ভবানীপুর কার? দিদির ‘পাড়ায়’ পদ্ম ফোটাতে পারবেন রুদ্রনীল?
ভবানীপুরকে হাতের তালুর মতো চেনেন মমতা। তৃণমূলের জমানায় আলাদা করে গুরুত্বও বেড়েছে ভবানীপুরের। ২০১১ সালে মহাকরণ দখলের ৬ মাসের মধ্যে উপ-নির্বাচনে এই ভবানীপুর থেকেই জিতে এসেছিলেন 'বিধায়ক' মমতা।
গত বিধানসভা নির্বাচনে বঙ্গযুদ্ধের হটস্পট ছিল ভবানীপুর। এ বার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভবানীপুর ছেড়ে নন্দীগ্রাম থেকে দাঁড়ানোয় স্বাভাবিক ভাবেই কেন্দ্রবিন্দু বদলেছে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর ‘পাড়া’ থেকে কি ফোকাস সরতে পারে? বিজেপির প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর তো আরওই নয়। এতদিন তৃণমূল ঘনিষ্ঠ অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ মুখোমুখি হবেন প্রবীণ তৃণমূল নেতা শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের। ‘সাতে-পাঁচে’ না-থাকা অধুনা গেরুয়া রুদ্র-নীল যে ভোটের উত্তাপ বাড়িয়ে দিলেন, সে কথা বলাই বাহুল্য।
ভবানীপুরকে হাতের তালুর মতো চেনেন মমতা। তৃণমূলের জমানায় আলাদা করে গুরুত্বও বেড়েছে ভবানীপুরের। ২০১১ সালে মহাকরণ দখলের ৬ মাসের মধ্যে উপ-নির্বাচনে এই ভবানীপুর থেকেই জিতে এসেছিলেন ‘বিধায়ক’ মমতা। চোদ্দোর লোকসভা নির্বাচনে তাঁর কেন্দ্রে পিছিয়ে পড়েছিল তৃণমূল। কিন্তু ২০১৬ সালে বিরোধীদের মাত করতে বিশেষ ঘাম ঝরাতে হয়নি মমতাকে। এ বার তাঁর ঘোড়া, দীর্ঘদিনের সহকর্মী শোভনদেব। এমন কেন্দ্রে কেন রাজনীতিতে আনকোরা রুদ্রনীল? টি-টোয়েন্টির ফাটকা নাকি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, তা নিয়ে আলোচনা সবমহলে।
প্রসঙ্গত রুদ্রনীলের কেরিয়ারে বারবার ফিরে এসেছে রাজনীতির নানা রং। কখনও তাঁর হাতে শোভা পেয়েছে লাল পতাকা, কখনও তিনি ঝুঁকেছেন সবুজে, আবার সাম্প্রতিক কালে তিনি বেছে নিয়েছে গেরুয়া। টিকিট পাওয়ার পর সে প্রসঙ্গে রুদ্রনীলের বক্তব্য, “বামপন্থীরা বামপন্থার কথা বলেন। কিন্তু রাজনীতি করতে এসে সেই বামপন্থার কথা ভুলে গিয়েছেন তাঁরা। যে কারণে আমরাও দল ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলাম। আমরা পালটাইনি। সব মানুষের উপকার হবে, এটা ভেবেই গিয়েছিলাম। তৃণমূলের ওপর আস্থা তৈরি হয়েছিল। তারপর ২-৩ বছর পর দেখা গেল তৃণমূল উলটো জিনিস করা শুরু করেছে। সকলে আশাহত হয়ে গেলেন। দুর্নীতি হচ্ছে, কিন্তু সরকার কোনও শাস্তি দিচ্ছে না।”
২০১১ সালে তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর থেকেই শাসকদলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে তাঁর। ২০১৪ সালের পর সেই ঘনিষ্ঠতা আরও গাঢ় হয়। পশ্চিমবঙ্গ বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ পর্ষদের সভাপতির পদে বসানো হয় তাঁকে। ২০১৫ সালে রাজ্য সরকারের জনপরিষেবা অধিকার কমিশনারও করা হয়েছিল রুদ্রনীলকে। যদিও রাজ্যের তৎকালীন কারিগরি শিক্ষামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাসের সঙ্গে তাঁর বিরোধ, প্রশ্নফাঁস ইত্যাদি নানা ঘটনায় চাপের মুখে পড়তে হয় তাঁকে। সেই পদ থেকে অপসারণও করা হয় পরে। ২০১৯-এ লোকসভা নির্বাচনের পর থেকেই রুদ্রনীলের তৃণমূল ঘনিষ্ঠতায় ছন্দপতন হয়। ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে তাঁর অনুপস্থিতি সেই ‘বেসুরো’কে আরও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল।
এর পরেই এ বছরের গোড়াতেই পাকাপাকি ভাবে বিজেপিতে যোগদান করেন অভিনেতা। প্রথম থেকেই প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে বারেবারেই শোনা যাচ্ছিল তাঁর নাম। সূত্রের খবর, ঘনিষ্ঠ মহলে রুদ্রনীল জানিয়েছিলেন হাওড়ার শিবপুর যেহেতু তাঁর জন্মস্থান, তাই টিকিট পেলে সেখান থেকেই ভোটে লড়তে চান তিনি। তবে শেষমেশ টিকিট পেলেন ভবানীপুরের।
নিজের জয় নিয়ে আত্মবিশ্বাসী রুদ্রনীল। যদিও তৃণমূল সরকারের প্রতি তাঁর কটাক্ষ, “তিনি দাবি করেছিলেন, পশ্চিমবঙ্গে ৯৮% উন্নয়ন তিনি করে দিয়েছেন। অথচ পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষিকরা রাস্তায় বসে সাঁতরে তাঁর বাড়ি উঠে যান। শিক্ষিত বেকার যুবকরা চাকরির ধর্নায় বসে থাকেন। চাকরি চাইতে গেলে মার খান, মারা যান। ২০১৯ সালে ভবানীপুরের মানুষ ফলাফল জানিয়ে দিয়েছেন। মমতা নিজেরই কেন্দ্রে ঘর বানাতে পারেননি। নিজেরই কেন্দ্রের মানুষের আস্থাভাজন হয়ে উঠতে পারেননি। নন্দীগ্রামের সাহায্যে মুখ্যমন্ত্রী হয়ে পরবর্তীকালে নন্দীগ্রামের দিকে ফিরেও তাকাননি। নন্দীগ্রামের মানুষও আশাহত হয়েছেন।”
টলিউডের বিভাজন নীতি নিয়ে তাঁর বক্তব্যেও রুদ্রনীল বিঁধলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই। তাঁর কথায়, “মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী টলিউডকে গুছিয়ে দিয়েছিলেন। এটার মধ্যে কোনও মিথ্যে নেই। কিন্তু তিনি পালটে গেলেন ২০১৬-১৭ সালে। সেখানে ওঁর দল চালান অন্য কেউ। পার্টি লবিবাজির জায়গা তৈরি করে ফেলেছে।” প্রতিপক্ষ, প্রবীণ তৃণমূল নেতা শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য, “নিজের কৃতকর্মের অভিশাপ যাতে তাঁকে (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) সহ্য করতে না হয়, সেই বিষটা পান করার জন্য শোভনদেববাবুর ভালমানুষির সুবিধা উনি নিলেন।”
রুদ্রনীলের জনপ্রিয়তা নাকি পাড়া সেন্টিমেন্ট– ভবানীপুরের এই হাইভোল্টেজ ম্যাচে কী হতে চলেছে, তা জানা যাবে আগামী ২ মে। তবে খেলা যে ভালই হবে, তা নিশ্চিত।