
জয়পুর: চোখে-মুখে সারল্য। গরিব পরিবারের মেয়ে। বাড়িতে বেকার ভাই। এমন মেয়ের জন্য পাত্র চাই। সেই সরল-সাদাসিধে যুবতীর ফাঁদে পড়েই সর্বস্বান্ত হলেন ২৫ জন পুরুষ। এক-দুই জন নয়, পঁচিশ জনকে বিয়ে করে গয়নাগাটি, টাকা নিয়ে চম্পট দেন ওই যুবতী। শেষমেশ ওই ‘লুঠেরি দুলহন’-কে ধরতে ফাঁদ পাতল পুলিশ। আর সেই ফাঁদেই পা দিয়ে ধরা পড়লেন ওই যুবতী। মধ্যপ্রদেশের ভোপাল থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে রাজস্থানের সোয়াই মাধোপুরের পুলিশ। ধৃতের নাম অনুরাধা পাসওয়ান।
পুলিশ জানিয়েছে, বছর বত্রিশের অনুরাধার একটি গ্যাং রয়েছে। ওই গ্যাংয়ের সদস্যরা তাঁর জন্য পাত্র খুঁজত। নিজেদের ঘটক হিসেবে পরিচয় দিত। যুবতীর ছবি নিয়ে বিভিন্ন পাত্রের কাছে যেত। বলা হত, যুবতী খুবই গরিব। অসহায়। বাড়িতে বেকার ভাই রয়েছে। আর্থিক সমস্যার জন্য বিয়ে হচ্ছে না। ঘটকালির জন্য পাত্রপক্ষের কাছ থেকে ২ লক্ষ টাকাও নিত।
মন্দির কিংবা ছেলের বাড়িতে সমস্ত রীতি মেনে বিয়ে করতেন ওই যুবতী। তারপরই তাঁর খেলা শুরু হত। কয়েকদিনের মধ্যেই নিজের ব্যবহারের পাত্র ও তাঁর পরিবারের মন জয় করতেন অনুরাধা। তারপর একদিন খাবারের ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে সবাইকে খাইয়ে অজ্ঞান করতেন। বরের বাড়ি থেকে টাকা,গয়না এবং মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে চম্পট দিতেন। এভাবেই এক শহর থেকে অন্য শহরে গিয়ে এই ফাঁদ পাততেন অনুরাধা।
গত ২০ এপ্রিল সোয়াই মাধোপুরের বিষ্ণু শর্মা নামে এক যুবক অনুরাধাকে বিয়ে করেন। বন্ধু ও পরিজনদের উপস্থিতিতেই সব রীতি মেনে তাঁদের বিয়ে হয়। পাপ্পু মীনা নামে এক ঘটক তাঁদের বিয়ে ঠিক করে দেন। এর জন্য পাপ্পুকে ২ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন বিষ্ণু। বিয়ের ২ সপ্তাহের মধ্যে ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকার গয়না, নগদ ৩০ হাজার টাকা ও একটি ৩০ হাজার টাকার মোবাইল নিয়ে চম্পট দেন অনুরাধা।
সবকিছু নিয়ে অনুরাধা চম্পট দিয়েছেন বুঝতে পেরেই থানায় অভিযোগ দায়ের করে বিষ্ণুর পরিবার। বিষ্ণু বলেন, “আমার একটি হাতে ঠেলাগাড়ি রয়েছে। আমি বিয়ের জন্য ঋণ নিয়েছি। ধার করে কেনা মোবাইল নিয়েও বউ পালিয়েছে। আমি ভাবতেও পারছি না, সে আমার সঙ্গে প্রতারণা করবে।”
অনুরাধা যেদিন চম্পট দেন, সেদিনের কথা তুলে ধরে বিষ্ণু বলেন, “সেদিন কাজের পর বাড়ি ফিরতে রাত হয়েছিল। খাওয়ার পরই ঘুমিয়ে পড়ি। আমি সাধারণত খুব বেশি ঘুমোই না। কিন্তু, সেদিন অঘোরে ঘুমিয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল, কেউ ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দিয়েছে।” বিষ্ণুর মা-ও তাঁর পুত্রবধূর এই কাজে হতবাক।
বিষ্ণুর পরিবার অনুরাধার যেসব নথি পুলিশকে দেয়, তদন্তের পর দেখা যায় সেইসব নথি ভুয়ো। এরপরই অনুরাধাকে ধরতে ফাঁদ পাতে পুলিশ। এক পুলিশ অফিসার বলেন, “এক কনস্টেবলকে পাত্র সাজানো হয়। তাঁর জন্য পাত্রীর খোঁজ করতেই অনুরাধার গ্যাং সেই ফাঁদে পা দেয়।” শেষপর্যন্ত ভোপাল থেকে অনুরাধাকে গ্রেফতার করা হয়।
প্রতিবেদনটি সর্বভারতীয় এক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে লেখা।