
নয়াদিল্লি: আমাদের শরীরকে সচল রাখতে এবং বেঁচে থাকতে খাবারের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু যখন আমরা সেই খাবারটি সঠিকভাবে খাই না, তখন উপকারের বদলে ক্ষতিই বেশি হয়। যোগ, প্রাণায়াম এবং আয়ুর্বেদকে জনপ্রিয় করার পাশাপাশি, যোগগুরু বাবা রামদেব সুস্থ জীবনযাত্রার জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কেও মানুষকে সচেতন করেন।
রামদেব বলেন, “একটি ছোট মোবাইলকেও মানুষ সাবধানে ব্যবহার করে, লক্ষাধিক বা কোটি টাকার গাড়ি বা মেশিনের যত্ন নেয়। কিন্তু এই বিশ্বের সবচেয়ে সংবেদনশীল, সবচেয়ে দামি এবং অমূল্য যন্ত্র হল আমাদের শরীর।” সঠিক খাদ্যাভ্যাসই শরীরকে সুস্থ রাখে, তাই খাওয়ার সময় সতর্ক থাকা উচিত।
বাবা রামদেবের মতে, বেশিরভাগ মানুষই জানেন না যে কীভাবে লিভার, কিডনি, অন্ত্র, অগ্ন্যাশয়, ফুসফুস, হৃদযন্ত্র, মস্তিষ্ক, থাইরয়েড, প্রস্টেট, জরায়ু, ডিম্বাশয়, প্রজনন অঙ্গ, কঙ্কাল এবং সংবহনতন্ত্রকে ভালো রাখা যায়। আর এর কারণ হল, তাঁরা খাবার খাওয়ার সময় প্রয়োজনীয় বিষয়গুলির প্রতি মনোযোগ দেন না।
এই ভুলগুলি এড়িয়ে চলুন
বাবা রামদেব ব্যাখ্যা করেন যে, যখন আমরা সঠিক উপায়ে খাবার খাই না, তখন আমরা শরীরের বাত-পিত্ত-কফ প্রকৃতির বিপরীতে যাচ্ছি। ফলস্বরূপ, বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। তিনি মানুষের মধ্যে আত্ম-যত্নের প্রতি অবহেলা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। কীভাবে নিজের সঙ্গে সঠিক ব্যবহার করতে হয়, শরীর, মন এবং আত্মাকে পরিচালনা করতে হয়—তা জানা জরুরি।
খাবারের ক্ষেত্রে যে ভুলগুলি এড়িয়ে চলা উচিত:
পেট ভরানোর জন্য খাবেন না: বাবা রামদেব মাইন্ডফুল ইটিং বা সচেতনভাবে খাওয়ার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, অনেকে কেবল পেট ভরানোর জন্য খান, আবার কেউ কেউ শুধু পুষ্টির জন্য। অথচ, খাবার এমন হওয়া উচিত যা শরীরের প্রয়োজন মেটায় এবং পুষ্টিও সরবরাহ করে। এতে মানসিক চাপও থাকে না।
তাড়াহুড়ো করে খাওয়ার ভুল: অনেকেই কেবল স্বাদের জন্য তাড়াতাড়ি খাবার খেয়ে ফেলেন। বাবা রামদেব এই অভ্যাসটি অবিলম্বে পরিবর্তনের পরামর্শ দেন, কারণ এটি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। খাবার সবসময় ধীরে ধীরে এবং ভালোভাবে চিবিয়ে খাওয়া উচিত। এতে শরীরে পুষ্টির সঠিক শোষণ হয় এবং হজমও ভালোভাবে হয়।
অতিরিক্ত খাওয়া উচিত নয়: কিছু লোক প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি খেয়ে ফেলেন; যতক্ষণ না মন ভরে যায় ততক্ষণ খেতেই থাকেন। স্ট্রেস, উদ্বেগ বা বিষণ্নতায় ভোগা ব্যক্তিরাও অনেক সময় অতিরিক্ত খেয়ে ফেলেন। মিষ্টি খাওয়ার সময় দুই-চারটি লাড্ডু, জিলিপি বা এক-দুই বাটি হালুয়া খেয়ে অনেকেই ওভার ইটিং করেন। বাবা রামদেবের মতে, অতিরিক্ত খাওয়া খাবারের ১০ শতাংশের বেশি শরীর সংরক্ষণ করতে পারে না, বাকিটা শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। যদিও এটি ওজন অনেক বাড়িয়ে দেয় না, তবুও এটি ক্ষতিকারক। তাই পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত।
সময়মতো না খাওয়ার অভ্যাস: আধুনিক জীবনযাত্রায় মানুষের খাদ্যাভ্যাসেও পরিবর্তন এসেছে। বাবা রামদেব নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন। সময়মতো খাবার না খেলে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা দেখা দিতে পারে, কারণ এটি শরীরের প্রকৃতির বিরুদ্ধে কাজ করে। খাবারের প্লেটে এক ভাগ কাঁচা (যেমন সালাদ), এক ভাগ তরল এবং এক ভাগ রান্না করা খাবার থাকা উচিত। যদি মিষ্টি খেতেই হয়, তবে তা মাত্র ১-২ চামচ গ্রহণ করা উচিত।