাংলা সিরিয়ালের টিপিক্যাল বউ ছিলাম। লোকে আমাকে যেভাবে ফ্যান্টাসাইজ় করে, আমি কিন্তু সেটা নই। কাজ করতাম। কাজের পর বাড়ি চলে আসতাম। আমার স্বামীর বন্ধুরাই ছিল আমার বন্ধু। আমার আলাদা কোনও জগৎ ছিল না। আমার জগতে শিলাদিত্যই ছিল নিউক্লিয়াস। ওকে কেন্দ্র করেই ছিল আমার দুনিয়া।
আমি দমদম ক্যান্টনমেন্টের মেয়ে। সুতরাং, আমার চারিত্রিক গঠনে সেই জায়গায় ছোঁয়া আছে। শিলাদিত্য ছিল সাউথ ক্যালকাটার ছেলে। ওর আউটলুক ছিল অন্যরকম। জগৎও ছিল অন্যরকম। বৈবাহিক জীবনে এগুলোও প্রভাবিত করে। আমরা তো অনেক সহজে বলে ফেলি, ‘বরটা তো ভাল ছিল, বউটা কেন থাকতে পারল না’। তাই-ই বলি, অনেকরকম বিষয় আছে।
অলংকরণ: অভীক দেবনাথ