Fog Pass Devices: ১৯,৭৪২ ট্রেনে ‘ফগ পাস ডিভাইস, তাও কেন এত লেট?
Fog Pass Devices: কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় পথ দেখা না গেলেও, এই যন্ত্র ব্যবহার করে ট্রেন চলতে পারে। কোথায় সিগন্যাল, কোথায় লেভেল ক্রসিং গেট ইত্যাদি চালককে জানিয়ে দেয়। স্ক্রিনেও এই তথ্য থাকে, সেই সঙ্গে ভয়েস নির্দেশিকাও দেয়। ৫০০ মিটার আগে থেকে কোনও ল্যান্ডমার্ক সম্পর্কে তথ্য দেয় এই যন্ত্র। তা সত্ত্বেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা লেট চলছে ট্রেন।
কলকাতা: মাঝ রাত থেকে ভোর পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় চাদরে ঢেকে যাচ্ছে গোটা উত্তর ভারত। দিন কয়েক আগে ভাইরাল হয়েছে একটি ভিডিয়ো। কুয়াশার জেরে বিমান চলাচলে দেরির জেরে, বিমানের পাইলটকে প্রহার করছেন এক যাত্রী। তবে, শুধু বিমানই নয়, কুয়াশার জেরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দেরি হচ্ছে রেলপথেও। অথচ, জানুয়ারি মাসেই কোটি কোটি টাকা খরচ করে দেশের ১৯ হাজারের বেশি ট্রেনে ফগ পাস মেশিন বসিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। তাতেও ট্রেন লেট করা থেকে অব্যাহতি পাননি যাত্রীরা। কোনও কোনও ট্রেন ১-২ ঘণ্টা। কোনও কোনও ট্রেন আরও বেশি সময় লেট করছে। নাকাল হতে হচ্ছে যাত্রীদের।
কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় ট্রেন চলাচল মসৃণ রাখতে ভারতীয় রেলের ১৪ ডিভিশনে, ১৯,৭৪২টি ট্রেনে ফগ পাস ডিভাইস বসানো হয়েছে। এটি একটি জিপিএস ভিত্তিক নেভিগেশন ডিভাইস। ঘন কুয়াশার মধ্যে সময় যখন চোখে কিছু দেখা যায় না, তখন এই যন্ত্র রিয়েল টাইমে যে এলাকা দিয়ে ট্রেনটি যাচ্ছে, সেই এলাকা সম্পর্কে তথ্য দেয়। ফলে, কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় পথ দেখা না গেলেও, এই যন্ত্র ব্যবহার করে ট্রেন চলতে পারে। কোথায় সিগন্যাল, কোথায় লেভেল ক্রসিং গেট ইত্যাদি চালককে জানিয়ে দেয়। স্ক্রিনেও এই তথ্য থাকে, সেই সঙ্গে ভয়েস নির্দেশিকাও দেয়। ৫০০ মিটার আগে থেকে কোনও ল্যান্ডমার্ক সম্পর্কে তথ্য দেয় এই যন্ত্র।
উত্তর ভারতে প্রতি শীতকালেই ঘন কুয়াশার জন্য ট্রেন লেট করে থাকে। এবার, ভারতীয় রেল এই জিপিএস ভিত্তিক যন্ত্র লাগানোয়, সেই সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু, সেই গুড়ে বালি। ট্রেন লেট চলছেই। রাজধানী দিল্লিতে আজও ১৬টি ট্রেন লেট করেছে। সবথেকে বেশি দেরি করেছে পুরি-নিজামুদ্দিন পুরুষোত্তম এক্সপ্রেস। নির্ধারিত সময়ের ৬ ঘণ্টা দেরিতে ঢুকেছে ট্রেনটি। ৫.৩০ ঘণ্টা দেরি করেছে আজমগড়-দিল্লি কৈফিয়ত এক্সপ্রেস। ৪.৩০ ঘণ্টা দেরি করেছে ভুবনেশ্বর-নয়া দিল্লি দুরন্ত এক্সপ্রেস।
উত্তর ভারতের মধ্য দিয়ে আসা ট্রেনগুলি দেরিতে ঢুকছে হাওড়া স্টেশনেও। রাজধানী এক্সপ্রেস, কালকা মেল, হিমগিরি এক্সপ্রেস, যোধপুর এক্সপ্রেস, চম্বল এক্সপ্রেস, দুন এক্সপ্রেস, বিভূতি এক্সপ্রেস, পূর্বা এক্সপ্রেস, দুরন্ত এক্সপ্রেস, যোধপুর এক্সপ্রেস, বারমের এক্সপ্রেস, গরবা গান্ধীনগর এক্সপ্রেসের মতো বহু ট্রেন লেট করছে। নয়া দিল্লি থেকে আসা রাজধানী এক্সপ্রেস রোজই প্রায় ১০-১২ ঘণ্টা করে লেটে ঢুকছে। ১৫ জানুয়ারি ২৪ ঘণ্টা দেরিতে হাওড়ায় ঢুকেছিল পূর্বা এক্সপ্রেস।
প্রশ্ন উঠছে, তাহলে ফগ পাস ডিভাইস বসিয়ে লাভ কী হল? শুধু তো ফগ পাস ডিভাইস নয়, কয়েক বছর আগেই দূর পাল্লার ট্রেনগুলিতে ইনফ্রারেড ক্যামেরাও বসানো হয়েছিল, যা লোকো পাইলটদের প্রায় ৫ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত রেলের ট্র্যাকে কিছু আছে কিনা, তা দেখতে সাহায্য করবে বলে জানিয়েছিল রেল। তারপরও কেন লেট, সেই বিষয়ে রেলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। তবে, উত্তর রেলওয়ের এক সিনিয়র আধিকারিক বলেছেন, ফগ পাস ডিভাইস ট্রেনের চলাচলে উন্নতি ঘটিয়েছে ঠিকই, তবে, এটা ঘন কুয়াশা পরিস্থিতি মোকাবিলা করার চূড়ান্ত সমাধান নয়। এই ডিভাইস লোকো ড্রাইভারকে কোনও অতিরিক্ত দৃষ্টি দেয় না। কাজেই, যাত্রী নিরাপত্তার স্বার্থে এই কুয়াশার মধ্যে এর থেকে বেশি দ্রুত ট্রেন চালানো সম্ভব নয়।