
কথায় আছে, চিকিৎসক ভগবানের দূত। আর সেই চলে আসা প্রবাদকেই ফের যেন উজ্জ্বল করে তুললেন দক্ষিণ কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালের একদল চিকিৎসক। চিকিৎসক শৈবাল চক্রবর্তী, পুনম গুহ ভাজে, তিস্তা বাগচী, লোকেশ পাণ্ডে, অম্লান চৌধুরী, সৌম্য , নরেশ ও সঞ্জয়ের হাতে শিশুটি ফিরে পেল সুস্থ ও নতুন জীবন। হাসি ফুটল পরিবারের মুখে।
ঠিক কী ঘটেছিল?
শিশুটি জন্মের পর থেকেই মারাত্মক শ্বাসকষ্টে ভুগছিল। সঙ্গে সঙ্গে তাকে রেসপিরেটরি সাপোর্টে রাখা হয়। কিন্তু হঠাৎ দেখা যায় শিশুর পেটটি ফুলে যাচ্ছে। শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা আরও বাড়তে থাকে। শিশুটির এক্সরে করলে দেখা যায়, শিশুর পেটের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে বায়ু জমেছে। এই অবস্থায় আর দেরি না করে শিশুটিকে দক্ষিণ কলকাতার একটি আধুনিক এনআইসিইউ (NICU)–সমৃদ্ধ বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়, যেখানে শিশুটি ভর্তি হয় চিকিৎসক লোকেশ পাণ্ডে এবং শৈবাল চক্রবর্তী–এর তত্ত্বাবধানে।
শিশুটি ভর্তি হওয়ার পরপরই পেটের চাপ কমানোর জন্য জরুরি ভিত্তিতে বিছানার পাশে একটি ড্রেন বসানো হয়। চিকিৎসকরা প্রথমে শিশুটিকে স্থিতিশীল করেন, এরপর জরুরি ভিত্তিতে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অস্ত্রোপচারটি পরিচালনা করেন ডা. সাইবল চক্রবর্তী ও ডা. পুনম গুহা ভাজে, অ্যানেস্থেসিয়া সাপোর্ট দেন চিকিৎসক তিস্তা বাগচী। অস্ত্রোপচারের সময় দেখা যায়—শিশুটির সম্পূর্ণ পাকস্থলীর দেয়াল ফেটে গিয়েছে, যা অত্যন্ত বিরল ঘটনা। চিকিৎসকরা পাকস্থলীর ছিদ্রটি সেলাই করে মেরামত করেন। অস্ত্রোপচারের পর শিশুটি ভয়াবহ সংক্রমণের (সেপ্টিসেমিয়া) মধ্যে দিয়ে যায়, তবে চিকিৎসক লোকেশ পাণ্ডে এবং অম্লান চৌধুরীর নেতৃত্বে মেডিকেল টিম লড়াই চালিয়ে যান। এনআইসিইউ–এর চিকিৎসক সৌম্য, নরেশ ও সঞ্জয়–এর অক্লান্ত পরিশ্রম এবং নার্সিং স্টাফরা এই লড়াইয়ে বড় ভূমিকা পালন করেন। ধীরে ধীরে শিশুটি সুস্থ হতে থাকে, খাওয়ানো শুরু হয়, এবং সম্পূর্ণভাবে ফিড গ্রহণ করতে সক্ষম হয়। এই মুহূর্তে শিশুটি সুস্থই রয়েছেন এবং তাঁকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই ঘটনাটি প্রমাণ করে—সঠিক সময়ে, সঠিক সিদ্ধান্ত ও নিবেদিত চিকিৎসক দলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা জীবন ফেরাতে পারে অলৌকিকভাবে।