জলই জীবন। শরীরের জন্য সবচেয়ে বেশি যেটি দরকার তা হল জল। শরীরের ওজনের প্রায় ৫০ থেকে ৭০ শতাংশই থাকে এই রায়ায়নিক উপাদানের ভরপুর জল। যেটি ছাড়া জীবন প্রায় অচল। শরীরের প্রতিটি কোষ, টিস্যু ও অঙ্গগুলি সঠিকভাবে কাজ করার জন্য জল একান্তই প্রয়োজন। প্রস্রাব, ঘাম ও মলত্যাগের মাধ্যমে শরীর থেকে বর্জ্য বের করে দেয়। জল শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে। হাড়ের জয়েন্টগুলিতে লুবরিকেশন বা তৈলাক্তকরণ সরবরাহ করতে ও মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে।
শরীরে প্রতিদিন কতটুকু জলের প্রয়োজন?
একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির প্রতিদিন কতটা পকিমাণ জল পান করা উচিত? সাধারণত ব্যক্তির স্বাস্থ্য, সক্রিয়তা ও কোথায় রয়ছেন, তার ভিত্তিতে জলের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। কোনও একটি সূত্র ধরে সকলের জল পানের নিয়ম হয় না। তবে শরীরের প্রয়োজনীয়তা অনুসারে আপনার প্রতিদিন কতটা পরিমাণ জল খাওয়া উচত, তার একটি অনুমান করা যেতে পারে।
মায়ো ক্লিনিকের মতে, একটি নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুতে বসবাসকারীর গড়, সুস্থ প্রাপ্তবয়স্কদের প্রয়োজন:
পুরুষদের জন্য দিনে প্রায় ১৫.৫ কাপ (৩.৭লিটার) তরল
মহিলাদের জন্য দিনে প্রায় ১১.৫ কাপ (২.৭ লিটার) তরল
জল ছাড়াও পানীয় ও খাদ্য থেকে তরল শরীরের মধ্যে প্রবেশ করে। দৈনিক তরল গ্রহণের প্রায় ২০ শতাংশ সাধারণত খাবার থেকে আসে। আর বাকিটা আসে জল থেকে। তাহলে প্রতিদিন ৮গ্লাস জল পান করার কথা বলা হয় কেন, এমন প্রশ্নও মাথায় ঘুরপাক খেতে পারে।
আপনি যদি নিয়মিত ব্যায়াম করেন বা এমন কোনও কাজে অংশে নিয়েছেন, যেখানে আপনার ঘাম হওয়া স্বাভাবিক। তাহলে শরীরের চাহিদাপূরণের জন্য আপনাকে আরও জল পান করতে হবে। যদি গরম বা আর্দ্র আবহাওয়ায় বা ভারতের মতো গ্রীষ্মকালীন জলবায়ুতে বাস করেন, যেখানে গ্রীষ্মকালে গরমর প্রভাব চরম, সখানে অতিরিক্ত ঘাম আপনাকে ডিহাইড্রেশনের দিকে নিয়ে যেতে পারে। আর তাই এব্যাপারে সতর্ক থাকুন।
অন্যদিকে ডায়েরিয়ার মতো স্বাস্থ্যের সমস্যা তৈরি হলে রোগীকে রিহাইড্রেশন থেরাপির পরামর্শ দেন চিকিত্সকরা। এছাড়া মূত্রাশয় সংক্রমণ,মূত্রনালী ও কিডনিতে পাথরের চিকিত্সার জন্য জল খাওয়ার প্রয়োজন হয়।
কিডনি বা লিভারের সমস্যা থাকলে জল খাওয়ার পরিমাণ নিয়ে চিকিত্সকদের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কিছু কিডনি রোগ বা চিকিত্সা চিকিত্সা প্রোটোকল অনুযায়ী জল গ্রহণ নির্ধারণ করে।
শুধু জল নয়, অন্যান্য পানীয় গ্রহণ করা উচিত
জল ছাড়াও দুধ, ফলের রস,ভেষজ চায়ের মতো পানীয়গুলি বেশিরভাগই জল দিয়ে গঠিত। এমনকি ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় যেমন কফি, সোডাতেও প্রতিদিনের জল গ্রহণের মতো অবদান রাখে। ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করতে ও শরীরে প্রয়োজনীয় পানীয়ের জন্য জলই সেরা উপাদান।
খুব বেশি জল পান করলে কী হতে পারে?
অনেকসময় দেখা যায়, জল খাওয়ার বা অন্যান্য় পানীয় খাওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা করা হয়। আপনি যদি খুব বেশি জল পান করেন, তাহলে কিডনির উপর খুব বেশি চাপ পড়তে থাকে। রক্তের মধ্যে সোডিয়ামের উপাদান পাতলা হয়ে গেলে হাইপোনাট্রোমিয়া দেখা যায়। এমনকি মানুষের মৃত্যু পর্যন্তও হতে পারে। কখনও কখনও কিছু অসুস্থতা ও ওষধের জন্যও কিডনি বিকল, কনজেস্টিভ হার্ট ফেইলিওর, মূত্রবর্ধক, অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস এবং ব্যথার ওষুধ হাইপোনেট্রেমিয়া হতে পারে।
আরও পড়ুন: Health Tips: জল পান করার পরও তৃষ্ণার্ত বোধ করেন? এটি কোনও রোগের লক্ষণ নয় তো, জেনে নিন