মেরেলিন মনরো, গুরু দত্ত, জিয়া খান, পরভিন বাবি, দিব্যা ভারতী, সুশান্ত সিং রাজপুত—তালিকা লম্বা। এই জনপ্রিয় মুখের সারি হারিয়ে গিয়েছে। কারণ হিসেবে উঠে এসেছে আত্মহত্যার তত্ত্ব। সুশান্ত বা দিব্যার মতো কোনও-কোনও মৃত্যুর তদন্ত এখনও আদালতের দরজায়। কিন্তু মৃত্যুর কারণ হিসেবে আত্মহত্যা উঠে এসেছে জোরালো ভাবে। ‘আত্মহত্যা’—এই শব্দের অভিঘাত বোঝা নেহাত সহজ কাজ নয়।
ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের তথ্য অনুযায়ী, সারা বিশ্বে প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন ব্যক্তি আত্মহত্যা করেন। প্রতি বছর আত্মহত্যার সংখ্যা গড়ে আট লক্ষ। সেপ্টেম্বর ‘সুইসাইড প্রিভেনশন মান্থ’। আর ১০ সেপ্টেম্বর ‘ওয়ার্ল্ড সুইসাইড প্রিভেনশন ডে’। ঘটা করে ক্যালেন্ডারের নির্দিষ্ট দিন রয়েছে ঠিকই। কিন্তু তাতে কি সচেতনতা বাড়ছে? প্রিয়জনের আত্মহত্যা রুখতে ঠিক কতটা তৎপর আমরা? অথবা নিজের মনের গহনেও সেই প্রবণতা কি হঠাৎ-হঠাৎ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে, যা এড়িয়ে যাই আমরা? সুইসাইডের বিভিন্ন কারণের মধ্যে অন্যতম কারণ ডিপ্রেশন। ২০১৪-য় ৬৩ বছর বয়সে ডিপ্রেশনের কারণে আত্মহত্যা করেন কমেডিয়ান রবিন উইলিয়ামস। অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শককে হাসানো যাঁর পেশা ছিল, তাঁর মনের গভীরে কী এমন দুঃখ লুকিয়ে ছিল, যে কারণে চরম পথ বেছে নিয়েছিলেন? আর সেই কারণ জানা সম্ভব নয়। কিন্তু মৃত্যুর আগে তাঁর আচরণে কি কোনও অস্বাভাবিকতা ফুটে উঠেছিল? যা দেখে তাঁর নিকটজনেরা আগাম ক্ষতির আঁচ পেতে পারতেন? কেউ আত্মহত্যার কথা ভাবছেন কি না, তা কি আগে থেকে বোঝা যায়?
মনোচিকিৎসক সুজিত সরখেল বললেন, “আমাদের ভাষায় একে ‘সুইসাইড ওয়ার্নিং সাইন’ বলে। সেই সব লক্ষণ যে কোনও সাধারণ মানুষের মধ্যে দেখলে তার চারপাশের মানুষকে সতর্ক হতে হবে। বুঝতে হবে, তিনি হয়তো আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেও নিতে পারেন। এর মানে এই নয়, যাদেরই ওয়ার্নিং সাইন রয়েছে তাঁরা সকলে এই পথ বেছে নেবেন। কিন্তু স্ট্রং পসিবিলিটি থাকে। এই সাইনগুলো দেখলেই ইন্টারফেয়ার করতে হবে।”
কেমন সেই লক্ষণ? সুজিত ব্যখ্যা করলেন, “মৃত্যুর কথা কেউ যদি মুখে প্রকাশ করেন, সতর্ক হতে হবে। যা আমরা সব সময় ইগনোর করে দিই। যে মৃত্যুর কথা বলে, সে মৃত্যুর পথ বেছে নেয় না। এটা সবথেকে বড় মিথ। অবসাদগ্রস্ত, ফ্রাস্ট্রেশনে থাকা কেউ যদি বলেন, ‘মরে গেলেই ভাল হয়’ অথবা ‘বাঁচার ইচ্ছে নেই’, সে সব কথা যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হবে।” সহমত পোষণ করে পেরেন্টিং কনসালট্যান্ট পায়েল ঘোষ বললেন, “মৃত্যু চেতনা নিয়ে কথা বলা, ‘কী আর হবে বেঁচে থেকে’, বেঁচে থাকার থেকে মৃত্যুর রোমান্টিসিজম নিয়ে কথা বলা, খুব অ্যালার্মিং।”
নেশা করার ধরন দেখেও আত্মহত্যার প্রবণতা রয়েছে কি না, তা বোঝা যায় অনেক সময়। সুজিত বললেন, “যদি কেউ হঠাৎই নেশা করার পরিমাণ বাড়িয়ে দেন—ছেলেদের ক্ষেত্রে অ্যালকোহল, মেয়েদের ক্ষেত্রে স্লিপিং পিল হতে পারে—আগে তিনি হয়তো সোশ্যাল ড্রিঙ্কার ছিলেন, এখন নেশার পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছেন, তাহলে সতর্ক হতেই হবে।”
উৎসাহ হারিয়ে ফেলা ‘অ্যালার্ম কল’ হতে পারে বলে জানালেন সুজিত। “কেউ যদি কিছুতেই আর উৎসাহ না পান..। কাজ, বিষয় আশয়, সিনেমা দেখতে ভাল লাগত, আর লাগছে না…। নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছেন, খুব গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত। ইয়ং ছেলে হয়তো খেলত বন্ধুদের সঙ্গে, বন্ধুরা বলছে ফোন ধরছে না। বাড়ির লোকেদেরও বলছে ‘একা থাকতে দাও’, সতর্ক হতে হবে”, বললেন সুজিত।
গুটিয়ে নেওয়ার লক্ষণ এক সময় নিজে অনুভব করেছিলেন সঙ্গীতশিল্পী ইমন চক্রবর্তী। ডিপ্রেশনের জন্য প্রফেশনালের সাহায্য নিয়েছিলেন। তা স্বীকার করতে দ্বিধা বোধ করেন না। এমনকি মন খারাপ হলেই চিকিৎসকের সাহায্য নেওয়া উচিত, এই সচেতনতা প্রসারের চেষ্টাও করেন। ইমন বললেন, “আমার ক্ষেত্রে যেটা হয়েছিল, আমার আর কিছু করতে ভাল লাগত না। নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলাম। সেটা এখনও হয়। অনেক কিছু ভাবি। এত ভাবতাম না আগে। কাউন্সিলিংয়ের বীজমন্ত্র কানে আছে। এই সময়টা আসলে কী ভাবে নিজেকে বের করে আনতে হয়, তা এখন আমি জানি। নিজেকে ভাল থাকতে হবে। কোনও কিছুর জন্য আমি নিজেকে কষ্ট দেব না, ওটাই আসল, ওটাই সত্যি। যখন কেউ দেখছে নিজের ভিতরটা শেষ হয়ে যাচ্ছে, ইউ ক্যান টিচ ইওরসেল্ফ, ওটা থেকে বেরোতে হবে। নিজে ভাল না থাকলে কিছু হতে পারে না।”
নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার আরও এক অর্থ হতে পারে নিজের প্রিয় বিষয়ের আসক্তি থেকে মুক্তি। কী ভাবে বুঝবেন? সুজিত বললেন, “কেউ যদি হঠাৎই বিষয়-আশয় নিয়ে ভাবা শুরু করেন, তা হলে ভাবনার বিষয়। কিছু বাচ্চাকে দেখেছি। দু’টো পুতুল, চারটে খেলনা রয়েছে, সেগুলো ডায়েরিতে লিখছে, ‘এ জিনিসটা একে দিয়ে দেব’, ‘ওই জিনিসটা ওকে দেব’ বা দেওয়া শুরু করে দিয়েছে। বড়দের ক্ষেত্রে যদি এই ভাবনা আসে, ‘ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট দেখে নিতে হবে’, ‘সম্পত্তি গুছিয়ে ফেলতে হবে’। নিজের জিনিস কেউ কাউকে দেওয়া শুরু করেছে দেখলে সেটা স্ট্রং ওয়ার্নিং সাইন।”
দ্য ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর সুইসাইড প্রিভেনশন (IASP) ২০০৩-এ প্রথম একটি নির্দিষ্ট দিন হিসেবে সচেতনতা প্রসারের উদ্দেশে ওয়ার্ল্ড সুইসাইড প্রিভেনশন ডে পালন করতে শুরু করে। কো-স্পন্সরের দায়িত্বে ছিল ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেন্টাল হেলথ এবং ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন। আলাদা করে একটি নির্দিষ্ট পালনের মূল কারণ ছিল সুইসাইডাল বিহেভিয়ার অর্থাৎ আত্মহত্যাপ্রবণ আচরণ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ, কারণ অনুসন্ধান। আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যক্তির কোন-কোন আচরণ অলক্ষ্যে থেকে যাচ্ছে, তা নিয়ে আলোচনা এবং আত্মহত্যা রুখতে বিভিন্ন নীতি প্রয়োগ।
আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যক্তির আচরণ আগে থেকে দেখে তাঁর মনোভাব বোঝা কি সম্ভব? পায়েল ব্যখ্যা করলেন, “আত্মহত্যা একদিনে আসে না। বিভিন্ন পর্যায় থাকে। ডিপ্রেশনের পর্যায়। ছোট-ছোট বিষয়ে ভাল না-লাগা। অ্যাডোলেসন্স-এর বাচ্চাদের বেশি হয়। মুড সুইংয়ের মাত্রাটা বেড়ে যায়। ছোট-ছোট মান-অভিমান অনেক সময় ধরতে পারি না আমরা অর্থাৎ অভিভাবকেরা। বডি শেমিং হয়েছে হয়তো, বন্ধুরা হয়তো পাবলিকলি অন্য রকম কথা বলছে। সেটা ওদের কাছে মন খারাপের কারণ। অভিভাবকরা বলেন, ‘ওরকম হয়েই থাকে’।”
পাশাপাশি অনিচ্ছাকৃতভাবে সন্তানের ওপর বাড়তি স্ট্রেস কখনও চাপিয়ে দেন বাবা-মায়েরাই। পায়েল বললেন, “আমরা (অভিভাবকেরা) বাচ্চাদের বলি, ‘তুই দারুণ করছিস, আরও ভাল করতে হবে’। অভিভাবক ভাবছেন এটা এনকারেজমেন্ট, কিন্তু সন্তানের কাছে ভার হয়ে যাচ্ছে। ডিপ্রেশনের একটা পর্যায়ে সব কিছুতেই হঠাৎ করে কান্না পায়। সামান্য কথায় কেঁদে ফেলছেন কেউ। ফ্রিকোয়েন্ট ক্রাইং সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয়।”
যিনি আত্মহত্যা করলেন, তিনি যে সব ক্ষেত্রে পরিকল্পনা করে কাজটা করলেন, এমনও নয়। এ প্রসঙ্গে অভিনেত্রী তথা মনোবিদ সন্দীপ্তা সেন বললেন, “আত্মহত্যা এমন একটা জিনিস, ডিপ্রেশন ছাড়াও হয়। ইমপালস থেকে করে ফেলেন অনেকে। ইমপালসিভ হয়ে স্টেপ নিয়ে নিচ্ছেন। ঝগড়া হয়েছে বা আপসেট হয়ে অথবা ভয় দেখানোর জন্যও অ্যাটেম্প্ট নিচ্ছেন। সেটা সাকসেসফুল হয়ে যাচ্ছে। এ সব ক্ষেত্রে হয়তো তিনি নিজেকে শেষ করতে চাইছেন না।”
যাঁরা আত্মহত্যার কথা মুখে প্রায়ই বলেন, তাঁরা কি আসলে নিজেরা সাহায্যই চান? যা সরাসরি বলতে পারেন না? সন্দীপ্তার ব্যাখ্যা, “অনেক সময় দেখা যায় যাঁরা বলছেন, ‘জীবন শেষ করতে দিতে চাই’, তাঁরা আসলে চাইছেন অন্য মানুষ তাঁকে হেল্প করুক। যিনি বলে ফেলছেন, তাঁর ক্ষেত্রে এখানেই অনেক সময় মোটিভ কমে যায়। আবার কেউ প্রকাশ করেন না। কিন্তু হয়তো অনেক দিন ধরে ডিপ্রেশনে রয়েছেন। যদি ভিতরে-ভিতরে এই ভাবনাটা আসতে থাকে, ‘জীবন থেকে নিষ্কৃতি পেতে চাই’, যদি কাউকে বলে উঠতে না-পারেন, জীবনের প্রতি অনীহা কাজ করে, শুরুর দিকেই সাইকোলজিক্যাল হেল্প নেওয়া দরকার। তাহলে চরম পর্যায় পর্যন্ত হয়তো পৌঁছবে না।”
সুইসাইড সারভাইভার যাঁরা অর্থাৎ সুইসাইড করতে গিয়ে ফিরে এসেছেন, তাঁদের দেখে, পর্যবেক্ষণ করে সেল্ফ-অ্যাসেসমেন্ট করেছেন সুজিত। সেখানে তিনি দেখেছেন, আত্মহত্যা দু’ধরনের মানুষ করেন। সুজিতের কথায়, “এক ধরনের লোকের ইমপালসিভ অ্যাটেম্প্ট। ঝোঁকের বসে ক্ষণিকের মধ্যে করে বসেন। মরবে বলে করছেন তা নয়, যা হচ্ছে সবটাই আউট অব অ্যাঙ্গার। আর একদল অনেক দিন ধরে ভেবে-ভেবে হঠাৎ সেই পথটা বেছে নেন। এই ধীরে-ধীরে এগোনোর সময় অ্যাম্বিভ্যালেন্স (দ্বৈত বোধ) কাজ করে। দাঁড়িপাল্লায় ওজন মাপার সময় যেমন দু’দিকে দোলে। এক দিকে, ‘আমি বেঁচে থেকে লাভ কী’। আর অন্য দিকে, ‘আমি মরে গেলে এদের কী হবে।’ দোটানা। এর মধ্যেই উল্টো দিকের পাল্টাটা ভারী হয়ে যায়।”
ওয়ার্ল্ড সুইসাইড প্রিভেনশন ডে-র অন্যতম বার্তা, আত্মহত্যা অবশ্যই আটকানো সম্ভব। সেই উপলক্ষ্যে প্রত্যেক বছরই কিছু থিম বেছে নেওয়া হয়। যেমন Suicide Prevention: One World Connected বা Take a Minute, Change a Life। ২০২০-র থিম ছিল Creating Hope Through Action। এই অ্যাকশন শিশুদের ক্ষেত্রে কেমন হতে পারে? পায়েল বললেন, “অভিভাবক হিসেবে ভাল শ্রোতা হতে হবে। কোনওরকম জাজমেন্টাল স্টেটমেন্ট দেওয়া যাবে না। সন্তান প্রথমে এন্ট্রি দেবে না। বলবে হয়তো, ‘না বলব না’। কিন্তু অভিভাবক যদি সমস্যা বোঝেন, এন্ট্রি নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যেতেই হবে। নিজে না পারুন, প্রফেশনালকে দিয়ে চেষ্টা করুন। ঠাণ্ডা মাথায় হ্যান্ডল করতে হবে। সন্তানের সঙ্গে ফেস-টু-ফেস কনট্যাক্ট জরুরি। বিভিন্ন রকম কমিউনিটি সার্ভিস বাচ্চাকে আপাদমস্তক বদলে দিতে পারে। আমাদের দেশে তার অভ্যেস নেই।”
কমিউনিটি সার্ভিস অর্থাৎ সন্তানকে ঠিক কেমন ধরনের কাজে আপনি নিযুক্ত করতে পারেন? পায়েল শেয়ার করলেন, “প্যানডেমিকে আন্ডার-প্রিভিলেজড বাচ্চাকে পড়াতে পারে আপনার সন্তান। তখন কিন্তু অন্যের কাছে সে ভ্যালুড পার্সন। অন্যকে সার্ভ করছে অর্থাৎ পরিষেবা দিচ্ছে। কমিউনিটি সার্ভিসে তাকে অংশগ্রহণ করিয়ে বাঁচার ইচ্ছেটা তৈরি করতে হবে। আমরা অনেক সময় বলি, আত্মহত্যা হল কী করে, বুঝলাম না। বোঝা যায় সব সময়ই। আমরা ভাল করে পর্যবেক্ষণ করি না। কারণ আমাদের প্রত্যাশা থাকে, বাচ্চা এটাই করবে। প্রত্যেকে স্বতন্ত্র। জেনারালাইজ করা যাবে না। এমন হলে অঘটন ঘটতেই থাকবে। নিউক্লিয়ার ফ্যামিলিতে অনেক রকম টানাপোড়েনের মধ্যে বাচ্চাদের চলতে হয়। সেগুলো ছোট থেকেই তাদের মনে গভীর প্রভব ফেলতে পারে। রিপেয়ারিংয়ের কাজ আমাদের।”
এই অ্যাকশন প্রিয়জন, বন্ধু, পরিচিতের ক্ষেত্রে কেমন হতে পারে? সন্দীপ্তা বললেন, “কারও যা স্বভাব সেই বিহেভিয়ারাল প্যাটার্নে চেঞ্জ দেখা গেলে জিজ্ঞেস করা উচিত। তাকে স্পেস দেওয়া, বোঝা। কেউ ডিপ্রেসড থাকলে কোনও কিছু বারবার বললে ইরিটেটিং লাগতে পারে। আবার হয়তো সে চাইছেও আপনি জিজ্ঞেস করুন। একটু এমপ্যাথি ক্রিয়েট করতে হবে, সেনসেটিভ হতে হবে। কয়েক সেকেন্ডের থটটা যদি ব্রেক করা যায়, তাহলে ওই স্টেপ নেওয়া থেকে আটকানো যেতে পারে। যদি কাউকে ডিপ্রেসড মনে হয়, তা হলে তাকে একা থাকতে দেওয়া যাবে না। তার সঙ্গে থাকতে হবে। সে হয়তো চাইবে না কেউ থাকুক। কিন্তু তাকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য থাকা দরকার।”
এই প্রবণতা নিজের ক্ষেত্রে বোঝা বোধহয় সবথেকে কঠিন। সুজিতের মতে, “নিজেদের মধ্যে সুইসাইডাল থট কখন বাড়াবাড়ি পর্যায় পৌঁছচ্ছে, সেটা বুঝতে পারার সেরা উপায়, মৃত্যু চিন্তা যদি আসে। সেটা নর্মাল নয়। দ্বিতীয় হল, আমার বাঁচার কারণ আমার মৃত্যুর কারণকে ওভারটেক করতে পারছে কি পারছে না—সেটা দেখা। যখনই মনে হবে এটা দোদ্যুল্যমান, বাঁচার কারণ শিথিল হয়ে আসছে, তখনই ঝুঁকি নিয়ে লাভ নেই। প্রফেশনাল হেল্প নিতে হবে। আত্মহত্যার চিন্তা কিন্তু রোগের লক্ষণ। যতই রোম্যান্টিসাইজ করা হোক, এটা আলটিমেটলি একটা মানসিক রোগের লক্ষণ। এটা নিয়ে পৃথিবীতে কোথাও কোনও বিজ্ঞানে কোনও রকমের সংশয় নেই।”
মন খারাপ থেকে মন ভাল—এই জার্নিটা নিজের জীবন দিয়ে প্রত্যক্ষ করেছেন ইমন। তাঁর কথায়, “নিজেকে ক্ষুদ্র মনে হতে পারে। আবার কেউ সেটা মনে করাতেও পারেন। মনে হতে পারে, আমার আর কিছু দেওয়ার নেই, কিছু করার নেই। আসলে জীবনে খারাপ থাকাটাও থাকে। ভাল থাকাটাও থাকে। সবটা শেষ হয়ে গেলে ভালটা আর পাওয়া হয় না। ভালটা পেতে গেলে বেঁচে থাকতে হবে তো…।
অলঙ্করণ: অভিজিৎ বিশ্বাস
আরও পড়ুন, WORLD SUICIDE PREVENTION DAY: অপরাধ নাকি নয়? বিভ্রান্তি ‘আত্মহত্যার চেষ্টা’-র আইনে