গড়ে ৪ সংবাদকর্মীর মৃত্যু হচ্ছে প্রতিদিন, তবু ‘কোভিড যোদ্ধার’ সম্মান দিতে নারাজ বহু রাজ্য
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিকদের 'কোভিড যোদ্ধার' সম্মান দিলেও অনেক রাজ্য তা দেয়নি। ফলে 'ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার' হিসেবে স্বাস্থ্যকর্মী ও পুলিশরা টিকা পেয়ে গেলেও এখনও দেশের বহু রাজ্যের সাংবাদিকরাই অবহেলিত
কলকাতা: করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের করাল ছায়া যেন কিছুতেই কাটতে চাইছে না। সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রতিদিনই কাছের মানুষকে হারানোর দুঃসংবাদ পাচ্ছেন কেউ না কেউ। স্বজনহারাদের সংখ্যাটা অনুমান করাও সম্ভব নয়। একই ছবি পশ্চিমবঙ্গের সাংবাদিক মহলেও। বাংলার সংবাদ মাধ্যমে একাধিক অপূরণীয় ক্ষতি করে দিয়েছে এই ভাইরাস। অতিমহামারি পরিস্থিতিতে প্রাণের পরোয়া না করে গ্রামে-শহরে ছুটে করোনা নিয়ে বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছেন অসংখ্য সংবাদকর্মী। সেই কথা মাথায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিকদের ‘কোভিড যোদ্ধার’ সম্মান দিয়েছেন। তেলেঙ্গানা, উত্তর প্রদেশ, ওডিশা, উত্তরাখণ্ডের মতো অনেক রাজ্যও তা দিয়েছে। কিন্তু এখনও অনেক এমন রাজ্য রয়েছে যেখানে সাংবাদিকদের সেই তকমা দেওয়া হয়নি। ফলে ‘ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার’ হিসেবে স্বাস্থ্যকর্মী ও পুলিশ-সহ বহু ক্ষেত্রের কর্মীরা টিকা পেয়ে গেলেও এখনও দেশের বহু রাজ্যের সাংবাদিকরাই অবহেলিত।
সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউতে কমপক্ষে ৩০০ সাংবাদিক এখনও পর্যন্ত করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন। যাদের মধ্যে বহু নামজাদা সাংবাদিক রয়েছেন, মৃত্যু হয়েছে অনেক নাম না জানা সাংবাদিকেরও। সেই গবেষণাতেই প্রকাশিত, এপ্রিল মাসে প্রতিদিন গড়ে ৩ জন সাংবাদিক গোটা দেশে প্রাণ হারিয়েছেন। মে মাসে সেই সংখ্যাটা বেড়েই হয়েছে দিনপ্রতি ৪।
বিশ্বস্ত সূত্রে খবর, এপ্রিল মাস থেকে মে মাসের ১৬ তারিখ পর্যন্ত শুধু শহরাঞ্চলেই ২৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, শুধুমাত্র এই মৃত্যুগুলিই নথিভুক্ত হয়েছে। এ বাদে এমন বহু সাংবাদিকই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন যাদের মৃত্যু সাংবাদিক হিসেবে নথিবদ্ধই হয়নি। ফলে বাস্তবে সংখ্যাটা যে আরও ভয়াবহ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। করোনার প্রথম ঢেউ সংবাদ মহলের যতটা না ক্ষতি করেছিল, দ্বিতীয় ঢেউ তার তুলনায় কয়েকগুণ বেশি আঘাত হেনেছে সাংবাদিক মহলে।
মৃত সংবাদ কর্মীদের মধ্যে শামিল রয়েছেন মাঠে-ঘাটে ছুটে কাজ করা সাংবাদিক, চিত্রগ্রাহক, ক্যামেরা পার্সন, উপস্থাপক, এমনকি ডেস্কে কাজ করা কর্মীরাও। করোনার বিষাক্ত ছোঁয়া রেয়াত করেনি কোনও স্তরের সংবাদ কর্মীকেই। নিউজ চ্যানেল হোক, সংবাদপত্র বা ফ্রিল্যান্স সংবাদ কর্মী, সবাইকেই কোপে নিয়েছে করোনা।
আরও পড়ুন: দুয়ারে রেশন: অতিরিক্ত কমিশন-সহ একাধিক দাবি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে ডিলার সংগঠনের চিঠি
গবেষণায় আরও উঠে এসেছে, মৃত সাংবাদিকদের মধ্যে ৫৫ শতাংশই সংবাদপত্রের কর্মী। নিউজ চ্যানেল ও ডিজিট্যাল মাধ্যমের কর্মীদের ২৫ শতাংশ রয়েছেন এই তালিকায়। বাকি ২০ শতাংশ ফ্রিলান্স সাংবাদিক। সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ৪১-৫০ বছরের মধ্যে থাকা সংবাদ কর্মীদের। মৃত্যুর হার ৩১ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানেই রয়েছেন ৬১-৭০ বছরের মধ্যে থাকা বর্ষীয়ান সাংবাদিকরা। মৃতদের মধ্যে ২৪ শতাংশ রয়েছেন এই তালিকায়। ৩১-৪০ বছরের মধ্যে ১৫ শতাংশ এবং ৫১-৬০ বছরের মধ্যে ১৫ শতাংশ এবং ১৯ শতাংশ সাংবাদিকের মৃত্যু হয়েছে।
আরও পড়ুন: করোনা চেন ভাঙতে পারবে লকডাউন, কী হতে চলেছে বাংলার?