কলকাতা: কৃষকদের সঙ্গে বৈঠকেও রাজ্যকে আক্রমণ করতে ছাড়েননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi)। এরপর রাজ্য নেতৃত্বই বা চুপ করে থাকে কীভাবে! বিকেলেই টুইট করে প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনার কড়া জবাব দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। বললেন, “পিএম কিসান যোজনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি অর্ধসত্য ও বিকৃত।”
শুক্রবার সকালে বিভিন্ন রাজ্যের কৃষকদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেইসময়ই তিনি বলেন, গোটা দেশ এই কিসান নিধির ভোক্তা। শুধু পশ্চিমবাংলা ছাড়া। সেখানের সরকার শুধুমাত্র নিজের রাজনৈতিক কারণে ওই সুবিধা চালু করছেন না।” এরই পাল্টা জবাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইট করে লেখেন, “আমাদের কৃষক ভাই-বোনেরা নতুন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করছে। তাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ না দিয়ে প্রধানমন্ত্রী অর্ধসত্য ও বিকৃত তথ্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। বিজেপি শাসিত কেন্দ্র রাজ্যের কোনও সহযোগিতা করছে না এবং শুধুমাত্র রাজনৈতিক লাভের চেষ্টায় প্ররোচনা করছে।”
মুখ্যমন্ত্রী আরও যোগ করে বলেন, “পিএম কিসান যোজনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি অর্ধসত্য ও বিকৃত। রাজ্যের সঙ্গে সহযোগিতা করেনি কেন্দ্র। কিসান সম্মান নিধি নিয়ে দুবার চিঠি লিখেছি। রাজ্যের বকেয়া মেটাচ্ছে না কেন্দ্র। মানুষকে ভুল পথে চালনা করছেন প্রধানমন্ত্রী। ৮৫ হাজার কোটি টাকা বকেয়াই মেটাতে পারেনি কেন্দ্র। আমাদের সরকার মন থেকে কাজ করে। রাজ্য ও রাজ্যবাসীর জন্য আমি সবসময় রয়েছি।”
Our farmer brothers & sisters have been on streets protesting against new farm laws. Instead of addressing them, PM today chose to mislead the people with half-truth & distorted facts. BJP-led Centre is not cooperating & only indulging in propaganda for petty political gains. pic.twitter.com/gtngklCruy
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) December 25, 2020
আরও পড়ুন: ফের অবস্থান বদল কেন্দ্রের, জানাল, পিএম কেয়ার্স ‘সরকারি তহবিল’ তবে ‘আরটিআই’-র আওতায় নয়
আজকের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করে বলেন, “১৫ বছর আগে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের বক্তব্য শুনলেই বোঝা যাবে ওনার মতাদর্শ কীভাবে বাংলাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। কেবলমাত্র রাজনীতি করেই প্রধানমন্ত্রী কৃষক সম্মান নিধির আওতায় রাজ্যের কৃষকদের প্রতি বছরে ছয় হাজার টাকা দেওয়ার পরিকল্পনায় বাধা দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। জনগণ এইধরনের স্বার্থপর রাজনীতি দেখছে। যে রাজ্য নিজের কৃষকদের সুবিধার কথা বলে না, তারা কৃষকদের নামে দিল্লির জনগণকে হয়রান করছে এবং দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করছে।”
প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন, প্রায় ২৩ লাখেরও বেশি রাজ্যের কৃষক এই প্রকল্পের সুবিধা নেওয়ার জন্য অনলাইনে আবেদন করেছেন, কিন্তু রাজ্য সরকার তথ্য যাচাইয়ের কাজ বন্ধ করে রেখেছে। প্রধানমন্ত্রীর অসহযোগিতার অভিযোগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দু পাতার চিঠিতে বলেন, “আমি দুবার চিঠি লিখেছিলাম এবং দুদিন আগেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু তারাই সহযোগিতা করতে অস্বীকার করেছে। যেহেতু আপনি আমার মতাদর্শ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন,তাই জানিয়ে রাখি যে আমার মতাদর্শ দেশের জনকদের দর্শনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আমি সম্পূর্ণ হৃদয় দিয়ে রাজ্যের মানুষের সেবা করেছি। আমার কাছে, রাজ্যের মানুষই আমার পরিবার।”
অন্যদিকে, শুক্রবার বিকেলে সাংবাদিক বৈঠক করেও দলের তরফে প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনার কড়া জবাব দেন তৃণমূল নেতা সৌগত রায় (Sougata Roy)। তিনি বলেন, “মোদীর কথায় চিড়ে ভিজবে না। কিসান নিধি নিয়ে তিনি তিনি এক কথা বারবার বলে মিথ্যাচার করছেন। মূল বিষয় থেকেই সরে যাচ্ছেন তিনি। রাজ্যে কৃষক বন্ধু প্রকল্পের মাধ্যমে ৪৭ লক্ষ কৃষক উপকৃত হয়েছে। রাজ্যে কৃষকদের আয় অন্য রাজ্যের তুলনায় অনেক বেড়েছে। কিষান সম্মান নিধির নামে ৬০০০ টাকা দিয়ে প্রচার চাইছেন, ভোট কিনতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলার সরকার কৃষকদের পক্ষেই।”
প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর দাবি সর্বৈব মিথ্যে ও অন্তঃসার শূন্য। কৃষি পণ্যের ব্যবসা তুলে দিয়েছেন মোদী, অন্য আইনের মাধ্যমে চুক্তি চাষ চালু করতে চান তিনি। টাকা দিচ্ছে রাজ্য আর সুবিধা চাইছে কেন্দ্র। রাজ্যকে এড়িয়ে নিজেরা নাম কিনতে চায়।”
কৃষক আন্দোলনের (Farmers Protest) প্রসঙ্গ টেনে সৌগত রায় বলেন, “কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছি আমরা। এই ৩ টি আইন অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। চালাকি করে কৃষক আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না। এই আন্দোলন চলবেই। দেশের ১১ টি রাজনৈতিক দল কৃষি বিলের বিরুদ্ধে চিঠি দিয়েছে। রাজ্যসভায় ওরা জোর করে বিল পাস করিয়ে দিয়েছে। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রথম সারিতে দাঁড়িয়ে রয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তাই ওনাকে আঘাত করার চেষ্টা হচ্ছে।”
আরও পড়ুন: ব্যারিকেড ভাঙল প্রতিবাদী ট্রাক্টর! পুলিসি বাধার মুখে চাষিদের রুদ্রমূর্তি