
টলিপাড়ায় এই ঘন কালো মেঘ তো, এই রৌদ্রজ্জ্বল ঝলমলে আকাশ। ঠিক বড় পর্দায় সিনেমার মতো। যত কাণ্ড টলিপাড়ায়। ফেডারেশনের সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস এই আলোচনার মাধ্যমে ঝামেলা মিটিয়ে সবপক্ষকে এক মঞ্চে আনছেন, তো পরক্ষণেই আবার খবরের শিরোনামে, ছবি মুক্তি নিয়ে সমস্যার জট পাকিয়ে যাচ্ছে।
সম্প্রতি নবীন পরিচালক জয়ব্রত দাসের ছবি ‘অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস’ মুক্তির কথা থাকলেও তা এখন সম্ভব হচ্ছে না। এই কথা সমাজ মাধ্যমে আসার সঙ্গে-সঙ্গে দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়ে গোটা ইন্ডাস্ট্রি। সেই আবার ফেডারেশন বনাম নবীন পরিচালক। তবে এই সমস্যার সমাধানে মিটিং হয়েছে দুই পক্ষের। সেই খবর এখন সবার জানা। এর মাঝে সমাজ মাধ্যমে আরোপ-দোষারোপ চলতেই থাকছে।
এর পর কোন দিকে এগোচ্ছে ছবি মুক্তির প্রক্রিয়া, সেটা জানতেই TV9 বাংলা যোগাযোগ করেছিল ফেডারেশনের সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস আর সহ সম্পাদক সুজিত কুমার হাজরার সঙ্গে। এই বিষয়ের ক্ষেত্রে ফেডারেশনের সভাপতি ইতিবাচক মনোভাব নিয়েই দেখছেন বিষয়টি।
সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাসের কথায়, “ফেডারেশনের সঙ্গে পরিচালকের কোনও সংঘাত নেই। আলোচনা চলছে, তবে এটাও মাথায় রাখতে হবে, কলাকুশলীদের কাজ নতুন পরিচালকের স্বপ্নপূরণ করা, সৃষ্টিকে রূপ দেওয়া, কিন্তু সেটা নিজের পেটে লাথি মেরে নয়। যেসব অভিনেতা বিপ্লবী হয়ে ফেসবুকে লিখছেন, তাঁরা এই কলাকুশলীদের আগের কাজের প্রাপ্য টাকা ফেরত দিন। প্রায় দেড় বছর হয়ে গেল কলাকুশলীরা একজন প্রযোজকের প্রযোজনায় কাজ করার পর টাকা পাচ্ছেন না। তাঁর একটা বিষয় ভুললে চলবে না, কলাকুশলীদের বাড়িতেও সন্তান আছে, বৃদ্ধা বাবা মা আছেন, তাঁদের মুখে খাবার তুলে দিতে হয়, বৃদ্ধা বাবা মায়ের ওষুধ কিনে দিতে হয়। তাই নিজের স্বার্থরক্ষা করেই নতুন প্রতিভাদের স্বপ্নপূরণ করা সম্ভব। যুক্তিগ্রাহ্য ও যুক্তিসঙ্গত আলোচনাই যে কোনও সমস্যার সমাধান করতে পারে।”
ফেডারেশনের সহ সম্পাদক সুজিত কুমার হাজরার বক্তব্য, “পরিচালক বলেছেন, চার বছর ধরে ছবিটি করছেন। আমাদের প্রশ্ন তিনি কি তাঁর কোর্স শুরুর প্রথম বছর থেকেই ছবিটি বানাচ্ছেন? অন্যদিকে এই ছবির প্রযোজক ২০২৪ সালেই এই ছবি আসছে বলে পোস্টার প্রকাশ করেছিলেন ফেসবুকে। কোনটা ঠিক?”
এরপরই TV9 বাংলা ছবির পরিচালক জয়ব্রত দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তাঁর কথায়, “এখনও পর্যন্ত ফেডারেশনের সভাপতির থেকে কিছুই জানতে পারিনি। শুধু তিনি আমাদের ভরসা দিয়েছেন যে ইন্ডিপেনডেন্ট সিনেমা বা আমরা যারা ছাত্ররা ছবি বানিয়েছি, সেটা নিয়ে ওদের কোন বিরোধ নেই। আমরা স্বরূপ বিশ্বাসের সামনে বিষয়টি দেখিয়েছি এবং বলেছি যে আমরা এতদিন ধরে ছাত্ররা মিলেই সিনেমাটা বানিয়েছি। ফেডারেশনের সমস্যা ‘প্রমোদ ফিল্মস’-কে নিয়ে, যাঁরা আমাদের সাহায্য করেছেন পোস্ট প্রোডাকশনে, সমস্যাটা তাঁদের সঙ্গে। আমাদের একটাই বক্তব্য, এটা আমরা ছাত্ররা ও কিছু বন্ধুরা যারা আমাদের সাহায্য করেছে তারা বানিয়েছি, ফেডারেশনের টেকনিশিয়ানদের ব্যবহার করিনি। আমরা ছাত্র, অন্য প্রোডাকশনে কী সমস্যা হয়েছে, সেটা আমরা জানি না। কী ঝামেলা হয়েছে আমাদের জানার কথাও নয়। এই ঝামেলাটা মেটানোর দায়িত্ব প্রযোজক ও ফেডারেশনের একে অপরের সঙ্গে। এখন অবশ্য আমরা বুঝতে পারছি, ফেডারেশন নয়, আমাদের ছবির ডিস্ট্রিবিউটারই সিনেমাটা রিলিজ হতে দিচ্ছে না । আমাদের সঙ্গে ফেডারেশনের কোনও সমস্যাই নেই। এই ছবিটি ২০২১-এর নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে, এর পর টাকার অভাবে, থেমে থেমে শুট হয়েছিল। এর পর আমরা একটা পিচ ভিডিয়ো বানাই, টাকার সাহায্যের জন্য। সেই সময় ‘প্রমোদ ফিল্মস’ আমাদের সাহায্য় করে। আমাদের প্রথম বছর শেষ ও দ্বিতীয় বছরের শুরু থেকে লেখালেখি করে ছবি করার পরিকল্পনা করি। এই ছবির সবাই ছাত্র। এখন ফেডারেশনের থেকে আমাদের বলা হয়েছে, প্রযোজককে ফেডারেশনের সঙ্গে কথা বলতে হবে। আমরা জানিয়ে দিয়েছিলাম সেই দিনই যে আপনি কথা বলুন। আপনাদের ঝামেলা আপনারা মেটান। আমাদের সঙ্গে ফেডারেশনের কোন ঝামেলা নেই।” পরিচালকের অভিযোগ ছবির ডিস্ট্রিবিউটারের দিকে। তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও কোন উত্তর পাওয়া যায়নি এখনও।
এর মাঝে পরিচালক আবার একটি স্যোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন। সেই পোস্ট দেখে ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি জয় চন্দ্র চন্দ্র সহ ফেডারেশনের অধিকাংশ পদাধিকারীরা তাঁদের বক্তব্য TV9 বাংলাকে জানান। তাঁদের কথায়, “অভিনেতারা ফ্রি-তে অভিনয় করেছেন, আর্ট ডিরেকশনের মেটিরিয়াল ফ্রি-তে এসেছে, শুটিং যন্ত্রপাতি ফ্রি, লোকেশন ফ্রি-তে হয়েছে, প্রোমোশন , রেট্রো পার্টি ফ্রি, এটা আমাদের কাছে দৃষ্টান্ত। একটা কমার্শিয়াল সিনেমা পুরোটাই ফ্রি অফ কস্ট করা যায় । এরকম বললে, আমরা টেকনিশিয়ানরাও ফ্রি-তে কাজ করে দিতাম! এই মিথ্যাচারের কি কোনও প্রয়োজন আছে?”
সব মিলিয়ে যেটা উঠে আসছে, এই ছবির প্রযোজনা সংস্থা ‘প্রমোদ ফিল্মস’ ফেডারেশনের সামনাসামনি হয়নি এখনও। অন্যদিকে ছবির ডিস্ট্রিবিউটারের উপর দোষারোপ করছেন পরিচালক। আবার ফেডারেশনের কলাকুশলীদের স্বার্থরক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে পরিচালকদের পক্ষেই কথা বলছেন। এই ঘটনার প্রবাহ ঠিক কোন দিকে এগোয়, সেটা জানার জন্য নজর রাখতে হবে।