নয়া জ্বরে (New Infection) কাবু কলকাতা শহর (Kolkata)। অদ্ভূত ধরনের জ্বরে আক্রান্ত ঘিরে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে বিশিষ্ট চিকিত্সক মহলেও। বর্ষার জেরে নানা রোগ ও সংক্রমণের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ফের নিম্নগামী। তবুও জ্বরের তাপমাত্রা (High Fever) বাড়ছে চর-চর করে। কোভিড টেস্ট (COVID Test) করলেও পজিটিভও হচ্ছে না। ডেঙ্গি বা ম্যালেরিয়া টেস্টেও কোনও সুরাহা মিলছে না। এ এক নয়া নন-কোভিড পরিস্থিতিতে কাবু তিলোত্তমা। টানা ৭-১০ দিন ধরে এই ভাইরাল ইনফেকশেন থাকছে বলে মত চিকিত্সকদের। জ্বর উঠছে প্রায় ১০৩ থেকে ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত। এমন অদ্ভূতুরে রোগে আক্রান্ত হয়েছেন দু-একজন নয়, শয়ে শয়ে এই নয়া জ্বরে ভুগছেন ।
সাধারণত অল্প বয়স্ক ছেলেমেয়ে ও শিশুদের মধ্যে এই অত্যাধিক জ্বরের প্রকোপে পড়ছেন বলেই জানা গিয়েছে। বয়স্করাও জ্বরে পড়ছেন, কিন্তু সংখ্যায় ততটা নয়। বেশ কিছু ডাক্তারদের মতে, সংক্রমণের জেরেই এই জ্বরের মাত্রা অত্যাধিক বেড়ে যাচ্ছে। যাদের ইমিউনটি বেশ শক্তিশালী তারা এই প্রচণ্ড জ্বরের হাত থেকে বেঁচে যাচ্ছেন। জ্বর থাকছে টানা ৩-৪দিন। তারপর কমে গেলেও শরীরে নেমে আসছে প্রবল ক্লান্তি ও দুর্বল ভাব। অনেকের ধারণা, ইনফ্লুয়েঞ্জা এ, রাইনোভাইরাস. ডেঙ্গি ও এইচ১এন১ এইসব সংক্রমণও মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পায় এই মরসুমে। তবে বিশিষ্ট চিকিত্সকদের মতে, কোভিডের থেকেও রেসপাইরেটরি ভাইরাসের প্রকোপ যেমন ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ইনফ্লুয়েঞ্জার মত সংক্রমণ যেমন প্যারা-ইনফ্লুয়েঞ্জা ও অর্থোমিক্সো ভাইরাস এগুলি খুব কম টেস্ট করা হয়। সাধারণ সর্দি ও কাশির মতনই এগুলির চিকিত্সা করা হয়। তবে এখন উদ্বেগের হল, রোগীরা যখন আসছেন, তখন তাদের গায়ে ১০৩ থেকে ১০৪ ডিগ্রি জ্বর উঠে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন। টানা ২ থেকে ৩দিন প্রবল জ্বরে ভুগতে থাকছেন তাঁরা। প্যারাসিটামলের ডবল ডোজের পরেও জ্বর কমছে না। তারপর কিছুদিন পর নিজে থেকেই জ্বর কমে যাচ্ছে। কিন্তু অনেক রোগীর জানিয়েছেন এক সপ্তাহ পর ক্লান্তি ও দুর্বলভাব কেটে যাচ্ছে। জ্বর ও তার সঙ্গে থাকা কাশির প্রকোপও কমে যাচ্ছে ।
হাই-ফিভারে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, সংক্রমণের জেরে প্রবল জ্বর আসার পর ফের চাঙ্গা হতে ২ সপ্তাহের মত সময় লাগছে। কিন্তু মাঝের কয়েকদিন জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে গাঁটে গাঁটে ব্যথা, গলা ব্যথা, কাশিতে আরও শরীর দুর্বল করে দেয়। শুধু তাই নয় গলায় ও জিভে ফোস্কার মত ঘা হয়ে অবস্থা আরও কাহিল করে দিচ্ছে। এমন সমস্যার পড়ছেন যে সব রোগীরা, তাদের মধ্যে বেশিরভাগই টিনেজার ও ১২ বছরের নীচে থাকা শিশুরা।
কলকাতার বিশিষ্ট চিকিত্সক অরিন্দম বিশ্বাস জানিয়েছেন, ‘এই মরসুমে এমন ভাইরালের প্রতোপ বেশি দেখা যাচ্ছে। সংক্রমণের পরেই প্রবল জ্বর হচ্ছে অধিকাংশ রোগীর। এগুলির মধ্যে অধিকাংশই মরসুমের ভাইরাসের প্রকোপের কারণেই হচ্ছে। প্রত্যেক বছরই সংক্রমণের জেরে মানুষের বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ দেখা যায়। ব্যাকটেরিয়া ও সংক্রমণের সেরা ওষুধ হল বিশ্রাম ও ঠিক সময়ে প্যারাসিটামল সেবন করা। প্রত্যেক বয়সের মানুষই ইনফেকটেড হতে পারেন।’
IPGMER-এর প্রফেসর দীপ্তেন্দ্র সরকার জানিয়েছেন, ‘টাইফয়েড, ম্যালেরিয়া ও স্ক্রাব-টাউফাসের থেকে একেবারে আলদা এই ভাইরাল সংক্রমণ। গোষ্ঠীর মধ্যে অত্যন্ত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা রয়েছে। ম্যালেরিয়ার মত তীব্র জ্বর আসছে রোগীদের। এমনকি সেই তাপমাত্রা ১০৪ ডিগ্রি পর্যন্তও উঠে যাচ্ছে। অন্যদিকে টাইফয়েডের মত ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের উপসর্গও রয়েছে।। বিশেষ করে মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই প্রবল জ্বর। কলকাতায় ফের ডেঙ্গির প্রকোপ শুরু হচ্ছে। দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি করেছে।’ ড অরিন্দম বিশ্বাসের মতে, ‘এমন প্রবল জ্বর এলে প্রথমেই যেটা করা দরকার, তা হলে ঠান্ডা জলে স্পঞ্জ করা। তিরিশ মিনিটের মধ্যে জ্বর আয়ত্তে আনা যাবে। শিশুদের যদি প্রবল জ্বর দেখা যায় তাহলে কোনও কিছু ভাবার দরকার নেই, সারা শরীর বিশেষ করে মাথায় ঠান্ডা জলের কাপড় দিয়ে মুছিয়ে দিতে হবে। কোল্ড স্পঞ্জ দিয়ে জ্বরকে অন্তত আয়ত্তে আনা সম্ভব।’
কোভিডের দাপট গত কয়েক বছরের তুলনায় অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। তবুও কোভিড নিয়ে দুশ্চিন্তা কাটছে না মানুষের। অন্যদিকে, বর্ষার মরসুমে অনেক ভাইরাস একসঙ্গে সক্রিয় হয়ে ওঠে। এমন প্রবল জ্বরের প্রকোপ দেখে অনেকেই একে ডেঙ্গি বা ম্যালেরিয়া ভেবে ভুল ভাবছেন। টেস্ট করলেও কোভিড পজিটিভ ধরা পড়ছে না। শহরজুড়ে যে জ্বর ছড়াচ্ছে তার ধরন ডেঙ্গির মত হলেও তা ডেঙ্গি মোটেই নয়। আবার অনেকে কোভিড হয়েছে ভেবে ভুল করছেন। বর্তমানে মাইল্ড কোভিড পরিস্থিতি। তার সঙ্গে ফের ঘুরে দাঁড়িয়েছে অন্যান্য সংক্রমণগুলিও।
আমরি হাসপাতালের বিশিষ্ট চিকিত্সক জয়দীপ ঘোষ জানিয়েছেন, ‘ভাইরাল ফিভারে আক্রান্তদের ১০২ থেকে ১০৩ ডিগ্রির মত জ্বর উঠে যাচ্ছে। কোভিডের সময়কালেও এত বেশি মাত্রায় জ্বর চর চর করে উঠে যেতেও দেখা যায়নি। কোভিডকালে এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়ার টেস্ট পর্য়ন্ত করাচ্ছেন। কারণ উভয় সংক্রমণের জেরেও প্রবল জ্বর হওয়ার উপসর্গ দেখা যায়।’
সৌজন্যে TOI