কলকাতা: অবশেষে নাগালে এল বেঙ্গালুরু ক্যাফে বিস্ফোরণ কাণ্ডে অভিযুক্তরা। বেঙ্গালুরুর রামেশ্বরম ক্যাফেতে আইইডি বিস্ফোরণে জড়িত দুই অভিযুক্তকে অবশেষে গ্রেফতার করল এনআইএ। জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত দুই জন দিঘায় লুকিয়ে ছিল। আজ তাদের গ্রেফতার করে এনআইএ।
মার্চ মাসের ১ তারিখ বেঙ্গালুরুর রামেশ্বরম ক্যাফেতে যে আইইডি বিস্ফোরণ হয়েছিল, তাতে আহত হয়েছিলেন কমপক্ষে ১০ জন। ৩ মার্চ তদন্তভার গ্রহণ করে এনআইএ। তদন্তে নেমে সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছিল, এক যুবক কালো রঙের ব্যাগ নিয়ে এসেছিল। মুখে মাস্ক পরা ছিল। ওই যুবক ইডলি অর্ডার করে। খাবার খেয়ে সে বেরিয়ে যায়। টেবিলের নীচে রেখে যায় ব্যাগটি। মিনিট দশেক পরই ক্যাফেতে বিস্ফোরণ হয়। ঝলসে যান অনেকে। ওই হামলায় মূল অভিযুক্ত ছিল আব্দুল মাথিন ত্বহা ও মুসাভির হুসেন সাজিব। বিস্ফোরণের পর থেকেই সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অভিযুক্তদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছিল। অবশেষে তাঁদের আজ গ্রেফতার করে এনআইএ।
জানা গিয়েছে, কলকাতার উপকণ্ঠেই, দিঘায় লুকিয়ে ছিল দুই অভিযুক্ত। একটি হোটেলে তাঁরা পরিচয় গোপন করে থাকছিল। আজ এনআইএ, পশ্চিমবঙ্গ, তেলঙ্গানা, কর্নাটক ও কেরল পুলিশের যৌথ অভিযান করে অভিযুক্ত দুইজনকে গ্রেফতার করে।
সূত্রের খবর, মুসাভির হুসেন সাজিব নামক যুবককেই সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছিল। সে-ই ব্যাগে করে আইইডি বিস্ফোরক রেখে এসেছিল বেঙ্গালুরুর ওই নামকরা ক্যাফেতে। আব্দুল মাথিনএই বিস্ফোরণকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড। কীভাবে বিস্ফোরক রাখা হবে, কতক্ষণ বাদে বিস্ফোরণ হবে এবং তারপর কীভাবে মুসাভির পালিয়ে আসবে-যাবতীয় পরিকল্পনা করেছিল আব্দুলই।
এনআইএ সূত্রে খবর, অভিযুক্ত দুইজনের বিরুদ্ধেই ২০২০ সালে সন্ত্রাসের মামলা রয়েছে। আইসিসের বেঙ্গালুরু মডেল- আল হিন্দের সঙ্গে যুক্ত আব্দুল মাথিন ত্বহা।
গোয়েন্দারা ইতিমধ্যেই অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। বিভিন্ন রাজ্যের পুলিশরাও এনআইএ-কে তদন্তে সাহায্য করছে। গোয়েন্দারা খতিয়ে দেখছেন যে দক্ষিণ ভারতে বিস্ফোরণের পর সূদূর বাংলায় কেন তারা ঘাঁটি গাড়ল। এত তাড়াতাড়ি বাড়ি ভাড়াই বা পেল কীভাবে। ধৃত দুই জঙ্গির সঙ্গে বাংলার কারোর যোগাযোগ রয়েছে কিনা, বাংলায় জঙ্গি সংগঠনের স্লিপার সেল সক্রিয় রয়েছে কি না, এই বিষয়গুলিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এ বিষয়ে বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এগিয়ে বাংলা মডেল এটা। আগে আমরা শিক্ষক, ইঞ্জিনিয়ার তৈরি করতাম, পরে শ্রমিক সাপ্লাই করতাম, এখন জঙ্গি হামলার মাস্টারমাইন্ড সাপ্লাই করি। এবার বোঝা যায় যে এনআইএ-র উপরে কেন হামলা হয়। মুখ্যমন্ত্রী চান, গোটা দেশে বোমা বিস্ফোরণের মাস্টারমাইন্ড সরবরাহ হোক বাংলা থেৃকে। আমরা লড়াই করে যাব। বাঙালিকেও ভাবতে হবে, তারা ভবিষ্যতে কী চান।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলা এখন জঙ্গিদের নিরাপদ স্বর্গ। বাংলাদেশের সন্ত্রাসকাজে যুক্তরাও বাংলায় এসে লুকিয়ে থাকছে। এখানে তৃণমূল নেতাদের মদতে মিনি পাকিস্তান বানিয়ে রাখা হয়েছে।”
সিপিআইএম সাংসদ বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “খুব ভাল খবর। এজেন্সির জন্য এটা যেমন কৃতিত্বের, তেমনই বাংলার প্রশাসনের জন্য লজ্জার। বাংলার পুলিশ প্রশাসন কাজ করে না। তাদের মৌলিক দায়িত্ব মমতা ও তাঁর পরিবারকে রক্ষা করা। এই জন্য বাংলাকে অপরাধীরা স্বর্গস্থান বলে মনে করে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক সময়ে মাওবাদীদের নিয়ে বামফ্রন্টে বিরুদ্ধে লড়েছিল, সন্ত্রাসবাদীরাও তাই জানে মাওবাদীদের খুব কাছের মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।”