Mumbai Terror Attack Survivor: ‘স্টেশনে পা রাখলেই ভয় হয়, এখনও অভিশপ্ত দিনটা চোখে ভাসে’, কাসবের মতো তাহাউরকে যেন বাঁচিয়ে না রাখা হয়, মনে-প্রাণে চান সদাশিব
Tahawwur Rana: ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর এক বন্ধুকে ছাড়তে ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ টার্মিনাসে গিয়েছিলেন সদাশিব। আচমকাই এলোপাথাড়ি গুলি চলতে শুরু করে। চোখের সামনে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন একের পর এক মানুষ। সদাশিবেরও ঘাড়ে গুলি লাগে।

নয়া দিল্লি: সদাশিব কালোকে, মুম্বইয়ের একজন তেলেভাজা বিক্রেতা। আর পাঁচজনের মতো সাধারণ জীবন যাপন করতে চাইলেও মনের কোণে এখনও দগদগে ক্ষত। ঘাড় সোজা করলেই চিনচিন করে ওঠে ব্যথা। এখনও প্রতিদিন ভগবান ও চিকিৎসকদের ধন্যবাদ জানান তাঁকে প্রাণে রক্ষা করার জন্য। সদাশিবের ঘাড় ফুঁড়ে গিয়েছিল গুলি। মুম্বই হামলায় শতাধিক মানুষের মতো প্রাণ যেত তাঁরও। কোনওক্রমে রক্ষা পান। হামলায় দোষী সাব্যস্ত জঙ্গি আজমল কাসবের ফাঁসি হয়েছে। এবার ২৬/১১ মুম্বই হামলার মূল চক্রী তাহাউর রানারও একই শাস্তি চান সদাশিব।
২০১১ সালে দাখিল করা হয়েছিল প্রথম চার্জশিট। ১৪ বছর পর অবশেষে ভারতের আইনের কাঠগড়ায় তোলা গেল তাহাউর রানাকে। ২৬/১১ মুম্বই হামলার মূল চক্রী তাহাউরকে আমেরিকা থেকে প্রত্য়র্পণ করা হয়েছে। এবার ভারতে তাঁর বিচার প্রক্রিয়া হওয়ার পালা। তাহাউরের ভারতে ফেরার খবরে আশার আলো দেখছেন সদাশিব কালোকে ও তার মতো আরও অনেকে, যারা সেদিন কোনওক্রমে বেঁচে গিয়েছিলেন। সরকার থেকে শুরু করে আদালতের কাছে তাদের একটাই দাবি, আজমল কাসবের মতো তাহাউরের বিচার প্রক্রিয়াও যেন দীর্ঘ না হয়। দ্রুত তাঁকে সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হোক।
সদাশিব জানিয়েছেন, মাত্র ১৪ বছর বয়সে কোলাপুর থেকে মুম্বই এসেছিলেন। দিন আনি, দিন খাই অবস্থা ছিল। ২০০৮ সালে ক্রফোর্ড মার্কেটে একটি রেস্তোরাঁয় কাজ করতেন তিনি। কিন্তু রাতারাতি জীবনটা এমন বদলে যাবে, তা কল্পনাও করতে পারেননি।
হামলার দিন অর্থাৎ ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর এক বন্ধুকে ছাড়তে ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ টার্মিনাসে গিয়েছিলেন সদাশিব। আচমকাই এলোপাথাড়ি গুলি চলতে শুরু করে। চোখের সামনে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন একের পর এক মানুষ। সদাশিবেরও ঘাড়ে গুলি লাগে। প্রায় দেড় মাস জেজে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরও সাধারণ জীবনে ফিরতে সময় লেগে যায়।
চিকিৎসকরা বলেছিলেন, সদাশিবের ক্ষত সারতে অনেক সময় লাগবে। তার সম্পূর্ণ বিশ্রামের প্রয়োজন। সেই জন্যই কোলাপুরে নিজের গ্রামে ফিরে যান। প্রায় দুই বছর ছিলেন তিনি, কিন্তু আর্থিক অনটন তাঁকে ফের মুম্বই ফিরতে বাধ্য করে।
গ্রাম থেকে ফিরে আর রেস্তোরাঁর কাজে যোগ দিতে পারেননি। ছোটখাটো কাজ শুরু করেন। এখন মুম্বইয়ের রাস্তায় ডিম আর পাও বিক্রি করেই কোনওক্রমে সংসার চলে। দুই সন্তানের পড়াশোনার খরচও রয়েছে তাঁর কাঁধে।
তাহাউর রানাকে ভারতে প্রত্যর্পণ করানোর খবর শুনে সদাশিব বলেন, “যারা আমাদের সঙ্গে অন্যায় করেছিল, তাদের সকলকে শাস্তি দেওয়া উচিত। কাসবকে ৪ বছর জীবিত রাখা হয়েছিল বিচার প্রক্রিয়ার জন্য। এই রানাকে যেন সেই সুযোগ না দেওয়া হয়। কয়েক মাসেই বিচার প্রক্রিয়া শেষ করে, অবিলম্বে ওকে ফাঁসি দেওয়া হোক।”
সদাশিব জানান, এত বছর কেটে গেলেও, সেদিনের ক্ষত এখনও তাজা রয়েছে। এখনও ছত্রপতি শিবাজি টার্মিনাস থেকে ট্রেন ধরতে গেলে ওই অভিশপ্ত দিনটার কথা মনে পড়ে। এক অজানা আতঙ্ক তাড়া করে।

