এবার সুখোই থেকে মৌমাছির পালের মতো হামলা করবে ঝাঁকে ঝাঁকে ALFA S Swarm Drone
যে সমস্ত শত্রুঘাঁটি খালি চোখে দেখতে পাওয়া যায় না, বা যেখানে পৌঁছনো মুশকিল, এমন সব জায়গায় চোখের পলক ফেলার আগে পৌঁছে যাবে শ'য়ে শ'য়ে ড্রোন। একসঙ্গে, একই সময়ে ধ্বংস করতে পারবে একাধিক হাই প্রোফাইল গার্ডেড টার্গেট।

মৌমাছির পাল দূর থেকে যেমন দেখতে লাগে, তেমনই ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ন্ত ড্রোন আছড়ে পড়বে শত্রুঘাঁটিতে। একটা দুটো নয়, সুখোই বা রাফালে থেকে একসঙ্গে গুচ্ছ গুচ্ছ বিস্ফোরক বোঝাই ড্রোন এবার আছড়ে পড়বে ভারতের শত্রুদের উপর। যে সমস্ত শত্রুঘাঁটি খালি চোখে দেখতে পাওয়া যায় না, বা যেখানে পৌঁছনো মুশকিল, এমন সব জায়গায় চোখের পলক ফেলার আগে পৌঁছে যাবে শ’য়ে শ’য়ে ড্রোন। একসঙ্গে, একই সময়ে ধ্বংস করতে পারবে একাধিক হাই প্রোফাইল গার্ডেড টার্গেট। এর নজর এড়িয়ে বাঁচতে পারবে না ভারতের শত্রুরা। ভারতীয় বায়ুসেনা দ্রুতই এই অত্যাধুনিক ওয়েপন সিস্টেম হাতে পেতে চলেছে। যার পোশাকি নাম ALFA-S বা Air-Launched Flexible Asset (Swarm), সংক্ষেপে আলফা-এস।
কী এই আলফা-এস?
আলফা-এস এক ধরণের জটিল, আধুনিক ওয়েপন সিস্টেম যেখানে লঞ্চার থেকে একই সঙ্গে একগুচ্ছ আনম্যানড এরিয়াল ভেহিক্যাল (UAV) লঞ্চ করা যাবে। এই ড্রোনগুলিকে এমনভাবেই প্রোগ্রাম করা হয়েছে যাতে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে পারে। আর লঞ্চারও হতে হবে তেমনই। বায়ুসেনা চায় সুখোই-৩০ এম কে আই, রাফালে বা তেজসের মতো যুদ্ধবিমান থেকে এই ড্রোন হামলা চালাতে। ড্রোনগুলি এক থেকে দু মিটার লম্বা হবে। থাকবে দুটি করে ‘ফোল্ডিং উংইস’ বা ডানা। ডানা মুড়ে ফেললে ড্রোনগুলি এক একটি কৌটোর মধ্যে ড্রোনগুলি পুরে ফেলা যাবে। ব্যাটারি চালিত ড্রোনগুলি প্রতি ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার গতিবেগে উড়তে পারে।
কীভাবে কাজ করবে আলফা-এস?
আলফা-এস-কে একটি গ্লাইডার প্যাডের সঙ্গে জুড়ে বানানো হয়েছে। এক একটি গ্লাইডারে ৪ থেকে ১২টি করে আলফা ড্রোন থাকবে। এক একটি সুখোই বা রাফালে অন্তত পাঁচটি করে প্যাড বহনে সক্ষম। গ্লাইডারের পাল্লা ৫০-৭০ কিলোমিটার। গ্লাইডার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর ড্রোনগুলি আরও অতিরিক্ত ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরের টার্গেটকে নিশানা করতে পারবে। সবমিলিয়ে, বহু দূরের টার্গেটকেও আলফা নিশানা করতে সক্ষম। সেই সঙ্গে ধোঁকা দিতে পারবে শত্রুর ডিফেন্স মেকানিজমকেও।
কারা বানাচ্ছে আলফা-এস?
হিন্দুস্তান এয়েরোনটিক্স লিমিটেড (HAL) ও বেঙ্গালুরুর স্টার্ট আপ সংস্থা নিউ স্পেস রিসার্চ অ্যান্ড টেকনোলজিস মিলে বায়ুসেনার জন্য এই নতুন অস্ত্র বানাচ্ছে। তদারকি করছে DRDO। Swarm Drone তৈরি হলে শত্রুদের এমন কোনও বায়ুসেনা ঘাঁটি থাকবে না যেখানে ভারত হামলা চালাতে পারবে না। অত্যাধুনিক ডিফেন্স সিস্টেম একটি বা দুটি ড্রোনকে গুলি করে নামিয়ে দিলেও বাকি ড্রোন নির্ভুল নিশানায় হামলা চালাবে। ফলে ভবিষ্যতে লস্কর বা জইশ জঙ্গিদের ঘাঁটি ধ্বংস করতে পাইলট চালিত যুদ্ধবিমান পাঠানোর দরকার পড়বে না।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং সম্প্রতি ডিফেন্স সার্ভিসেস স্টাফ কলেজের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে গিয়ে বলেন, ‘যুদ্ধক্ষেত্রের চরিত্র বদলে যাচ্ছে দ্রুত। প্রতিকূল পরিবেশেও আক্রমণ ও আত্মরক্ষার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। প্রথাগত লড়াইয়ের পাশাপাশি মহাকাশ, সাইবার জগতে, এমনকী তথ্যরও লড়াই হবে ভবিষ্যতে। তার জন্য ভারতের সেনাকেও প্রস্তুত থাকতে হবে। তার জন্য দরকার সেনার সবকটিবাহিনীর মধ্যে উপযুক্ত সমন্বয়।’ আধুনিক যুদ্ধে জয়ের জন্য মানুষের উপর থেকে নির্ভরশীলতা কমিয়ে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের উপর জোর দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেন তিনি। বায়ুসেনাও সেই পথেই এগোচ্ছে। ALFA-S system ইলেক্ট্রনিক ডেটা লিঙ্ক ব্যবহার করে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখবে। থাকবে ইলেক্ট্রো অপটিক্যাল সেন্সর। AI পাওয়ার্ড এই অস্ত্র শত্রুদের গতিবিধিও আঁচ করতে পারবে। ফলে টার্গেট মিস হওয়ার সুযোগ প্রায় শূন্য। চিনের কাছ থেকে পাওয়া পাকিস্তানের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূর থেকে তাদের ধেয়ে আসা মিসাইলকে নিশানা করতে পারে। সেই চিনা এইচ কিউ ৯ সারফেস টু এয়ার মিসাইল সিস্টেমকেও বেকুব বানাবে ALFA-S swarm drones।