স্নেহা সেনগুপ্ত
২০১৮ সালে ছোটপর্দায় অভিনয়ের সূত্রে কেরিয়ার শুরু। মিষ্টি দেখতে একটি মেয়ে। বয়স খুবই অল্প। কথায় খানিক অবাঙালি টান রয়েছে তাঁর। কারণ বাবা ভারতীয় সেনার ডাক্তার। অনেক জায়গায় পোস্টিং ছিল তাঁর। তা-ই ছোট বয়স থেকেই বাবা-মায়ের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে ঘুরে বেড়াতে হয়েছে মেয়েকেও। বিবিধ ধরনের শিল্প, সংস্কৃতি এবং ভাষার সঙ্গে পরিচিয় হয়েছেন সেই মেয়ে। শেষমেশ কলকাতায় থিতু হয়েছেন। বেহালায় বাস। যদিও মেয়েটির ঠাকুরমা-ঠাকুরদা কলকাতাতেই ছিলেন বরাবর। মেয়েটি এখন বাংলা সিরিয়ালে চুটিয়ে অভিনয় করেন। কিন্তু ‘মিষ্টি’ মেয়ে মানেই যে হিরোইনের রোলে অভিনয় করতে হবে, তা নয় মোটেই। তিনি অভিনয় করেন ভিলেনের চরিত্রে। তাঁর ‘সুইট’ মুখ দেখে অনেক দর্শকই প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন: “এত সুইট মুখটায় কি ওই ‘শয়তানি’ মানায়?” সেটাই তো চ্যালেঞ্জ। এবং সেই চ্যালেঞ্জ ফেসবুক ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টের মতো ‘অ্যাক্সেপ্ট’ করেই সুরভী আজ বাংলা সিরিয়ালের দাপুটে ‘খলনায়িকা’।
২০১৮ সালে একটি ধারাবাহিকের সম্প্রচার শুরু হয় টেলিভিশনের পর্দায়। সেই ধারাবাহিকের নাম ‘ইরাবতীর চুপকথা’। মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন মনামী ঘোষ। ভিলেন ঝিলমের চরিত্রে কাস্ট করা হয় সুরভীকে। সেটাই ছিল তাঁর কাছে প্রথম কাজ এবং প্রথম চ্যালেঞ্জ। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই দর্শকের মনে জ্বালা ধরিয়ে দিতে পেরেছিলেন ঝিলম, থুড়ি, সুরভী। টিভির সামনে বসে থাকা, মা-মাসি-কাকিমাদের মুখ থেকে বেরিয়ে এসেছিল, “কী পাজ়ি মেয়ে রে বাবা… প্রচণ্ড বদমাইশ তো… এত ভাল দিদি ইরাবতী, তার সঙ্গে এরকম করতে পারছে ওর বোন ঝিলম, ধুর… ধুর…”
বর্তমানে সুরভী অভিনয় করছেন যিশু সেনগুপ্ত-নীলাঞ্জনা সেনগুপ্ত প্রযোজিত ‘হরগৌরী পাইস হোটেল’ ধারাবাহিকের বড় বউ মিতালীর চরিত্রে। যে বড় বউ কালো পাড় সাদা শাড়ি পরে সকলের উপর ছড়ি ঘোরায়।
ঘড়ির কাঁটায় তখন প্রায় রাত ১০টা। স্টুডিয়ো পাড়ায় সুরভীরও প্যাক-আপ হয়ে গিয়েছে। ‘দুষ্টু’ বড় বউয়ের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছে আসল সুরভী। যে সুরভী পুজোর সময় গপগপিয়ে খেয়ে ‘মুটিয়েছেন’ (সাক্ষাৎকারে নিজেই বলেছেন সেই কথা)। তাই ১০টা বেজে গেলেও আবাসনের জিমে শরীরচর্চা করবেন বলে ঠিক করেছেন। জিমের দরজা খুলে ভিতরে ঢোকার আগে TV9 বাংলার সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা দিতে শুরু করলেন সুরভী।
প্রশ্ন: লোকে বলে এত মিষ্টি মুখ, কেন মেয়েটা খলনায়িকা সাজে… এটা শুনতে ভাল লাগে?
সুরভী: আসলে ‘ইরাবতীর চুপকথা’ আমার প্রথম প্রজেক্ট। সেটায় আমার কিছু করার ছিল না। আমরা যাঁরা নতুন কাজ করতে আসি, আমাদের কাছে তেমন চয়েস থাকে না।
প্রশ্ন: …তাই বলে রাজি হয়ে গেলেন? আর একটু অপেক্ষা করলেন না কেন?
সুরভী: আমি রাজি হয়ে গিয়েছিলাম কারণ, অভিনয় করতে বড্ড ভালবাসি। সব সময় পর্দায় ভাল মেয়ে হয়েই থাকব, সে রকম বাসনা আমার ছিল না। ভাল-খারাপ-মাঝারি সব চরিত্রেই আমি অভিনয় করতে চাই। সবেতেই আমি স্বাচ্ছন্দ্য। ইরাবতীর পর ‘ভাগ্যলক্ষ্মী’তে অভিনয় করি। সেটাও ছিল খলচরিত্র। একটার পর একটা সুযোগ আসতে থাকে। আমিও গ্রহণ করে নিই। ভিলেনের চরিত্রে অভিনয় করতে চাই না, এমন কথা আমি বলিনি। কারণ, এই ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে আমি নিজেও বেশ পছন্দ করি। একমাত্র ‘গঙ্গারাম’-এ অভিনয় করতে গিয়ে ভাল একটা মানুষ হয়ে থেকেছি।
গ্র্যাফিক্স: অভীক দেবনাথ