
নয়াদিল্লি: পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একাধিক কড়া পদক্ষেপ করেছে ভারত। জঙ্গি হামলার তীব্র নিন্দা করে ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। কোণঠাসা হয়ে পড়েছে পাকিস্তান। এই পরিস্থিতিতে হাস্যকর দাবি পাকিস্তানের। সেদেশের ইন্টার সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশেনস (ISPR)-র ডিজি লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরির দাবি, পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদী হামলায় ভারতের হাত রয়েছে। এই নিয়ে অকাট্য ফরেন্সিক প্রমাণ রয়েছে বলে তাঁর দাবি। কিন্তু, সেই দাবি যে ভুয়ো, তা প্রমাণিত হয়েছে।
ইন্টার সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশেনস (ISPR) হল পাকিস্তান সেনার মিডিয়া ও জনসংযোগ শাখা। ১৯৪৯ সাল থেকে এই শাখা কাজ করছে। ISPR-র ডিজি আহমেদ শরিফ চৌধুরি গত ২৯ এপ্রিল একটি সাংবাদিক বৈঠক করেন। অর্থাৎ পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার এক সপ্তাহ পর। যখন সারা বিশ্ব জঙ্গি হামলার নিন্দা করে ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে। ওই সাংবাদিক বৈঠকে ISPR-র ডিজি দাবি করেন, পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদী হামলায় ভারতের জড়িত থাকার অকাট্য ফরেন্সিক প্রমাণ রয়েছে। প্রমাণগুলি তুলে ধরেন তিনি।
সেই প্রমাণগুলিই বিশেষজ্ঞরা খতিয়ে দেখেন। তাতেই দেখা গিয়েছে, বিকৃত প্রমাণ দেখিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে মদত দেওয়ার অভিযোগ তুলতে চাইছে পাকিস্তান।
বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন?
ডিজিটাল ফরেন্সিকের সাধারণ নিয়ম বলছে, ডেটা সংরক্ষিত রাখার জন্য নন-অ্যাকটিভ ডিভাইস ব্যবহার করা হয়। সেখানে ISPR-র ফরেন্সিক তদন্ত চালানো হয়েছে একটি সক্রিয় ফোনে, যাতে ডুয়াল সিম রয়েছে। এই একটি বিষয়টি তাদের পুরো প্রমাণকে নাকচ করে দেয়।
তারপর রয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ কল রেকর্ডিং। পাকিস্তানের দাবি, গত ২৫ এপ্রিল মজিদ নামে এক জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে তারা। তার ফোন থেকে হোয়াটসঅ্যাপ কল রেকর্ডিং উদ্ধার হয়েছে। হোয়াটসঅ্যাপ কল রেকর্ডিংয়ের জন্য বিশেষ অ্যাপ ইনস্টল করতে হয়। ওই জঙ্গির পক্ষে তা জানা অসম্ভব। আর কেন সে ওই কল রেকর্ড করবে? তবে কি ISPR-র জন্য সে ওই কল রেকর্ড করে রেখেছিল। একজন দেশপ্রেমী পাকিস্তানি জঙ্গি!
যদি ওই জঙ্গি ওই বিশেষ অ্যাপ ইনস্টল না করে থাকে, তবে ISPR কিংবা ISI ওই জঙ্গির ফোনে ম্যালওয়্যার প্রবেশ করিয়েছিল। তাহলে ISI-র সম্ভাব্য সব জঙ্গি হামলা সম্পর্কে তথ্য আগে থেকে পেয়ে যাওয়া দরকার। তার মানে কি জেনেও হামলা করতে দিয়েছে তারা?
ওই জঙ্গির চ্যাটের স্ক্রিনশট সামনে আনা হয়েছে। যদি সেই চ্যাটের সময়ের দিকে নজর দেওয়া যায়, দেখা যাবে মেসেজ পাঠানোর পরই স্ক্রিনশট নেওয়া হয়েছে। ISPR জানিয়েছে, মজিদকে গত ২৫ এপ্রিল গ্রেফতার করা হয়েছে। তাহলে অতীতে ফিরে গিয়ে কীভাবে মেসেজের স্ক্রিনশট নিল তারা?
DG ISPR Lt Gen Chaudhary did a presser on April 29, where he provided ‘eerefutable forensic evidences’ of Indian involvement in terr0r attacks in Pakistan, evidences which could be examined by any credible independent agency. So we examined:
A thread (1/n) pic.twitter.com/fVXWEaf1iv
— ISPR Monitor (@ISPRMonitor) May 3, 2025
ISPR-র ডিজি জানিয়েছেন, ওই জঙ্গির বাড়ি থেকে একটি ভারতীয় ড্রোন পাওয়া গিয়েছে। গুগজ ইমেজ সার্চে গিয়ে দেখলে দেখা যাবে, ওই ড্রোনটি চিনের ডিজেআই ড্রোন। তার মানে কি, পাকিস্তানে চিনের মদতে হামলা হয়েছে?
ওই সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত সাংবাদিকরাও ISPR-র ডিজির বক্তব্যকে মেনে নিতে পারেননি। তা তাঁদের অভিব্যক্তিতেই স্পষ্ট। মজিদ পাকিস্তানের নাগরিক। তাকে ভারতীয় জঙ্গি বলে চালানোর চেষ্টা হাস্যকর। বিশ্বমঞ্চে ক্রমশ কোণঠাসা পাকিস্তানের মুখোশ ফের খুলে গেল।