AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

In Depth on IndiGo Crisis: রোজ কেন বাতিল হচ্ছে IndiGo-র ফ্লাইট? জানুন সমস্যার বীজ কোথায় লুকিয়ে…

In Depth on IndiGo Crisis: কয়েক হাজার বিমান বাতিল করার পর অবশেষে ইন্ডিগো (IndiGo) ক্ষমা চেয়েছে। বিনামূল্যে ক্যানসেলেশন, রিশিডিউল করে দিচ্ছে, নিচ্ছে না কোনও অতিরিক্ত ফি। রবিবার বিকালের মধ্যে ইন্ডিগোকে যাত্রীদের টিকিটের টাকা রিফান্ড করে দিতে বলে কেন্দ্র। পাশাপাশি গ্রাহকদের সুবিধার জন্য নির্দিষ্ট প্যাসেঞ্জার সাপোর্ট ও রিফান্ড ফেসিলিটেশন সেল তৈরি করতে বলা হয়েছে।

In Depth on IndiGo Crisis: রোজ কেন বাতিল হচ্ছে IndiGo-র ফ্লাইট? জানুন সমস্যার বীজ কোথায় লুকিয়ে...
কেন থমকে গেল ইন্ডিগোর পরিষেবা?Image Credit: TV9 বাংলা
| Updated on: Dec 08, 2025 | 2:07 PM
Share

“একটা ভুল… তাতেই ক্ষতি হয়ে গেল হাজার হাজার , না লাখ লাখ মানুষের। রাতারাতি স্তব্ধ ইন্ডিগোর বিমান পরিষেবা। যাত্রীরা  ফ্লাইট ধরতে ব্যাগ গুছিয়ে, ট্যাক্সি বুক করে এয়ারপোর্টে এসে দেখলেন, ফ্লাইট বাতিল হয়ে গিয়েছে!। হাজার হাজার মানুষ একই সমস্যায় পড়েছেন! কেউ নিজের বৌভাতের অনুষ্ঠানেই পৌছতে পারলেন না, কারোর আবার ফ্লাইট বাতিল হয়ে যাওয়ায়, চাকরি চলে যাওয়ার জো। কারোর মিস হয়ে গেল চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট, যার জন্য মাসের পর মাস অপেক্ষা করেছিলেন। কী এমন হল যে দেশের সবচেয়ে বড় এয়ারলাইন্স ইন্ডিগো (IndiGo) রাতারাতি ধসে গেল?

নতুন নিয়মেই গণ্ডগোল-

যত কাণ্ড নিয়ম আর নিয়ম ভাঙা নিয়েই। দেশে একের পর এক বিমান দুর্ঘটনা, পাইলটদের বিক্ষোভ, এই সবের পর ২০২৫ সালের শুরুতেই ডিজিসিএ চালু করে ফ্লাইট ডিউটি টাইম লিমিটেশন রুলস। নতুন নিয়মে বলা হয়, পাইলটদের সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টা বিশ্রামের সময় দিতে হবে। ৮ ঘণ্টার বেশি ডিউটি করা যাবে না। সপ্তাহে সর্বাধিক ৩৫ ঘণ্টা ডিউটি করতে পারবেন পাইলটরা। মাসে ১২৫ ঘণ্টা এবং বছরে সর্বাধিক ১০০০ ঘণ্টা কাজ করতে পারবেন। যদি কেউ ছুটি নেন, তা আলাদাভাবেই গণ্য হবে। এক রোস্টারে পাইলট মাত্র ২টা নাইট ল্যান্ডিং করতে পারবেন। যা আগে ৬টি ছিল।

পাইলটদের হাতেই জীবন নির্ভর করে হাজার হাজার মানুষের। তাদের এক মুহূর্তের ভুলচুক বিরাট ক্ষতি করে দিতে পারে। সেই কারণেই পাইলটদের পর্যাপ্ত বিশ্রামের ব্যবস্থা করেছিল সরকার। যতক্ষণ বিমানে কাজ করছেন, তারপর বিমানের ক্রু-দেরও বিশ্রামের সময় দিতে হয়। বলা হয়, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অন্তত ১০ ঘণ্টা বিশ্রামের সময় দিতে হবে ক্রুদের। যাত্রীদের নিরাপত্তা বাড়াতে এই নিয়ম জরুরি ছিল, কিন্তু ইন্ডিগো (IndiGo)-র জন্য এটা ছিল টাইম বোমা।

IndiGo প্রস্তুত ছিল না-

দেশে প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৬ জন যাত্রীই ইন্ডিগোর বিমানে যাতায়াত করেন। নিয়ম বদলানোর জন্য ইন্ডিগোর হাতে কিন্তু পর্যাপ্ত সময় ছিল। কারণ প্রথম ধাপে জুলাই মাসে এই নিয়ম কার্যকর হয়। দ্বিতীয় ধাপে নিয়ম কার্যকর হয় নভেম্বর মাসে। ইন্ডিগো পর্যাপ্ত সময় পেয়েছিল তাদের পাইলট সংখ্যা বাড়াতে, শিফট বদলাতে, নতুন রোস্টার করতে।

Indigo 2

বাকি এয়ারলাইন্সে এই নতুন নিয়মে কোনও সমস্যা না হলেও. ইন্ডিগোতেই গোল বাধল কারণ দেশের সবথেকে বড় বেসরকারি উড়ান সংস্থা তারা। দেশে সর্বাধিক ডোমেস্টিক বিমান চলে ইন্ডিগোর। বাকি এয়ারলাইন্সে যেখানে বিমানের সংখ্যা কম থাকে, সেখানেই ইন্ডিগো ওভারনাইট সার্ভিস থাকে ঘনঘন।

নতুন নিয়মে যেখানে পাইলট নিয়োগ করা উচিত ছিল, যেমন এয়ার ইন্ডিয়া আগেই ৫০০ পাইলট নিয়োগ করে, সেখানেই ইন্ডিগো হায়ারিং ফ্রিজ করল, রোস্টার প্ল্যানিং ক্রমাগত পিছিয়ে গেল এবং কর্মী ছাঁটাইও করল।

ভেঙে পড়ল সিস্টেম-

এর ফল? ফ্লাইট উড়ানোর মতো পাইলটই নেই। বিমানবন্দরে ভিড়। প্লেনে যাত্রীরা বসে আছেন, অথচ পাইলট নেই, ক্রু মেম্বার নেই। তারা তো নতুন রস্টারে চলছিল। ফলে ফ্লাইটের সময়ের সঙ্গে তাদের ডিউটির টাইম মেলেনি।এয়ারপোর্টে ভিড়, অতিরিক্ত যাত্রী— সব মিলিয়ে চাপ আরও বাড়ল। ছোট ছোট ডিলে (delay) হচ্ছিল যে বিমানগুলি,সেই সঙ্কটই বড় হয়ে ফ্লাইট ক্যানসেল হয়ে গেল।

একটা বিমান বাতিল বাড়তে বাড়তে দৈনিক ৬০০-৭০০ বিমান বাতিল হয়ে গেল। পাইলট দিল্লিতে, কিন্তু ওই পাইলটের দরকার ছিল কলকাতায়-এতেই ভেঙে পড়ল পুরো সিস্টেম। শেষমেশ ১০০ না… হাজারেরও বেশি ফ্লাইট বাতিল, হাজার হাজার যাত্রী আটকে। বিয়ের দিন, এক্সাম, অফিস—সব মিস করল যাত্রীরা। খাবার নেই, জল নেই । সঙ্গে লাগেজও নেই। বাচ্চা থেকে বয়স্ক-সবাই নাজেহাল।

Indigo 1

PTI

টিকিটের চড়া দাম- 

আর টিকিটের দাম? সে তো আকাশ ছোঁয়া! ইন্ডিগোয় টিকিট কেটে চরম ভোগান্তিতে পড়েই যাত্রীরা অন্য এয়ারলাইন্সের টিকিট কাটতে বাধ্য হন। আর সেখানেই সুযোগ নিতে শুরু করে অন্যান্য এয়ারলাইন্স। সাধারণ দিনের দামের তুলনায় চার গুণ বেশি দাম হাঁকে উড়ান সংস্থাগুলি।

দিল্লি থেকে মুম্বইয়ের নন-স্টপ বিমানের ভাড়া ৬৫ হাজারে পৌঁছেছে। ওয়ান স্টপ বিমানের ভাড়া ৩৮ হাজার থেকে ৪৮-৪৯ হাজার টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। কলকাতা থেকে মুম্বইয়ের ইকোনমি ক্লাসের ভাড়া আজই দেখিয়েছে ৯০ হাজার টাকা। বেঙ্গালুরু থেকে নয়া দিল্লির ভাড়াও চাওয়া হচ্ছে ৮৮ হাজার টাকা। যাত্রীদের কাছ থেকে অত্যাধিক ভাড়ার অভিযোগ পেয়েই অবশেষে পদক্ষেপ করে অসামরিক উড়ান পরিবহন মন্ত্রক।

বাধ্য হয়েই পদক্ষেপ করতে হয় কেন্দ্রকে। বেধে দেওয়া হয় বিমানের ভাড়া।  ৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ভাড়া ৭৫০০ টাকা ধার্য করা হয়। ৫০০ থেকে ১০০০ কিলোমিটারের দূরত্বে ভাড়া ১২ হাজার টাকা। ১০০০ থেকে ১৫০০ কিলোমিটারের দূরত্বের ভাড়া ধার্য করা হয় ১৫ হাজার টাকা এবং ১৫০০ কিলোমিটারের বেশি হলে ১৮ হাজার টাকা বিমানের সর্বাধিক ভাড়া ঠিক করে দেয় কেন্দ্র।

নিয়মে ছাড়-

ইন্ডিগোর অচলাবস্থায় একটু নমনীয় হয় কেন্দ্রের নিয়মও। ডিজিসিএ-র নিয়ম আংশিক প্রত্য়াহার করে। পাইলট ও ফ্লাইটের ক্রু মেম্বারদের রোস্টার তৈরির ক্ষেত্রে এয়ারলাইন্সগুলিকে সাপ্তাহিক ছুটি ও অন্য ছুটির মধ্যে আলাদা বিভাজন থাকল না। অর্থাৎ সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টার বেশি ছুটি আপাতত তারা পাবেন না। এফডিটিএলের আরেকটি নিয়মে পরিবর্তন করা হয়। পাইলটদের সর্বাধিক ১২ ঘণ্টার যে ডিউটি সীমাবদ্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, তা বাড়িয়ে ১৪ ঘণ্টা করা হয়।

মাথা নত করল ইন্ডিগো-

কয়েক হাজার বিমান বাতিল করার পর অবশেষে ইন্ডিগো (IndiGo) ক্ষমা চেয়েছে। বিনামূল্যে ক্যানসেলেশন, রিশিডিউল করে দিচ্ছে, নিচ্ছে না কোনও অতিরিক্ত ফি। রবিবার বিকালের মধ্যে ইন্ডিগোকে যাত্রীদের টিকিটের টাকা রিফান্ড করে দিতে বলে কেন্দ্র। পাশাপাশি গ্রাহকদের সুবিধার জন্য নির্দিষ্ট প্যাসেঞ্জার সাপোর্ট ও রিফান্ড ফেসিলিটেশন সেল তৈরি করতে বলা হয়েছে। ইন্ডিগো জানিয়েছে, তারা এখনও পর্যন্ত ৬১০ কোটি টাকা ফিরিয়ে দিয়েছে যাত্রীদের। এয়ারলাইন্সের তরফেও জানানো হয়েছে, তারা ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিমানের টিকিট ক্যানসেলেশন ও রিশিডিউলের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ছাড় দেবে।  পরিষেবা স্বাভাবিক করতে কী কী পদক্ষেপ করা হচ্ছে, তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। মনে করা হচ্ছে, ইন্ডিগোর বিরুদ্ধে কঠোর কোনও পদক্ষেপ করতে পারে কেন্দ্রীয় সরকার।

Indigo 3

ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল এভিয়েশন (DGCA)-র তরফে এবার শোকজ করা হল ইন্ডিগোর সিইও পিটার এলবার্সকে। ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে কেন বিগত এক সপ্তাহ ধরে বিমান বাতিল এবং দেরিতে চলল। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ইন্ডিগোর সিইও-কে ব্যাখ্য়া দিতে বলা হয়েছে। যদি এই নির্দেশ না মানেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে। ইন্ডিগো জানিয়েছে, তারা পরিষেবা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে কিন্তু সময় লাগবে।

ধীরে ধীরে তারা পাইলট বাড়াবে, রোস্টার ঠিক করবে। বিশেষজ্ঞদের মতে- পুরো নেটওয়ার্ক নর্মাল হতে সময় লাগতে পারে ২০২৬ সালের শুরু পর্যন্ত। নতুন নিয়ম খারাপ ছিল না…কিন্তু IndiGo-র অপ্রস্তুতি এবং খারাপ প্ল্যানিংই  এটাকে জাতীয় বিপর্যয়ে পরিণত করে। এবার কী হয়, তাই-ই দেখার।