
নয়াদিল্লি: ছেলে শ্বাস নিচ্ছে, তাকাচ্ছে, কিন্তু কোনও সাড়া দিচ্ছে না। টানা ১২ বছর ধরে এই ভাবেই নিজেদের সন্তানকে বিছানায় অসাড় হয়ে পড়ে থাকতে দেখছেন বৃদ্ধ দম্পতি। তাঁরা ছাড়া তাঁদের সন্তানের কেউ নেই। কেউ নেই দেখভাল করার। তাঁদেরও বয়স হয়েছে। সময় হয়তো তাঁদেরও একদিন কেড়ে নেবে। তারপর?
বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের এজলাসে দাঁড়িয়ে বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি কেভি বিশ্বনাথনকে এই কথাই জানালেন অশোক রানা। পুত্র হরিশ রানার ‘লাইফ সাপোর্ট’ খুলে নেওয়ার আর্তি করলেন তিনি। আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৩ সালে পঞ্জাব বিশ্ববিদ্য়ালয়ের একটি বহুতলের ছাদ থেকে পড়ে যায় হরিশ। তারপর বেশ কয়েক বছর কোমায় থাকে সে। পড়ে পরিস্থিতি সাময়িক উন্নতি হলেও দেহ থাকে অসাড়। এই ভাবে কেটে যায় ১২ বছর।
এদিন ডিভিশন বেঞ্চের কাছে সন্তানের মেডিক্যাল রিপোর্ট জমা দেন অশোক রানা। পরিস্থিতি উদ্বেগজনক বলেই বলেন বিচারপতিরা। পাশাপাশি তাঁদের পর্যবেক্ষণ, ‘আমরা এই ভাবে ছেলেটি চিরকাল ধরে রাখতে পারি না।’ পরের মাসেই বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলা হবে, সেই ভিত্তিতে একটি রিপোর্ট তৈরি করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেই জানিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ। এই যুবকের শারীরিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রাথমিক একটি রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছিল। তাতে বলা হয়েছিল, যুবকের স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরে আসার সম্ভবনা খুবই কম। গত ১২ বছর ধরে সে এই ভাবেই অসাড় হয়ে পড়ে রয়েছে। টিউব ব্যবহার করে খাওয়া-দাওয়া চলছে। শরীর জুড়ে বেডসোর হয়ে গিয়েছে।
পাশাপাশি দিল্লি এইমসের তত্ত্বাবধানে একটি সেকেন্ডারি মেডিক্যাল বোর্ড গঠনও করা হয়েছে। এজলাসে উপস্থিত সরকারি প্রতিনিধি অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল ঐশর্য ভাটি আদালতকে জানিয়েছেন, বোর্ড মেডিক্যাল রিপোর্ট জমা দিয়েছে। এরপর বিচারপতিদের সিদ্ধান্তের উপর গোটা বিষয়টি নির্ভর করছে। পাল্টা বিচারপতিদের পর্যবেক্ষণ, ‘পরিস্থিতি এতটাই জটিল যে এবার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতেই হবে।’